শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা হত্যার বিচার শুরু

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: সেনাবাহিনীর (অব.) মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় টেকনাফ থানার সাবেক ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশসহ অভিযুক্ত ১৫ আসামির বিরুদ্ধে চার্জগঠন করেছেন আদালত।

রোববার কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাঈল আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়ে চার্জগঠনের আদেশ দেন। একই সঙ্গে প্রদীপ, এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত ও কনস্টেবল সাগর দেবসহ ১০ আসামির করা জামিন আবেদন বাতিল করে দেন। কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে প্রিজন ভ্যানে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আসামিদের আদালতে আনা হয়। এর মধ্য দিয় আলোচিত এ মামলার বিচার শুরু হলো।

আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম জানান, আগামী ২৬, ২৭ ও ২৮ জুলাই বাদী পক্ষের ১০ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করা হয়েছে। একই সঙ্গে ওসি প্রদীপসহ বিভিন্ন সময় ১০ আসামির করা জামিন আবেদন শুনানির পর তা নামঞ্জুর করেছেন আদালত।

বাদী পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, প্রমাণ করতে পেরেছি ওইদিন চেকপোস্টে পরিদর্শক লিয়াকত ও ওসি প্রদীপসহ আসামিরা সিনহাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। তাই জামিন চাওয়া হলেও আসামিদের জামিন নামঞ্জুর করে সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেছেন আদালত।

আদালত চত্বরে আসামি পক্ষের আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আদালতকে বলেছি এজাহার এবং চার্জশিটে গরমিল রয়েছে। বিচারক বিষয়টা আমলে নেননি। তাই জামিন নাকচ করেছেন।

বিচার কাজ শুরু হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন সিনহার বোন ও মামলার বাদী শারমিন ফেরদৌস। তিনি বলেন, ‘বিচার বিভাগের ওপর আমি এবং আমার পরিবারের সর্বোচ্চ আস্থা আছে। ইনশাআল্লাহ আমরা সিনহা হত্যার ন্যায়বিচার পাব।

মেজর সিনহাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, আশা করছি দ্রুত বিচার কাজ শেষ হবে এবং আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত হবে।’ প্রদীপ ও এসআই নন্দদুলালের জামিন চেয়ে ১০ জুন আদালতে আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু ওইদিন আদালতে নথি উপস্থাপন না হওয়ায় শুনানি হয়নি। ১৩ জুন এ নিয়ে আবার আদালতে আবেদন করা হয়। আবেদনটি আমলে নিয়ে আদালত শুনানির জন্য ২৭ জুন দিন ঠিক করেন।

এ মামলায় অভিযুক্ত কনস্টেবল সাগর দেব দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর ২৪ জুন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন প্রার্থনা করেন। আদালত তার জামিন আবেদনের বিষয়ে শুনানির জন্য ২৭ জুন দিন ধার্য করেছিলেন। মামলায় চার্জগঠন শুনানিতে আসামি পক্ষে ছিলেন কক্সবাজার বারের অ্যাডভোকেট দিলীপ দাশ, মহিউদ্দিন খান, মোবারক হোসেন। আর চট্টগ্রাম থেকে আসেন অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, চন্দন দাশসহ ১০-১২ জনের একটি আইনজীবী প্যানেল। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম ও বাদীর পক্ষে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মোস্তফা, সাবেক পিপি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর শুনানিতে অংশ নেন।

গত বছর ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাত সাড়ে ৯টার দিকে টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান। এ ঘটনায় ৫ আগস্ট সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ (পরিদর্শক) লিয়াকত আলীকে প্রধান আসামি করে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আদালত র‌্যাবকে মামলাটি তদন্ত করার আদেশ দেন। ৬ আগস্ট প্রধান আসামি লিয়াকত আলী ও প্রদীপ কুমার দাশসহ ৭ পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।

পরে সিনহা হত্যায় জড়িত থাকার সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় পুলিশের করা মামলার ৩ সাক্ষী এবং শামলাপুর চেকপোস্টের দায়িত্বরত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এছাড়া একই অভিযোগে পরে গ্রেফতার করা হয় টেকনাফ থানা পুলিশের সাবেক সদস্য কনস্টেবল রুবেল শর্মাকে। মামলায় গ্রেফতার ১৪ আসামিকে র‌্যাবের তদন্তকারী কর্মকর্তা বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তাদের মধ্যে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা ছাড়া ১২ আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। মামলায় গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর প্রদীপ কুমার দাসসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা।

এনটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ