আন্তর্জাতিক ডেস্ক: তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান সরকার তিন বছর পূর্ণ করছে। ২০১৮ সালের ১০ জুলাই টানা দ্বিতীয় মেয়াদে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন তিনি। শপথ নেওয়ার পর এক বক্তৃতায় এরদোগান বলেন, নতুন এই যুগে গণতন্ত্র, মৌলিক অধিকার, স্বাধীনতা, অর্থনীতি এবং বৃহৎ বিনিয়োগসহ সব ক্ষেত্রেই উন্নতি করবে তুরস্ক। আমরা শুধু আমাদের দলের সমর্থকদের সরকার না, বরং আট কোটি ১০ লক্ষ তুর্কির সরকার আমরা।
গত ৩ তিন বছরে রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগান সরকার কী কাজ করেছেন একনজরে দেখা যাক। এ নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সি।
ব্যাপক গ্যাস আবিষ্কার
তুরস্ক কৃষ্ণসাগরের দক্ষিণাঞ্চলে গ্যাসের এই বিশাল মজুদ আবিষ্কার করে। গত বছর তুরস্কের তেল-গ্যাস অনুসন্ধানকারী জাহাজ ফাতিহ কৃষ্ণ সাগরের পশ্চিমাঞ্চলে ৪০৫ বিলিয়ন ঘনমিটার প্রাকৃতিক গ্যাস আবিষ্কার করে। এটি ছিল তুরস্কের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় আবিষ্কার। এরপর গত মাসে আরও কৃষ্ণসাগরে আরও ১৩৫ বিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস আবিষ্কার করে। সব মিলিয়ে এরদোগানের সর্বশেষ তিন বছর শাসনামালে কৃষ্ণসাগর এলাকায় তুরস্কের গ্যাস আবিষ্কারের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৪০ বিলিয়ান ঘনমিটারে।
হাজিয়া সোফিয়া মসজিদ উদ্বোধন
বাইজান্টাইন আমলে নির্মিত হাজিয়া সোফিয়া মসজিদ। ১৯৩৪ সালে সাম্রাজ্যের পতনের পর মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক স্বাক্ষরিত এক ডিক্রিতে মসজিদটিকে জাদুঘরে পরিণত করা হয়। এরদোগান স্থাপনাটি মসজিদে রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেন। গতবছরের মে মাসে ইস্তাম্বুল বিজয়ের বর্ষপূর্তিতে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগান হাজিয়া সোফিয়াতে নামাজ আদায় করেন।
তাকসিম মসজিদ উদ্বোধন
তুরস্কের ইস্তাম্বুলে আলোচিত তাকসিম স্কয়ারে একটি মসজিদ উদ্বোধন করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগান। ২০১৩ সালে এখানে মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে দেশটিতে তুমুল বিরোধিতা হয়। শেষ পর্যন্ত গত ২৮ মে তাকসিম মসজিদ উদ্ধোধন করেন এরদোগান। পরের দিন শুক্রবার মসজিদটিতে জুমার নামাজ আদায় করেন তিনি।
পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্র
চলতি বছরেরে ১০ মার্চ তুরস্কের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের তৃতীয় চুল্লির নির্মাণকাজ শুরু হয়। এরদোয়ান এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ভিডিও কনফারেন্সে তুরস্কের দক্ষিণ উপকূলীয় শহর মের্সিনে প্রথম আক্কুয়ু পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের (এনজিএস) তৃতীয় চুল্লির ভিত্তি স্থাপন করেন। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি তুরস্কের প্রায় মোট বিদ্যুৎ সরবরাহের ১০ শতাংশ চাহিদা পূরণ করবে।
ঐতিহাসিক শুশা শহরে ভ্রমণ
আজারবাইজানের শুশা শহরে ভ্রমণ করেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগান। গত ১৫ জুন তিনি নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর শুশায় ভ্রমণ করেন। গতবছরের নভেম্বর মাসে আর্মেনিয়ার কাছ থেকে আজারবাইজান শুশা শহরটি পুনরর্দখল করে। শহরটি সংস্কৃতি ও কৌশলগত দিক দিয়ে উভয় দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। আজারবাইজানের এই শুশা শহর দখলে তুরস্কের ড্রোনসহ সরাসরি সমর্থন ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।
ন্যাটো সদস্যের কাছে ড্রোন রপ্তানি
পশ্চিমাদের সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য দেশ হিসেবে তুরস্ক প্রথমবারের মতো পোল্যান্ডের কাছে ড্রোন রপ্তানি করতে যাচ্ছে। ন্যাটোর ওই সদস্য দেশটির কাছে ২৪টি সশস্ত্র ড্রোন বিক্রি করবে তুরস্ক। বেয়ারাক্তার টিবি২ নামের ড্রোনটি আগামী বছর পোল্যান্ডকে হস্তান্তর করবে তুরস্ক। এতে ট্যাংকবিধ্বংসী অস্ত্র যুক্ত করা হয়েছে।
এছাড়া তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদ এজেন্সি আনাদোলুর খবরে বলা হয়েছে, গত তিন বছরে এরদোগান সাতটি বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। এরমধ্যে কাতারে দুইবার, আজারবাইজানে দুইবার, কাতারে একবার, সাইপ্রাসে একবার এবং বেলজিয়ামে একবার। এছাড়া এরদোগান ন্যাটো সামিটসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সামিটে অংশ নিয়েছেন।
এনটি