শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
‘প্রকৃতপক্ষে ভুল হলে ক্ষমা চাইতে প্রস্তুত আ.লীগ’ সিইসিসহ নবনিযুক্ত নির্বাচন কমিশনাররা শপথ নেবেন রোববার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য হলেন মুন্সিগঞ্জের নিরব ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু বাজারে এলো ইনফিনিক্সের সবচেয়ে স্লিম স্মার্টফোন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন: বেঁচে ফেরার আশা করেনি সানিয়া মুসলিম কমিউনিটি কমলগঞ্জ উপজেলা শাখার কমিটি গঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন: অর্থের অভাবে অনেক আহতের হচ্ছে না চিকিৎসা কোটি টাকার সহায়তা নিয়ে ফিলিস্তিনিদের পাশে হাফেজ্জী চ্যারিটেবল সোসাইটি ফরিদপুরে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ‘কুরআন সবক অনুষ্ঠান’র উদ্বোধন

তরুণ আলেমদের বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরিতে বেফাক-হাইয়ার ভুমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

দরস-তাদরিসের বাইরেও বিকল্প পেশায় যুক্ত হচ্ছেন কওমি পড়ুয়া নবীন আলেমরা। নবীনদের এই বিকল্প ও ভিন্ন কর্মসংস্থান এখনো হয়ে ওঠেনি ততটা মসৃণ ও বিস্তৃত। তাদের নতুন পথচলাকে বাস্তবিক অর্থেই মসৃণ করতে কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ শিক্ষা অথরিটি আল হাইয়াতুল উলইয়া ও বেফাকের ভূমিকা রাখা কতটা গুরুত্বপূর্ণ? নতুনভাবে পথ চলতে গিয়ে তরুণরা আসলেই কতটা সরে যাচ্ছেন আকাবির আসলাফের দেখানো পথ থেকে- এ নিয়ে আওয়ার ইসলামের সাথে কথা বলেছেন প্রবীণ শিক্ষাবিদ ও রাজধানীর দারুর রাশাদ মাদরাসার শিক্ষাসচিব মাওলানা লিয়াকত আলী। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন আওয়ার ইসলামের সাব এডিটর নুরুদ্দীন তাসলিম। পাঠকের জন্য তিন পর্বের ধারাবাহিক সাক্ষাৎকারের শেষ পর্ব তুলে ধরা হল আজ।

-তরুণ আলেমদের বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরিতে বেফাক-হাইয়ার বিশেষ কোন ভুমিকা রাখার প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন কি?

মাওলানা লিয়াকত আলী: কওমি তরুণদের বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরির ক্ষেত্রে বেফাক-হাইয়ার দৃষ্টি দেওয়া আবশ্যকীয় বলে আমি মনে করি। কেননা বেফাক- হাইয়া নিছক কোন শিক্ষাবোর্ড নয়; বরং এটি আমাদের ওলামায়ে কেরামের অভিভাবক পরিষদ বলা যেতে পারে। সরকারি শিক্ষাবোর্ড-এর মত এই বোর্ডের দায়িত্ব শুধু শিক্ষা কারিকুলাম ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ করা নয়। ওলামায়ে কেরামের সার্বিক দেখাশোনা ও সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করাও বোর্ড কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। এজন্যই বর্তমানে তরুণ আলেমদের কর্মসংস্থানের যে সঙ্কট দেখা দিয়েছে এটা নিয়ে বেফাকের ভূমিকা পালন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি।

বাংলাদেশ সরকার বর্তমানে দাওরায়ে হাদীসকে মাস্টার্সের মান দিয়েছেন -এর সদ্ব্যবহারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে বোর্ডকে।

দাওরায়ে হাদিসের সনদকে সদ্ব্যবহারের পদ্ধতি হতে পারে; আমাদের দেশের স্কুলগুলোর ধর্মীয় শিক্ষকের পদ ও  কলেজ ভার্সিটিগুলোর ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে কওমি মাদরাসায় পড়ুয়া আলেমরা যেন এপ্লাই করতে পারেন এ বিষয়ে সরকারের সাথে বোঝাপড়া করাও হাইয়াতুল উলিয়ার অন্যতম দায়িত্ব।

সরকারের সাথে আলোচনার মাধ্যমে আলিয়া মাদরাসা, স্কুলের ধর্মীয় শিক্ষকের পদ ও ভার্সিটির ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে কওমি পড়ুয়ারা সুযোগ পেলে -এর মাধ্যমে তাদের বিকল্প পেশার দ্বার আরও উন্মোচিত হবে। এসবের বাইরেও ওলামায়ে কেরামের বিকল্প ও ভিন্ন পেশার বিস্তৃতি বাড়াতে চাইলে সিলেবাসের ব্যাপক সংস্কার ছাড়া তা সম্ভব নয়।

আমাদের কওমি মাদরাসায়  মূলত তাত্ত্বিক দিকগুলো নিয়ে পড়াশোনা করানো হয়; আমাদের সিলেবাসে (কমার্স-সাইন্স)-এর ব্যবহারিক ও প্রায়োগিক দিকটি নেই।

এজন্য কওমি মাদরাসার সিলেবাসের ব্যাপক সংস্কার ছাড়া কওমি আলেমদের কর্মসংস্থানের স্থায়ী সমাধান হবে না এবং নেই। এটা নিয়ে ভাবা না হলে এ সমস্যা বাড়তেই থাকবে।

আলেমদের কর্মসংস্থানের  প্রধান ক্ষেত্র হলো মসজিদ-মাদরাসা। অধিকাংশ মাদরাসা ও মসজিদে কোন জনবল কাঠামো, নিয়োগ, বদলি, পদায়ন-পদোন্নতি, বেতন কাঠামো, অবসর, অবসর সুবিধা এসমস্ত কোন নিয়ম-নীতি নেই অর্থাৎ বলা যেতে পারে অধিকাংশ মাদরাসায় কোনো চাকুরিবিধি নেই।

মসজিদগুলোতে সম্ভব না হলেও হাইয়াতুল উলইয়া চাইলে মাদরাসাগুলোতে চাকুরির নিশ্চয়তা, নিরাপত্তা ও  অবসর বিধি বিষয়ে দেশের সব মাদরাসার জন্য নীতিমালা প্রণয়ন ও বাধ্যতামূলক করে দিতে পারে। আলেমদের কর্মসংস্থানের নিশ্চিয়তার জন্য এটা জরুরিও বটে।

-তরুণ আলেমরা বিকল্প পেশায় যুক্ত হলে অনেকেই স্বকীয়তা ও ঐতিহ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এ বিষয়টা নিয়ে আপনার মতামত যদি বলতেন?

মাওলানা লিয়াকত আলী: একথা আমি আগেই বলেছি, তরুণ আলেমরা বিকল্প পেশায় যুক্ত হলে স্বকীয়তা ও ঐতিহ্য হারানোর ভয় থাকে। অনেক ক্ষেত্রে এটা বাস্তবতায়ও রূপ নিচ্ছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে প্রবীণ আলেমদের সাথে নবীনদের সম্পর্কহীনতা, বড়দের তত্ত্বাবধায়নে না থাকা।

এই অনাকাঙ্খিত বিষয়টি এড়াতে  ভিন্ন পেশায় যুক্ত হওয়া নবীনরা যে মাদরাসায় পড়েছেন অথবা যেখান থেকে ফারেগ হয়েছেন সে মাদরাসার বিজ্ঞ ওস্তাদদের সাথে সম্পর্ক রাখলেই এই সমস্যার সমাধান হতে পারে।

ওলামায়ে দেওবন্দের চিন্তা ধারা হলো বৈষয়িক জীবনের সাথে যুক্ত হয়েও মানুষ ধার্মিকতা বজায় রাখতে পারে। ওলামায়ে দেওবন্দের এই বৈশিষ্ট্য-চিন্তাধারাকে বাস্তবতায় রূপ দিতে চাইলেও তো নবীনদের ভিন্ন পেশায় যুক্ত হওয়া দরকার।

-বিকল্প কর্মসংস্থানের এই পথ কি আদৌ মসৃণ হবে তরুণদের জন্য?

মাওলানা লিয়াকত আলী: বিকল্প কর্মসংস্থানের পথকে মসৃণ করে নেওয়া তরুণদের দায়িত্ব। কোন কর্মক্ষেত্রই মসৃণ নয়। মনে রাখতে হবে এই পৃথিবী ফুলশয্যার জায়গা নয়। এ কঠিন জায়গাকে মসৃণ করে নেওয়া সবার দায়িত্ব। এছাড়া নতুন কর্মক্ষেত্র কখনোই কারো জন্য সুখকর হয় না। তাই একে নিজের অনুকূল করে নেওয়া সবার নিজের দায়িত্ব।

-আওয়ার ইসলামকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
মাওলানা লিয়াকত আলী: আপনাকেও ধন্যবাদ।

গত পর্বের লেখাগুলো পড়ুন: 

‘দরস-তাদরিসের বাইরেও তরুণ আলেমদের বিকল্প পেশায় যুক্ত হওয়া সময়ের দাবি’

‘বিকল্প যেসব পেশায় যুক্ত হতে পারেন তরুণ আলেমরা’

এমডব্লিউ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ