রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দ্রুত নির্বাচনের বিকল্প নেই: তারেক রহমান জমিয়তের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হলেন শায়খ মাওলানা আবদুর রহীম ইসলামাবাদী কুমিল্লায় আন্তর্জাতিক ইসলামী মহাসম্মেলন আগামীকাল মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরীর ইন্তেকালে চরমোনাই পীরের শোক প্রকাশ জমিয়ত সভাপতি মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরী রহ.-এর বর্ণাঢ্য জীবন কওমি সনদকে কার্যকরী করতে ছাত্রদল ভূমিকা রাখবে: নাছির বড় ব্যবধানে জিতে প্রথমবারের মতো পার্লামেন্টে যাচ্ছেন প্রিয়াঙ্কা আইফোনে ‘টাইপ টু সিরি’ ফিচার যেভাবে ব্যবহার করবেন  স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক: ধর্ম উপদেষ্টা আল্লাহকে পেতে হলে রাসূলের অনুসরণ অপরিহার্য: কবি রুহুল আমিন খান

কওমি মাদরাসা খোলাসহ গণমুখী চার দাবি পেশ করলো জাতীয় ওলামা মাশায়েখ পরিষদ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মোস্তফা ওয়াদুদ: মানবিক বিবেচনায় কওমি মাদরাসা খুলে দেয়াসহ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে গণমূখী চার দাবি তুলে ধরেছেন জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ নেতৃবৃন্দ।

আজ মঙ্গলবার (১৫ জুন) দুপুর ১২ টায় রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টর্স ইউনিটির সাগর-রুনি হলে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে এসব দাবি তুলে ধরেন সংগঠনের সভাপতি আল্লামা নুরুল হুদা ফয়েজী। এ সময় সরকারকে আহ্বান করে তিনি বলেন,

১. মানবিক বিবেচনায় কওমী মাদরাসা খুলে দিন।
২. সকল প্রাইমারী স্কুলে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দিন।
৩. ইমাম, মুয়াজ্জিনদের চাকুরীবিধি ও বেতন কাঠামো ঠিক করুণ।
৪. কুরবানীর পশুর চামড়ার ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ করুণ।

জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল্লামা নুরুল হুদা ফয়েজীর সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাওলানা গাজী আতাউর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, শায়খুল হাদীস মাওলানা হেমায়েতুল্লাহ কাসেমী, মাওলানা ইউনুস ঢালী, মাওলানা কামাল উদ্দিন সিরাজ, মুফতি আশরাফ আলী নূরী, মুফতি ওয়ালী উল্লাহ, মাওলানা মোরতুজা কাসেমী, মুফতি আক্তারুজ্জামান, মাওলানা লোকমান হোসেন জাফরী, মাওলানা রফিকুন্নবী হক্কানী, মাওলানা শাহজাহান হাবিবি, মাওলানা বাসির মাহমুদ প্রমূখ।

এ সময় লিখিত বক্তব্যে আল্লামা নুরুল হুদা ফয়েজী বলেন, কওমি মাদ্রাসা আর সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঝে চরিত্রগত মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। কওমি মাদ্রাসা- শিক্ষা প্রদানের সাথে সাথে শিক্ষার্থীদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে থাকে। ফলে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তা বলয় তৈরিতে অবদান রাখে। করোনার এই দুঃসময়ে যখন মানুষের খাদ্য সংকট চরমে; এমনি মুহূর্তে লাখ লাখ শিক্ষার্থীর খাদ্য ও আবাসন ব্যবস্থা বন্ধ করে রাখা অমানবিক।

তিনি বলেন, সরকার এতিমখানা চালু রাখার নির্দেশনা জারি করেছে। এটা ইতিবাচক। এই নির্দেশনার আওতায় সকল কওমি মাদরাসাও অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত। কারণ, প্রতিটি কওমি মাদ্রাসায় এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিং-এর ব্যবস্থা আছে। তা সত্বেও কওমি মাদ্রাসা বন্ধ করে হাজার হাজার এতিম ও অসহায় শিক্ষার্থীদের খাদ্যঝুকির মধ্যে ফেলা হয়েছে। এটা সামাজিক অস্থিরতাও তৈরি করছে।

এসকল মানবিক ও সামাজিক অবস্থান বিবেচনায় নিয়ে দেশের সকল কওমি মাদ্রাসা খুলে দেওয়ার মাধ্যমে লাখ লাখ শিক্ষার্থী, এতিম ও অসহায় মানুষের আবাসন ও খাদ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জোর দাবি জানাচ্ছি।

তিনি আরো বলেন, শিক্ষার প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজন করার মূল লক্ষ্যই হলো, সকল শিক্ষার্থী প্রতিষ্ঠান থেকে পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা পাবে। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার অন্য ধারাগুলো এই লক্ষ্য থেকে অনেকটাই বিচ্যুত।

প্রাইভেট পড়ানো, কোচিং ও নোট ব্যবস্থার দৌরাত্ম্য শিক্ষাব্যবস্থায় সর্বজন বিদিত ব্যাধি। অপরদিকে কওমি মাদ্রাসা এখনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার আদর্শ মান ধরে রেখেছে। একমাত্র কওমী মাদ্রাসাতেই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানিকভাবে দেওয়া হয়। এখানে কোন প্রাইভেট পড়ানো, কোচিং ও নোট বাণিজ্য হয় না। শিক্ষকগণ পুরোপুরি প্রতিষ্ঠানে মনোনিবেশ করেন এবং তাদের আয় উপার্জনও সম্পুর্ণভাবে প্রতিষ্ঠান প্রদেয় বেতন-ভাতার উপর নির্ভর করে।

বর্তমানে প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে তাদের আয়-উপার্জন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে আছে। উপার্জনের জন্য বারোয়ারি ধান্দা না করে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় একনিষ্ঠতার এই শুদ্ধবাদীতাই যেন কওমি শিক্ষকদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আমরা সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি, নির্ভেজাল শিক্ষানিষ্ঠ শিক্ষকদের শিক্ষানুরাগকে সম্মান করে এবং তাদের মানবিক দিক বিবেচনা করে অবিলম্বে সকল কওমি মাদ্রাসা খুলে দিন। পাশাপাশি স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে পর্যায়ক্রমে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে দিন।

মডেল মসজিদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সারা দেশে ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রজেক্টকে আমরা সাধুবাদ জানাই। এমন একটি মহৎ কাজের জন্য বর্তমান সরকার ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। একইসাথে মডেল মসজিদগুলোকে সব দিক থেকে মডেল মসজিদে রূপান্তর করা এবং সামাজিক সুফল নিশ্চিত করতে বিজ্ঞ ওলামায়ে কেরামের সাথে পরামর্শ করে আমরা সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাবনা পেশ করছি।

ক. মডেল মসজিদের জনবল নিয়োগে ওলামায়ে কেরামের সমন্বয়ে নিয়োগ বোর্ড গঠন করতে হবে। যাতে অনৈতিক পন্থা অবলম্বন এবং কোনরকম দুর্নীতি ছাড়াই যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ নিশ্চিত করা যায়।

খ. মডেল মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমদের জন্য যে বেতন কাঠামোর প্রস্তাব করা হয়েছে; তা রীতিমতো অসম্মানজনক ও বৈষম্যমূলক। ইমাম পদের যোগ্যতা হিসেবে হাফেজ, দাওরা/ কামিল, মুফতি, মুহাদ্দিস চাওয়া হয়েছে। মাস্টার্স ও উচ্চতর ডিগ্রির বিপরীতে যে বেতন-কাঠামো প্রস্তাব করা হয়েছে, তা কিছুতেই সুবিবেচনা প্রসূত নয়। মডেল মসজিদের ইমাম-খতিবদের জন্য প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তাদের মর্যাদা ও বেতন-ভাতা, মুয়াজ্জিনদের জন্য ২য় শ্রেণী এবং খাদেমদের জন্য ৩য় শ্রেণীর মর্যাদা ও সুযোগ সুবিধা প্রদানের দাবী জানাচ্ছি।

গ. ৫৬০ টি মডেল মসজিদের বাকিগুলোর নির্মাণ কাজ তদারকির জন্য ওলামাদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করার আহ্বান জানাচ্ছি। কারণ মসজিদ নির্মাণে ইতোমধ্যেই দুর্নীতির কথা শোনা যাচ্ছে। যা দুঃখজনক।

ঘ. এখানে প্রসঙ্গত: মসজিদ আল্লাহর ঘর। আমরা আশা করতে চাই, এই মসজিদ কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই নির্মাণ করা হয়েছে। সেজন্য আমরা আশা করব, এই মসজিদকে দলীয় রাজনৈতিক প্রচারণার উপাদান বানানো হবে না। যদি ইখলাস থাকে, তাহলে হাজার বছর পরেও মানুষ এর নির্মাতা কে মনে রাখবে। আর রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি থাকলে, মসজিদ এ ‘যেরারের’ ইতিহাস মনে করিয়ে দিতে চাই।

কুরবানীর চামড়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ দেশ মুসলমানপ্রধান হওয়ায় পবিত্র ঈদুল আজহার সময় প্রচুর গরু, ছাগল কুরবানি হয়। এছাড়া সারা বছরই এসব পশুর গোশত ক্রয়-বিক্রয় হয়ে থাকে। ফলে দেশে চামড়ার উৎপাদন ও সরবরাহ ক্রমেই বাড়ছে। ১৯৯০ পরবর্তী সময়ে ওয়েট ব্লু উৎপাদনের সীমিত পরিসর পেরিয়ে ক্রাস্ড ও ফিনিস্ড লেদার, জুতা, ব্যাগ ও অন্যান্য চামড়াজাত পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে চামড়া খাতের রপ্তানিতে পণ্য বৈচিত্র এসেছে। বাংলাদেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য বিদেশেও পরিচিতি পায় এবং দ্বিতীয় বৃহৎ রপ্তানি পণ্য হিসাবে পরিগণিত হয়। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে সরকারের ভুল নীতি ও সিদ্ধান্তহীনতায় রপ্তানি আয়ের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থান হারিয়ে চামড়া খাত তৃতীয় স্থানে নেমে এসেছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে দরিদ্র জনগোষ্ঠির ওপরে এবং কওমী মাদ্রাসার ওপরে। কুরবানীর চামড়া গরীবের হক। দেশের কওমী মাদ্রাসাগুলোর আয়ের বড় একটি খাত এই কুরবানীর চামড়া। আজকের সংবাদ সম্মেলন থেকে আমরা জোর দাবী জানাচ্ছি, অনতিবিলম্বে চামড়া খাতের অব্যবস্থাপনা, সিদ্ধান্তহীনতা দূর করে, চামড়া শিল্পকে শক্তিশালী করুন।

আর এবারের জরুরী অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে কাঁচা চামড়া রপ্তানীর অনুমোদন দিন। একই সাথে কাঁচা চামড়া নিয়ে অবৈধ কারসাজি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। চামড়ার ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ করতে হবে এবং সরকার নির্ধারিত মূল্যে যাতে ট্যানারীগুলো চামড়া ক্রয় করে, তার যথাযথ ব্যবস্থা করতে হবে।

ইমাম-মুয়াজ্জিনদের বেতন কাঠামো ও চাকুরী বিধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইমাম-মুয়াজ্জিনগণ মানুষের ধর্মীয় অপরিহার্য বিধান আঞ্জাম দেন। অথচ তাদের বেতন-ভাতা নিয়ে নৈরাজ্যের চূড়ান্ত হয়। কোন নিয়ম নীতি ছাড়া খামখেয়ালি ভাবে তাদের বেতন-ভাতা নির্ধারণ করা হয়। দেশের প্রায় ৩ লাখ মসজিদে কমবেশি ১০ লাখ মানুষের কর্মক্ষেত্র। তাদের বেতন-ভাতা ও পেনশন এমন বিশৃংখল হওয়া দায়িত্বশীল রাষ্ট্র ধারণার খেলাফ। সেজন্য ওলামাদের সমন্বয়ে দেশের সকল মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনদের জন্য অবিলম্বে চাকুরী বিধি ও জাতীয় বেতন কাঠামো নির্ধারণের দাবি জানাচ্ছি।

আলেমদের মুক্তি প্রসঙ্গে আল্লামা ফয়েজী বলেন, জাতীয় ওলামা-মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ আজকের সংবাদ সম্মেলন থেকে আটককৃত সকল নিরপরাধ আলেম-ওলামাদের মুক্তির দাবি করছে। ধর্মীয় ফরজ শিক্ষার ব্যবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সকল মুসলমানদের জন্য কুরআন ও প্রয়োজনীয় মাসআলা শেখা ফরজ। রাষ্ট্রের উচিত নাগরিকদের বিশ্বাসমতে সকল অপরিহার্য বিষয়াবলীর আয়োজন করা। সেই বিবেচনাতে দেশের সকল প্রাইমারি বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের কোরআন ও ফরয ইলম শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। একই সাথে শিক্ষার সকলস্তরে ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে।

এমডব্লিউ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ