মোঃ নাদিম উদ্দীন আল মিয়াজি । কুরআন বিজ্ঞান শিক্ষা দেওয়ার জন্য নাযিল হয়-নি।এবং রসূল সা.এরও দায়িত্ব নয়, যে তিনি মানুষকে বিজ্ঞানের তা'লিম দিবেন।
তবে কুরআনের কোন তত্ত্ব এবং রসূলের কোন সুন্নাহ বৈজ্ঞানিক মানদণ্ডে শতভাগ উত্তীর্ণ হবেই। এবং আমরা কুরআনে বর্ণিত বিষয়াবলী নির্দ্বিধায় বিশ্বাস করি এবং রসূলের বাতলানো সুন্নাহ ও কালজয়ী আদর্শ শক্তভাবে আঁকড়ে ধরি; বিজ্ঞান এসম্পর্কে যা-ই বলুক না কেন।
নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈশার পূর্বে ঘুমানে এবং পরে গল্পগুজব করা অপছন্দ করতেন। (সহীহ বোখারী হাদিস : ৫৯৯)
অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) এশার নামাজের পর গল্পগুজব ও গভীর রাত পর্যন্ত সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর তাগিদ দিতেন। (মুসনাদ আবি ইয়ালা, হাদিস : ৪৮৭৯)
এছাড়াও অন্যান্যা সাহাবায়ে কেরাম রায়ি. থেকে বর্ণিত হাদিসসমূহ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, রসূল সা. ঈশার পর তাড়াতাড়ি না ঘুমানোকে অপছন্দ করতেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ক্যান্সারবিষয়ক গবেষণা বিভাগ ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সারের তথ্য মতে, সন্ধ্যাবেলায় সূর্য যখন ডুবে যায়, পৃথিবীতে যখন সূর্যের আলো থাকে না, তখন মানুষের মাথার পিছনের গ্ল্যান্ডে 'মেলাটনিন' নামের এক প্রকার হরমোন তৈরী হয়।
মোবাইলের screen এর আলো, ডেস্কটপ কম্পিউটারসহ অন্যান্যা ইলেকট্রনিকস ডিভাইসের আলো এবং শরীরকে কাজ করতে বাধ্য করা বা জাগিয়ে রাখা শরীরে মেলাটনিন হরমোন তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করে।
এই মেলাটনিন হরমোন'ই মানুষের দেহে টিউমারের বৃদ্ধিকে রোধ করে। যুক্তরাজ্যের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ড . পিরেঞ্জ লেভি বলেন, মানুষের ফুরফুরে মেজাজের জন্য, শারীরিক প্রশান্তির জন্য, এবং ডায়বেটিস ও স্নায়বিক সমস্যা থেকে শুরু করে অন্ত্রের রোগ থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য মানুষের শরীরে মেলাটোনিন হরমোনের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
মেলাটোনিন হরমোনের হ্রাসের ফলে মানুষের মেজাজ কিটকিটে হয়ে যায়, সে ঠান্ডা মাথায় কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। যুক্তরাজ্যের সুবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রোনোলজি বিভাগের অধ্যাপক জন রিচার্ডসন বলেন, ‘আমরা দেখেছি, যারা দেরি করে ঘুমায় এবং দেরী করে ঘুম থেকে ওঠে তারা নানা ধরনের মানসিক ও শারীরিক জটিলতায় ভোগে। তাদের গড় আয়ু নিয়মিত সকালে উঠা মানুষের চেয়ে সাড়ে ছয় বছর কম। পরবর্তীতে এই গবেষণা আন্তর্জাতিক ক্রোনবায়োলজি জার্নালে প্রকাশ করা হয়।
রসূলের সুন্নাহ আধুনিক বিজ্ঞান' সাপোর্ট করে। তবে আমরা 'সুন্নাহ'কে রসূলের সুন্নাহ হিসেবে আঁকড়ে ধরবো, আমল করবো; পাশাপাশি বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা লাভ করবো ইনশাআল্লাহ।
একজন অল্প বয়সের বাচ্চার জন্য দৈনিক ১৬-১৮ ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন। একজন কিশোর এবং প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য দৈনিক ৭-৮ ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন। এবং বয়ঃসন্ধির কারণে আরো দেড় থেকে দু'ঘন্টা ঘুমের চাহিদা বৃদ্ধি পায়।
লেখক: উলুমে হাদিস ১ম বর্ষ দারুল উলুম হাটহাজারী।
-এটি