আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: দেশে করোনা সংক্রমণ আবারও বেড়ে গেছে। শুক্রবার সারা দেশে ১০৮ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। জেলাভিত্তিক লকডাউন দিয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। সীমান্তবর্তী এলাকায় করোনা রোগী শনাক্ত ও মৃত্যুর হার ঊর্ধ্বমুখী। শুক্রবার খুলনা বিভাগে ২৩ জন ও রাজশাহী বিভাগে ১৪ জন মারা গেছেন।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, দেশের ৪০টি জেলা উচ্চ সংক্রমণ ঝুঁকিতে রয়েছে। অন্য দিকে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি বলেছে, ৫০টির বেশি জেলায় অতি উচ্চ সংক্রমণ লক্ষ করা গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপ্রবণ এলাকা হচ্ছে খুলনা ও রাজশাহী বিভাগ। ঝুঁকিপ্রধান জেলার মধ্যে রয়েছে ঢাকাও। গত ক’দিনের মৃত্যু ও শনাক্তের হার সেটিই ইঙ্গিত করছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বৈশ্বিকভাবে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যু নিয়মিতভাবে কমলেও বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশে সংক্রমণ এবং মৃত্যু দুই-ই বাড়ছে। বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ সৃষ্টিকারী করোনাভাইরাসের চারটির মধ্যে তিনটি ধরনই (ভ্যারিয়েন্ট) বাংলাদেশে সক্রিয়। এই তিন ধরনের উৎপত্তি যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারতে।
সর্বশেষ সাপ্তাহিক রোগতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এক সপ্তাহে (১৪-২০ জুন) বৈশ্বিকভাবে সংক্রমণ কমেছে ৬ শতাংশ। একই সময়ে মৃত্যু কমেছে ১২ শতাংশ। এর বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশে। আগের সপ্তাহের তুলনায় বাংলাদেশে নতুন শনাক্ত রোগী বেড়েছে ৫৫ শতাংশ এবং মৃত্যু বেড়েছে ৫৪ শতাংশ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনার রূপান্তরিত চারটি ধরনকে উদ্বেগের কারণ বলে বর্ণনা করেছে। এগুলো হচ্ছে আলফা (উৎপত্তি যুক্তরাজ্যে), বিটা (দক্ষিণ আফ্রিকা), গামা (ব্রাজিল) ও ডেলটা (ভারত)। এর মধ্যে আলফা, বিটা ও ডেলটা ধরন বাংলাদেশে ছড়াচ্ছে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের রোগতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে উল্লেখ করেছে। তিনটি ধরনেরই সংক্রমণ করার ক্ষমতা বেশি।
এদিকে করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট দ্বিতীয় দফায় রূপ পরিবর্তন করেছে। ইউরোপে প্রথমবার শনাক্ত হওয়া এই ভ্যারিয়েন্টকে ‘ডেল্টা প্লাস’ হিসাবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।
করোনাভাইরাসের এই ধরনটি একজন থেকে ১৩ জনে ছড়াতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পেয়েছেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা।
এত সতর্কবাণীর পরও দেশের মানুষের মধ্যে সচেতনতা দেখা যাচ্ছে না। বিক্ষিপ্তভাবে লকডাউন চলছে। কেউ মানছেন, কেউ মানছেন না।
কমে গিয়ে আবারও কেন সংক্রমণ বেড়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বেশ কয়েকটি কারণের কথা বলেন। তিনি করণীয় সম্পর্কেও নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন-
এক. ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট যেটি ডেল্টা ভাইরাস নামে পরিচিত সেটি অধিক সংক্রমণ ঘটাচ্ছে। ডেল্টা ছড়িয়ে পড়ার হার অন্য যেকোনো ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে বেশি। সম্প্রতি বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে তা ছড়িয়ে পড়ায় করোনা সংক্রমণ আবারও বেড়ে গেছে।
দুই. করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টা প্লাসও সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। বিভিন্ন স্থানে এটি ছড়িয়ে পড়েছে। এ কারণে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে।
চার. করোনা বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায়। আগে রাজধানী ও ঢাকার আশপাশে সংক্রমণ বেশি থাকলেও বর্তমানে এটি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
পাঁচ. সীমান্ত বন্ধ থাকলেও চোরাই পথে অনেকে প্রতিবেশী দেশ থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এরা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে প্রবেশ করছে। এরা যেখানে যাচ্ছে ভাইরাস বহন করে নিয়ে যাচ্ছে।
ছয়. কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে বাঁচতে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এগুলো নামেই। মানুষ কোনোভাবেই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। অনেকেই মাস্ক পরছেন না। শারীরিক ও সামাজিক দূরত্বের কোনো বালাই নেই। মার্কেটে যাওয়া, উৎসবের সময় বাড়ি যাওয়া আবার ঢাকায় ফেরা এর কোনোটাই এখনো বন্ধ হয়নি।
সাত. লকডাউন দেওয়ার পরও যোগাযোগ বন্ধ করা যায়নি। সাতটি জেলায় চলছে সর্বাত্মক লকডাউন। ঢাকার চারপাশ থেকে রাজধানীমুখী গণপরিবহণ বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু লোকজনের চলাফেরা কি বন্ধ আছে? ঢাকার বাইরে মানুষ গাড়ি বদল করে আরেক গাড়িতে উঠছে। আবার একই গাড়িতে গাদাগাদি করে অনেকে উঠছে। এতে করে করোনাও ছড়াচ্ছে, গাড়ি বদল করছে। সুতরাং করোনার বিস্তার ঘটছে।
আট. কোভিডের টিকা নিয়েও সংকট আছে। এখনো পর্যন্ত দেশের সব পর্যায়ের নাগরিকদের টিকার আওতায় আনা যায়নি। অনেকে প্রথম দফা টিকা নিয়ে দ্বিতীয় দফার ডোজ নিতে পারেনি। যদি সব নাগরিককে টিকা দেওয়া সম্ভব হতো তাহলে এর লাগাম টানা অনেক বেশি সহজ হতো।
করণীয়
সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিতে আমাদের সচেতন হওয়া ছাড়া উপায় নেই। স্বাস্থ্যবিধি শতভাগ মেনে চলতে হবে। মাস্ক পরতে হবে, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার বিকল্প নেই।
যানবাহন, অফিস, হাসপাতাল সর্বত্র মাস্ক ও স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। সীমান্ত দিয়ে কারও প্রবেশ যেকোনো মূল্যে বন্ধ করতে হবে।
যখনই টিকা পাওয়া যায় সেটি গ্রহণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অনীহা দেখানো যাবে না। টিকার সংকট নিরসনে সরকার কাজ করছে। সব বয়সি মানুষকে টিকার আওতায় আনতে হবে।
এনটি