আন্তর্জাতিক ডেস্ক: নিউজিল্যান্ডে ক্রাইস্টচার্চ মসজিদের শেতাঙ্গ সন্ত্রাসী হামলার ওপর ভিত্তি করে নির্মাণাধীন হলিউডের একটি চলচ্চিত্র নিয়ে ক্রমবর্ধমান সমালোচনা ও ক্ষোভের মুখে ছবিটির প্রযোজক ছবি তৈরির কাজ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন।
‘দে আর আস' নামের প্রস্তাবিত চলচ্চিত্রটির মূল ফোকাস ক্রাইস্টচার্চে দু’টি মসজিদে ২০১৯ সালের খ্রিস্টান সন্ত্রাসী হামলার পর নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডর্ন কিভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছিলেন তা নিয়ে। দেশটির মুসলিমদের মধ্যে যারা ওই হামলার শিকার হয়েছিলেন, তারা ছবিটি নিয়ে সমালোচনা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
তারা বলেছেন যে ছবিটিতে হামলার শিকার মুসলমান সম্প্রদায়কে ফোকাসে রাখা হয়নি। এই ছবির প্লটে তারা গৌণ, মুখ্য হলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডর্ন। এতে তাকে একজন ‘শ্বেতাঙ্গ ত্রাতার’ ভূমিকায় সামনে নিয়ে আসা হয়েছে। তাছাড়া নিউজিল্যান্ডের খোদ প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডাও বিষয়টি জানার পর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তার অনুমতি ছাড়াই এমন ছবি নির্মাণের।
এমন প্রেক্ষাপটে চলচ্চিত্রটির প্রযোজক ফিলিপা ক্যাম্পবেল ছবিটিতে তার সংশ্লিষ্টতার জন্য দুঃখপ্রকাশ করে বলেছেন, এই ছবি অনেকের মনোকষ্টের কারণ হতে পারে সেটা তিনি আগে বুঝতে পারেননি। তিনি বলেন, আমি সম্প্রতি এই ছবি নিয়ে প্রকাশ করা উদ্বেগের কথা শুনেছি। মানুষের মতামতের শক্তি উপলব্ধি করতে পেরেছি। মানুষের মনে ১৫ মার্চ ২০১৯-এর ওই মর্মান্তিক ঘটনার ক্ষত এখনো শুকায়নি। এখনই ওই ঘটনা নিয়ে ছবি করার সময় যে আসেনি এ বিষয়ে আমি একমত।
তিনি আরো বলেন, মানুষের মনে আঘাত লাগতে পারে এমন কোনো প্রকল্পের সাথে আমি জড়িত থাকতে চাই না।
নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ওই সন্ত্রাসী হামলায় শহীদ হয়েছিলেন ৫১ জন মুসলমান। তবে তিনি এই ছবির কাজ থেকে সরে দাঁড়ালেও, অ্যামেরিকান এই হলিউড ছবি তৈরির পুরো প্রকল্পটি যে বাতিল হয়ে যাচ্ছে তা নয়।
নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডর্ন সোমবার এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ছবিটি তৈরির জন্য সঠিক সময় এখনো আসেনি। ছবিটির ফোকাস নির্বাচনও ভুল হয়েছে। আমার ব্যক্তিগত অভিমত হলো, ঘটনার পর বেশি তাড়াতাড়ি এই ছবি করা হচ্ছে। নিউজিল্যান্ডের মানুষের জন্য এর ক্ষত এখনো শুকায়নি। তিনি দেশটির স্থানীয় টিভি চ্যানেল টিভিএনজেডকে দেয়া সাক্ষাৎকারে একথা বলেন।
নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, এই ঘটনার সাথে জড়িত অনেক কাহিনী রয়েছে, যা তুলে ধরা যায়। আমি মনে করি না, আমার গল্প এখানে প্রধান।
ওই হামলার সময় জেসিন্ডা যে সহমর্মিতা দেখিয়েছিলেন তা ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছিল। চলচ্চিত্রের প্রস্তাবিত নামটিও নেয়া হয়েছে হামলার ঘটনার পর তার দেয়া একটি ভাষণ থেকে।
মুসলমানরা ক্ষুব্ধ
তবে নিউজিল্যান্ডের মুসলমানরা ছবিটির মূল চরিত্র হিসেবে জেসিন্টাকে বেছে নেয়ার ব্যাপক সমালোচনা করেছেন। আয়া আল-উমারির ভাই হুসেইন ওই হামলায় প্রাণ হারান। তিনি বলছেন, জেসিন্ডা আরডর্নের কাহিনী ‘এখানে বলার মতো কোনো গল্প নয়’।
ন্যাশানাল ইসলামিক ইউথ অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে এই চলচ্চিত্রটি নির্মাণ বাতিল করার জন্য একটি আবেদনে ইতোমধ্যেই প্রায় ৬০ হাজার মানুষ স্বাক্ষর করেছেন। তারা বলছেন, এই চলচ্চিত্রে হতাহত ও যারা প্রাণে বেঁচে যান তাদের উপেক্ষা করা হয়েছে। এখানে কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসেবে সব দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হয়েছে একজন শ্বেতাঙ্গ নারীর ভূমিকার ওপর।
এই পিটিশিনে আরো বলা হয়েছে, এই ছবিটি নিয়ে দেশটির মুসলিম সম্প্রদায়ের সাথে কোনোরকম পরামর্শ করা হয়নি। ক্রাইস্টচার্চে যেখানে এই হামলা হয়েছিল সেই শহরের মেয়র বলেছেন, চলচ্চিত্রের ক্রুদের তার শহরে স্বাগত জানানো হবে না। তিনি বলেন, আমি খুবই ক্ষুব্ধ। কারণ তারা মনে করছে, এভাবে তাদের এই ছবি তৈরির সিদ্ধান্ত সঠিক হয়েছে। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন মেয়র লিয়ান ডিয়েল।
সূত্র: বিবিসি
এনটি