আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: নওমুসলিম ইমাম ওমর ফারুক ত্রিপুরা হত্যার ঘটনায় পাঁচ দিনেও কেউ গ্রেফতার হয়নি। এ দিকে নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের পর পাহাড়ে আবারো আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে যারা নওমুসলিম, তারা এখন চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, আতঙ্কে এরা নিজ বাড়িঘরে একরকম স্বেচ্ছা অবরুদ্ধ হয়ে আছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্তারা বলেছেন, খুনিদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে। কী কারণে এই খুনের ঘটনা ঘটেছে সে সম্পর্কেও পুলিশ এখনো অন্ধকারেই রয়েছে।
বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার দুর্গম তুলাছড়ির বাসিন্দা ওমর ফারুক ত্রিপুরাকে গত ১৮ জুন রাতে নিজ ঘর থেকে বের করে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করা হয়। ওমর ফারুক পাহাড়ি জনগোষ্ঠী ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের লোক ছিলেন। সনাতন ধর্ম থেকে প্রথমে তিনি ধর্মান্তরিত হয়ে খ্রিষ্টান হন। পরে ২০১৪ সালে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে তুলাছড়ির নিজ এলাকাতেই মসজিদ গড়ে তুলে সেখানে ইমামতি করে আসছিলেন। স্থানীয় সূত্র জানায়, মুসলমান হওয়ার পর পূর্ণেন্দু ত্রিপুরার নাম রাখা হয় ওমর ফারুক। গত ২০ জুন রাতে এশার নামাজের ইমামতি করে বাসায় ফেরার পর কিছু দুর্বৃত্ত ওমর ফারুককে ঘর থেকে বের করে নিজ বাড়িতেই হত্যা করে। এই ঘটনায় ২০ জুন নিহতের স্ত্রী নওমুসলিম রাবেয়া বেগম বাদি হয়ে থানায় মামলা করেন। এজাহারে অজ্ঞাতনামা পাহাড়ি উগ্রবাদী সংগঠনের অজ্ঞাত পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, নিহত ওমর ফারুক ত্রিপুরা সহজ-সরল ও সৎ প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। আগে খ্রিষ্টান ধর্ম পালন করতেন। পরে তিনি পরিবারসহ ইসলাম ধর্মগ্রহণ করেন। মুসলিম হওয়ার পর থেকে তিনি মসজিদে ইমামতি করতেন। তার স্ত্রী, তিন মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। তাদের মধ্যে বড় মেয়েকে ঢাকায় বিয়ে দিয়েছেন, বাকিরা লেখাপড়া করছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঘটনাস্থল রোয়াংছড়ি থানা থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে ও পাহাড়ের দুর্গম এলাকার তুলাছড়ি পাড়ায় অবস্থিত। তার মাধ্যমে ওই এলাকার আরো কিছু পরিবার ইসলাম গ্রহণ করে।
এ দিকে ঘটনার পর পাঁচ দিন অতিবাহিত হতে চললেও ঘটনার সাথে কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন জানিয়েছে, তারা এই খুনের সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে সাংবাদিক ও পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক গবেষক মেহেদী হাসান পলাশ বলেন, ‘নও মুসলিম ওমর ফারুক (পূর্ব নাম পূর্ণেন্দু ত্রিপুরা) বন্ধুর দাওয়াতে ২০১৪ সালে খ্রিষ্টান ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। এশার নামাজের পরে মসজিদের বাইরে গেলে, সন্ত্রাসীরা তার বুকে ও মাথায় গুলি করে, এর কিছুক্ষণ পর তিনি শহীদ হন। ওমর ফারুক ওই অঞ্চলের প্রথম মুসলমান এবং ওই মসজিদের ইমাম। ইসলাম গ্রহণের কারণে দীর্ঘদিন যাবৎ সন্ত্রাসীরা মুসলমানদের হুমকি দিয়ে আসছিল। তারই জেরে নওমুসলিম ওমর ফারুক ত্রিপুরাকে শহীদ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বাঙালি নাগপদের সভাপ কাজী মুজিবর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ওমর ফারুককে জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সন্ত্রাসীরা বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেছে। মুসলিম হওয়াটাই ছিল তার মূল অপরাধ। তিনি জড়িতদের গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
স্থানীয়রা বলেছেন, এটা পাহাড়ি সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের কাজ। কেউ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে এই সশস্ত্র গ্রুপগুলোর টার্গেটে পরিণত হয় তারা। এমনকি পাহাড়ের কোনো মুসলিম যুবক পাহাড়ি তরুণীকে বিয়ে করলেও তারা টার্গেট হয়ে যান।
এ দিকে রোয়াংছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এ এইচ এম তৌহিদ কবির বলেন, ঘটনার পরপরই মামলা হয়েছে। এলাকা অত্যন্ত দুর্গম ও যোগাযোগব্যবস্থা খুব খারাপ। এ ছাড়া হত্যাকাণ্ডের সাথে কারা জড়িত তা শনাক্ত করা যায়নি।
বান্দরবানের এসপি জেরিন আক্তার বলেছেন, এখনো কোনো গ্রেফতার নেই। কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড তা এখনো জানা যায়নি। অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ওমর ফারুক একজন সাধারণ মানুষ ছিলেন। নিরীহ মানুষ ছিলেন। কী কারণে তাকে হত্যা করা হতে পারে সে বিষয়টি এখনো স্পষ্ট নয়।
এনটি