আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মানবাধিকারবিষয়ক ইউরোপীয় আদালত ‘দ্যা ইউরোপিয়ান কোর্ট অব হুম্যান রাইটস’ (ইসিএইচআর) ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাতের মৃত্যুর পুনঃতদন্তের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। ফিলিস্তিনের এ প্রবাদপ্রতীম নেতার মৃত্যুর পুনঃতদন্তের জন্য মামলা করেছিলেন তার বিধবা স্ত্রী ও তার মেয়ে।
আরাফাতের স্ত্রী সুহা আল খোদা আরাফাত ও তার মেয়ে জাহওয়া আল খোদা আরাফাত ফ্রান্সের নাগরিক। তারা স্ট্রাসবুর্গভিত্তিক এ ইউরোপীয় মানবাধিকার বিষয়ক আদালতে তখনই মামলা করেন, যখন ফ্রান্সে তাদের মামলা খারিজ করে দেয়া হয়। তাদের দাবি, ইয়াসির আরাফাতকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
ইয়াসির আরাফাতের পরিবারের দাবি তাদেরকে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। বিশেষ করে তারা আবেদন করেছিলেন যেন আরাফাতের মৃত্যুর বিষয়ে আরেকটি পুনঃতদন্ত করা হয়। এ পুনঃতদন্তটি বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে করার আবেদন করেছিলেন তারা।
বৃহস্পতিবার পুনঃতদন্তের বিষয়ে দেয়া এক রুলিংয়ে ইউরোপীয় মানবাধিকার বিষয়ক আদালত বলেছে, এ মামলায় ন্যায়বিচার পওয়ার ক্ষেত্রে কোনো নিয়মের ব্যাতয় হয়নি। ইয়াসির আরাফাতের পরিবার একটি ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এ মামলা করেছেন।
এদিকে এ মামলাটি পর্যালোচনা করে তিন বিচারক বলেছেন, বিচারিক প্রক্রিয়ার সকল ক্ষেত্রে এ মামলার আবেদনকারীদের উকিলরা সঠিকপন্থা অবলম্বন করেছেন। তারা তাদের আইনি অধিকার কার্যকরভাবেই প্রয়োগ করেছেন। তবে তারা বিদ্যমান প্রমাণাদির ওপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট কোনো রায় দেননি। কিন্তু, তারা এটা বলেছেন যে বিভিন্ন প্রমাণ হাতে থাকায় এ মামলা ভিত্তিহীন নয়। প্রচলিত আইনে এ মামলার বিচার সম্ভব।
২০০৪ সালের নভেম্বরে ফ্রান্সের একটি হাসপাতালে ইয়াসির আরাফাত ইন্তেকাল করেন। পশ্চিম তীরের রামাল্লায় তার সংগঠনের সদর দফতরে থাকাবস্থায় তিনি তীব্র পেটে ব্যথায় ভুগছিলেন। এ কারণে তাকে ফ্রান্সের ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
২০১১ সালে সুহা আরাফাত (আরাফাতের স্ত্রী) তার স্বামী ইয়াসির আরাফাতের কিছু ব্যক্তিগত জিনিসপত্র ও লাশের কিছু অংশ (ময়নাদতন্তের সময় এগুলো পাওয়া গেছে) এক প্রতিবেদকের মাধ্যমে সংবাদ মাধ্যম আল-জাজিরার কাছে হস্তান্তর করেন। আল-জাজিরা আরাফাতের ওই ব্যক্তিগত জিনিসপত্রগুলো ও শরীরের কিছু অংশ সুইজারল্যান্ডের লুসানে প্রেরণ করে, যাতে করে ওই শহরের দ্যা ইন্সটিটিউট অব অ্যাপ্লাইড রেডিও ফিসিক্স প্রতিষ্ঠানে এগুলোর তেজস্ক্রিয়তা পরীক্ষা করা যায়।
সুইজারল্যান্ডের ওই প্রতিষ্ঠান তাদের ১০৮ পেজের ওই প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আরাফাতের পাজর ও মেরুদণ্ডে অতিরিক্ত মাত্রায় বিষাক্ত তেজস্ক্রিয় পদার্থ পোলোনিয়াম-২১০ পাওয়া গেছে।
রাশিয়া ও ফ্রান্স এ বিষয়ে তদন্তে করে এমন কিছু পায়নি বলে জানিয়েছে। যদিও ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা বারবার ইসরাইলকে দোষারোপ করছে তাদের নেতা ইয়াসির আরাফাতকে হত্যার বিষয়ে। যদিও ইসরাইল জানিয়েছে, তারা অরাফাতের ওপর বিষাক্ত তেজস্ক্রিয় পদার্থ পোলোনিয়াম-২১০ প্রয়োগ করেনি। এছাড়া তারা ইয়াসির আরাফাতকে হত্যার বিষয়টিও অস্বীকার করেছে।
বিষাক্ত তেজস্ক্রিয় পদার্থ পোলোনিয়াম-২১০ প্রয়োগ করে ২০০৬ সালে আলেক্সজান্ডার লিটভিনেনকোকে হত্যা করা হয়। তিনি রাশিয়ার পলাতক গোয়েন্দা ছিলেন। তাকে লন্ডনে থাকাবস্থায় কড়া মাত্রায় এ বিষাক্ত তেজস্ক্রিয় পদার্থ প্রয়োগ করা হয়।
দু’রাশিয়ান গোয়েন্দাকে আলেক্সজান্ডার লিটভিনেনকো হত্যায় দোষী বলে সন্দেহ করে ব্রিটিশ পুলিশ। কিন্তু, রাশিয়া এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
সূত্র: মিডলইস্ট আই
এনটি