আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতন বন্ধে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত ব্যবস্থা নিতে জাতিসংঘ ও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ ১০টি মানবাধিকার সংগঠন।
মানবাধিকার বিষয়ক ১০টি আন্তর্জাতিক সংস্থার একটি মোর্চা শনিবার এক যৌথ বিবৃতিতে এই আহ্বান জানায়।
বাকি নয়টি সংগঠন হলো- এশিয়ান ফেডারেশন অ্যাগেইনস্ট ইনভলান্টারি ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স, এশিয়ান ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন, এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশন, ভিকাস: ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্স ফর সিটিজেন পার্টিসিপেশন, ইলেওস জাস্টিস-মোনাস ইউনিভার্সিটি, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস, ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন অ্যাগেইনস্ট টর্চার, রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ, বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর বিরুদ্ধে ওঠা হেফাজতে নির্যাতন ও নিষ্ঠুর আচরণের ব্যাপকভিত্তিক অভিযোগের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার।
যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলো গ্রেপ্তারকৃত ও সন্দেহভাজনদের নির্যাতন ও নিষ্ঠুর আচরণ করছে।
বিবৃতিতে বন্দীদের ওপর যেসব নির্দয় আচরণের উল্লেখ আছে, তার মধ্যে রয়েছে- লোহার রড, বেল্ট এবং লাঠি দিয়ে পেটানো; কানে এবং যৌন অঙ্গে বৈদ্যুতিক শক দেওয়া, মুখ আটকে পানি ঢালা (ওয়াটার বোর্ডিং), ছাদ থেকে ঝুলিয়ে পেটানো, পায়ে গুলি করা, কানের কাছে জোরে শব্দ করা বা গান বাজানো, পায়ের তালুর নিচে সুচালো বস্তু রাখা, মৃত্যু কার্যকরের নাটক সাজানো এবং নগ্ন করে রাখার মতো ঘটনা।
শত শত মানুষ গুম বা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ওই বিবৃতিতে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেছেন, ‘বাংলাদেশের মানবাধিকার কর্মী, আন্তর্জাতিক গ্রুপ, জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা আটকাবস্থায় নির্যাতনের ব্যাপারে যেসব উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন, তার জবাবে শুধু অস্বীকার আর মিথ্যা বক্তব্য পাওয়া গেছে।’
তিনি বলেন, ‘গত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশের নেতারা সংস্কারের কথা বলে আসছেন, কিন্তু প্রতিটি সরকারই এই কর্তৃত্ববাদিতা আরও বাড়িয়েছে, অপব্যবহারের সংস্কৃতি তৈরি করেছে এবং নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে দায়মুক্তি দিয়ে আসছে।’
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলের উচিত বাংলাদেশে গুম, নির্যাতন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধে একটি রেজ্যুলেশন বা প্রস্তাব গ্রহণ করা।
বিবৃতিতে বলা হয়, কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন জানিয়ে মামলা করেছেন। সেই সঙ্গে আটক থাকার সময় তিনি কী ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তাও বর্ণনা করেছেন। আরেকজন লেখক মুশতাক আহমেদকে কীভাবে নির্যাতন করা হয়েছে, মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কাছে সেই বর্ণনাও দিয়েছেন কিশোর।
এই বিবৃতিকে ভিত্তিহীন এবং অসত্য আখ্যায়িত করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন বলেছেন, ‘যেসব অভিযোগের কথা তারা বলছেন, এখানে ওই ধরনের কিছু করা হয় না।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে কাউকে আটক করা হলে অনেক সময় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সেখানে আইনের নিয়ম অনুযায়ী, তার অধিকার, মানবাধিকারের সবকিছু অনুসরণ করেই তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশে নির্যাতন যাতে না হয়, সেজন্য একটি আইনও রয়েছে। কেউ নির্যাতন করলে সেই আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে। ফলে বাংলাদেশে এই ধরনের নির্যাতনের কোনো সুযোগ নেই। সূত্র: বিবিসি
-এটি