মোস্তফা ওয়াদুদ: সম্প্রতি দেশের ৪০ হাজার কওমি মাদরাসাসহ সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধনের আওতায় আনতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সরকারি এ উদ্যোগের কড়া সমালোচনা করেছে দেশের কয়েকটি ইসলামী দল। তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, কওমি মাদরাসার উপর সরকারি হস্তক্ষেপ কওমি স্বীকৃতি আইনের সাথে সাংঘর্ষিক। সরকারের এ উদ্যোগ মেনে নেওয়া হবে না।
আওয়ার ইসলামকে পাঠানো দলগুলো পৃথক পৃথক বিবৃতিতে এসব কথা তুলে ধরেন। সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে ইসলামী দলগুলোর নেতারা বলেন, কওমি মাদরাসার স্বকীয়তার ওপর হাত দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। অন্যথায় মাদ্রাসাগুলো নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করলে তা সরকারের জন্য বুমেরাং হবে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ: কওমি মাদ্রাসার স্বকীয়তার ওপর হাত দেওয়া থেকে বিরত থাকতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম।
এক বিবৃতিতে চরমোনাই পীর বলেন, কওমি মাদ্রাসাগুলো সরকারি অনুদান ব্যতিরেকে জনগণের সাহায্য-সহযোগিতায় চলে আসছে। কাজেই সরকারি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করলে তা সরকারের জন্য বুমেরাং হবে।
তিনি আরও বলেন, দেশের শীর্ষ ওলামায়ে কেরাম দারুল উলুম দেওবন্দের নীতিমালা মেনে কেবলমাত্র সনদের স্বীকৃতির জন্য আন্দোলন করেছিল। সরকারও সেই শর্ত মেনেই দাওরায়ে হাদীসকে মাস্টার্স সমমান মর্যাদা দিয়েছে। এখন কওমি মাদ্রাসার স্বকীয়তা বিলীন করে সরকারের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হলে তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ (একাংশ): কওমি মাদ্রাসা আইন ২০১৮ ধারার পরিপন্থী ও কওমি মাদ্রাসার স্বকীয়তা বিরোধী শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ।
গত বুধবার (৩০ জুন) গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শায়খুল হাদিস মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরী, নির্বাহী সভাপতি মাওলানা আব্দুর রহিম ইসলামাবাদী, মহাসচিব মাওলানা ড. গোলম মহিউদ্দিন ইকরাম, সিনিয়র সহ-সভাপতি শায়খুল হাদিস মুফতি শেখ মুজিবুর রহমান, সহ-সভাপতি মাওলানা নুরুল হক বট্টগ্রাম, সহ-সভাপতি মাওলানা শহিদুল ইসলাম আনসারী, মুফতি গোলামুর রহমান, মাওলানা সৈয়দ মাসউদ আহমদ, অধ্যাপক মাওলানা তৈয়বুর রহমান নিজামী, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আব্দুল মালিক চৌধুরী, মাওলানা আব্দুল হক কাওছারী, মাওলানা রশিদ বিন ওয়াক্কাস, মুফতি রেজাউল করিম, মাওলানা জয়নুল আবেদিন, মুফতি রেদওয়ানুল বারী সিরাজী, মাওলানা আতাউর রহমান খান, মাওলানা আবু বকর সরকার, মুফতি আবু সাঈদ ও হাফেজ মাওলানা খাইরুল ইসলাম প্রমুখ এ দাবি জানান।
তারা বলেন, কওমি মাদ্রাসা পরিচালিত হচ্ছে দারুল উলুম দেওবন্দের উসুলে হাশতেগানার (অষ্ট নীতিমালা) আলোকে। কওমি স্বীকৃতির ঐতিহাসিক ঘোষণাপত্রে ও কওমি স্বীকৃতি আইন ২০১৮ তে স্পষ্টভাবে এই বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। তাই দেওবন্দের উসুলে হাশতেগানা ও কওমি স্বীকৃতি আইনের সাথে সাংঘর্ষিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন এই দেশের কওমি আলেম- উলামা কখনো মেনে নিবে না।
নেতৃবৃন্দ কওমি মাদ্রাসার আইন ২০১৮ ধারার পরিপন্থী শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত প্রজ্ঞাপন অবিলম্বে প্রত্যাহারের জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান।
বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি: বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির নির্বাহী সভাপতি ও জাতীয় সংহতি মঞ্চের প্রধান সমন্বয়কারী মাওলানা একে এম আশরাফুল হক এক বিবৃতিতে বলেন, সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত একটি নতুন প্রজ্ঞাপনে ঐতিহ্যবাহী কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন ও নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা পরিলক্ষিত হচ্ছে।
যাতে দেশের সকল আলেম উলামা তথা গোটা কওমি অঙ্গন আজ শঙ্কিত ও চিন্তিত। বিষয়টি নিয়ে কওমি মাদ্রাসার আলেমদের মধ্যেই চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত প্রজ্ঞাপন বাস্তবায়িত হলে কওমি মাদরাসার স্বকীয়তা বিনষ্ট হবে। এতে সারাদেশের কওমি অঙ্গনে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনটি কওমি সনদ স্বীকৃতির ঐতিহাসিক ঘোষণাপত্র বা কওমি সনদ স্বীকৃতি আইন ২০১৮ এর অনেক ধারার সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বিরোধী। যা সরকারের আইন ও নীতিমালার সুস্পষ্ট স্ববিরোধী অবস্থান।
এমডব্লিউ/