রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দ্রুত নির্বাচনের বিকল্প নেই: তারেক রহমান জমিয়তের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হলেন শায়খ মাওলানা আবদুর রহীম ইসলামাবাদী কুমিল্লায় আন্তর্জাতিক ইসলামী মহাসম্মেলন আগামীকাল মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরীর ইন্তেকালে চরমোনাই পীরের শোক প্রকাশ জমিয়ত সভাপতি মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরী রহ.-এর বর্ণাঢ্য জীবন কওমি সনদকে কার্যকরী করতে ছাত্রদল ভূমিকা রাখবে: নাছির বড় ব্যবধানে জিতে প্রথমবারের মতো পার্লামেন্টে যাচ্ছেন প্রিয়াঙ্কা আইফোনে ‘টাইপ টু সিরি’ ফিচার যেভাবে ব্যবহার করবেন  স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক: ধর্ম উপদেষ্টা আল্লাহকে পেতে হলে রাসূলের অনুসরণ অপরিহার্য: কবি রুহুল আমিন খান

তোমরা এদেশের আলেমদের মাস্টার মার্কা মৌলভী বানাতে চাও: ড. এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মোস্তফা ওয়াদুদ: যারা বলে, পোশাকের কোন সুন্নত নেই। শরিয়তে নির্ধারিত কোনো পোষাক নেই। তারা এদেশের আলেমদের মাস্টার মার্কা মৌলভী বানাতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন জৈনপুরের পীর ড. এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী। তিনি বলেন, আমার বুঝে আসে না। তারা কেমন জাতের মৌলভী যারা সরাসরি অস্বীকার করে যে, পোশাকের কোন সুন্নত নেই। শরীয়তে নির্ধারিত কোনো পোশাক নেই।

সম্প্রতি এক ভিডিও আলোচনায় তিনি বলেন, কিছুদিন আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ঝগড়া হয়ে গেল টুপি নিয়ে। কোথাও এক ছোট্ট বাচ্চা প্যান্ট শার্ট পরে নির্ধারিত টুপি না পরে ক্লাসে ডুকছে। তারপর মাদরাসা থেকে তাকে বের করে দিয়েছে। এতটুকুতেই ক্ষান্ত হয়নি। সোশ্যাল মিডিয়ায় দুটি পক্ষ তৈরি হয়ে গিয়েছে এটি নিয়ে। যারা পক্ষ নিয়েছে, তারা বলছে, শরিয়াতে নির্ধারিত পোশাক নেইঅ এই বলে তারা মনগড়া ফতোয়া দিয়ে বসে আছে।

তিনি বলেন, জেনে রাখ! তোমাদের ওই ফতোয়া আল আজহারে চলতে পারে। বাংলাদেশে চলবে না। তোমরাই দেশের আলেমদের মাস্টার মার্কা মৌলভী বানাতে চাও।

এ সময় ইতিহাসের কথা উল্লেখ করে ড. এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী বলেন, হজরত ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি বাগদাদের কাজী থাকাবস্থায় একদিন বিচারকাজ পরিচালনা করছেন। কথা প্রসঙ্গে তিনি বললেন, ‘আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লাউ পছন্দ করতেন। এই কারণে আমিও লাউ পছন্দ করি। এবার এক যুবক দাঁড়িয়ে বললো, আমি লাউ পছন্দ করিনা। কিতাবে লিখে, তখন ইমাম আবু ইউসুফ রহ. তাকে হত্যার আদেশ করলেন। বললেন, যে আমার রাসূলের সুন্নাত পছন্দ করিনা বলে, সে মুসলিম হতে পারে না। সে মুরতাদ। তাকে হত্যা করো। এরপর যুবকটি তৎক্ষণাৎ তাওবা করল এবং তিনি তাকে হত্যাকাণ্ড থেকে নিষ্কৃতি দিলেন।

একটু চিন্তা করুন! সারাজীবন যদি কেউ  লাউ না খায়, তাহলে কি গুনাহ হবে? হবে না। কিন্তু যদি কেউ নবীজির সুন্নতকে অস্বীকার করেন, অবমাননা করেন, সুন্নতের প্রতি বিদ্বেষ রাখেন। তাহলে আপনার ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে। সুতরাং রাসুলুল্লাহ্'র সামগ্রিক সুন্নতকে বিশ্বাস করতে হবে। সুন্নত হিসাবে ও নীতি হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। আর নীতি হিসেবে আমল করতে হবে।

তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের দেশে পক্ষ-বিপক্ষ কোন পক্ষই সুন্নত নিয়ে পড়াশোনা করে না। এটা কি কোন কথা হলো? একজন আলেম কি এতটা ভারসাম্যহীন কথা বলতে পারে? হয়তো তার এ বিষয়ে জানা নেই, এটা একটা অপরাধ। আর জানা থাকার পর যদি সুন্নতকে এভাবে কটাক্ষ করে, খাটো করে তাহলে, এটা হলো মহাঅপরাধ।

আমি তাদের জন্য ইমাম আবু ইউসুফ এর বিষয়টিকে দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করলাম। সারা জীবন কেউ যদি লাউ না খায়, তাহলেও তার গুনাহ হবে না। কিন্তু এই সুন্নতকে অবমাননা করলে ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে।

সুতরাং পোশাক-আশাকে যেমন ইসলাম কঠোরতা দেয় না। তেমনি খাবারের ক্ষেত্রেও তো কঠোরতা দেয়নি। এখন পোশাক-আশাকে আপনি সুন্নত তরিকা পালন করবেন না। এটা আপনার ব্যক্তিগত গোমরাহী। কিন্তু সুন্নতি কোন পোশাক নেই, এরকম কথা বলা চরম ধৃষ্টতা!

জেনে রাখা উচিত! পোশাক চার প্রকার। ১. লিবাসুন সুন্নাহ। যা সুন্নতি লেবাস। ২. লিবাসুত তাকওয়া। তাকওয়াভিত্তিক পোশাক।
৩. লিবাসুল কারাহাত। এমন পোশাক যা অপছন্দনীয়। ৪. লিবাসুল হারাম। বা হারাম পোশাক। সুতরাং পোশাকের জন্য শরীয়তে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।

বাংলাদেশের ফতোয়া দেন যেসব আলেম, তাদের বলবো, ভালো করে পড়ুন। কিতাবপত্র বুঝুন। তারপর নিজেরা না বুঝলে আপনাদের উস্তাদ যারা আছে, সিনিয়র আলিম যারা আছে, তাদের থেকে বুঝুন। মোজাকারা করুন।  অনুমান নির্ভর কথা বলে দিলেন? এটার জন্য বড় ধরনের ক্ষতির সৃষ্টি করতে পারে। কিংবা উম্মাহকে বিভক্ত করে দিতে পারে।

যারা বলতেছেন, জুব্বা টুপি বা সুন্নতি পোশাকের কোন ভিত্তি নেই। না বুঝে মনগড়া একটা ফতোয়া দিয়ে বসে আছেন। তারা এই ফতোয়াগুলো দিয়ে মানুষকে সুন্নত থেকে সরানোর চেষ্টা করছেন।

সুন্নাতের বিরুদ্ধে ইংরেজরা প্রথমে যে লোকটাকে দাঁড় করালো, তার নাম স্যার সৈয়দ আহমদ খান। আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা। স্যার সৈয়দ আহমদ খান খুব খারাপ ছিল। মুসলিম ঐতিহাসিকরা তাকে একজন মহাপুরুষ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু স্যার সৈয়দ আহমদ খান সারাজীবন শুধু ইংরেজদের দালালী করে গেছেন। আলীগড় প্রতিষ্ঠা করে তিনি মাস্টার মার্কা মৌলভী তৈরি করেছেন।

এজন্য ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলতেন, মাস্টার মার্কা মৌলভীর চেয়ে মৌলভী মার্কা মাস্টার ভালো।

এখন এই যে কিছু কিছু মৌলভী বলছেন যে, পোশাক-আশাকে সুন্নত নেই। তারা চায় দেশের সব মৌলভীদের মাস্টার মার্কা বানাতে। মৌলভীরা প্যান্ট শার্ট পরে খুতবা দিবে। মিশরের মতো। তারা জেনে রাখুক! এটা আনোয়ার সাদাতের মিশর নয়। বরং এটা শাহ কেরামত আলীর বাংলাদেশ। শাহজালালের বাংলাদেশ। শাহপরানের বাংলাদেশ। যুগের পর যুগ যারা মেহনত করে এদেশের মানুষকে সুন্নত শিখিয়েছেন। তোমাদের ওই ফতোয়া আল আজহারে চলতে পারে। বাংলাদেশ নয়। তোমরা এদেশের আলেমদের মাস্টার মার্কা মৌলভী মৌলভী বানাতে চাও। এটা এদেশে কখনো হবে না ইনশাআল্লাহ।

এমডব্লিউ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ