কবি মুসা আল হাফিজ।।
মহাগ্রন্থ আল কুরআন তেলাওয়াত করছিলাম। সামনে এলো সুরা নমল। নমল মানে পিঁপড়া। পুরো এক সুরার নাম পিঁপড়ার নামে! মহান আল্লাহ এত্তটুকু প্রাণীকে এতো গুরুত্ব দিলেন! ছয় পায়ে হাঁটা সামান্য এই প্রাণী গড়পড়তা একজন মানুষের চেয়ে সোয়া এক কোটিগুণ ছোট! তার ওজন হয় মাত্র পাঁচ মিলিগ্রাম। এমন এক প্রাণী কেন আলোচিত সেই গ্রন্থে, যা মানবজাতির সংবিধান?
হ্যাঁ, খোদার বিধানে কারো গুরুত্ব আকার দিয়ে নির্ধারিত হয় না। খুব ছোটও হতে পারে খুব গুরুত্বপূর্ণ, এমনকি শিক্ষাদাতা! আর পৃথিবীটা আমাদের একার নয়। অন্য কাউকেই অবহেলা করা চলবে না। যখন অল্লাহ তা করেননি! কীভাবে পিঁপড়াকে অবহেলা করবো? যে তার শরীরের চেয়েও বিশ গুণ বেশি ওজন বহন করতে পারে। তার নেই কোনো ফুসফুস। কিন্তু শরীরে থাকা সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম অসংখ্য ছিদ্রকে সে কাজে লাগায়। এর মাধ্যমে তার ভেতরে ও বাইরে অক্সিজেনের আসা-যাওয়া!
তার নেই কোনো কান। কিন্তু সে বধির হয়ে নেই। মাটির কম্পনের অর্থ সে জানে। হাঁটু এবং পায়ে থাকা সেনসিং ভাইব্রেসন দিয়ে সে মাটির বাণী বুঝে নেয়। শ্রবণ করে চারপাশকে! আসলে শ্রবণ নয়, পাঠ। সে পড়ে নেয় গোটা পরিস্থিতির চিত্র ও চরিত্রকে! প্রাণিদের মধ্যে সে বিশিষ্ট। কারণ তার দেহ ছোট হতে পারে, কিন্তু পোকামাকড়ের মধ্যে সবচে’ বড় মস্তিষ্কের অধিকারী এই পিঁপড়া! অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় তার মস্তিষ্কে রয়েছে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজারটিরও বেশি কোষ।
পিঁপড়া কখনো ঘুমায় না। আমরা না ঘুমালে অচল হয়ে যাবো। পানির নিচে সে বাঁচতে পারে ২৪ ঘন্টা। আমরা ২৪ মিনিটও পারি না। তার শরীরের গঠন এমন যে, উড়ন্ত বিমান থেকে তাকে ফেলে দিলে তার কিছুই হবে না। আমরা উড়োজাহাজ থেকে নিচে পড়লে শেষ হয়ে যাবো। তার পেট দুটো। একটিতে নিজের জন্য খাদ্য জমা রাখে, অন্যটিতে অপরের জন্য! আমাদের পেট একটি। তাতে নিজের খানা রাখি আর অপরের খানা কেড়ে এনে তাতে ঢুকাবার চেষ্টা করি।
তারা বেঁচে থাকে সামাজিকভাবে, কলোনি তৈরী করে। সেখানে একে অপরকে সাহায্য করা তাদের নীতি। প্রয়োজনে নিজের কলোনির সদস্যকে বিপদ থেকে বাঁচাতে পিঁপড়ারা জীবন দিয়ে দেয়! আমরা অন্যকে বিপদে দেখলে নিরাপদ দূরত্ব খুঁজি । এমনকি আমরাই হয়ে উঠি অন্যদের বিপদের কারণ! পিঁপড়ারা সবসময় একই রেখায় চলে। সামনের পিঁপড়ার আনুগত্য করে পেছনের প্রত্যেকেই। সকলেই চায় সঠিকরেখায় চলতে। কিন্তু পেছনের জনও যাতে সঠিক রেখায় থাকে, সে জন্য প্রতিটি পিঁপড়া চলতে চলতে শরীর থেকে ঝরিয়ে যায় একধরণের তরল পদার্থ; ফেরোমন। এটি দেখে পেছনের পিঁপড়া সঠিক রেখা চিনে নেয়!
আমরা জীবনে যখন সফল হবার পথ পাই, পেছনের জন যাতে এর দিকচিহ্নও খোঁজে না পায়, তার বন্দোবস্ত কি করি না? এমনকি পেছনে যে নাগাল পেতে চাইছে, সে কি প্রায়ই নাগাল পেলে সামনের জনকে ফেলে দিতে চায় না? সামনের জন কি পেছনের জনকে লাথি দিয়ে ফেলে দিতে চায় না অথৈ অন্ধকারে; যেন সে আমার নাগাল না পায়! বিপদের সময় পিঁপড়ারা জানে কী করতে হবে। তখন অন্য সময়ের চেয়ে বেশি ঐক্যবদ্ধ হয়। তারা যে কোনো প্রতিপক্ষকে পরোয়া করে না। তাদের কাছে লড়াই মানে হয় মারা, নয় মরা! মরণের আগে সে যুদ্ধে হার মানে না! সে মরতে আগ্রহী, পরাজিত হতে রাজি নয়। কিন্তু আমরা তো বিপদে সবচে’ বেশি দিশেহারা হই। বিপদ দেখলে কাছের জনকে রেখে পালাই। কঠিন প্রতিপক্ষের ভয়ে সত্য ও স্বত্ত ত্যাগ করি। আমরা ভয়ের মধ্যে আত্মসমর্পন করে থাকতে রাজি কিন্তু সাহসের মধ্যে আত্মজয় করতে রাজি নই। আমরা মৃত্যুকে ভয় পাই, পরাজয়কে নয়!
পিঁপড়া মরে গিয়েও নিজের মৃত্যুর জানান দেয়। যেন তাকে খুজে অন্যেরা পেরেশান না হয়। মরে গেলে তার শরীর থেকে এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয়। যা সবাইকে জানিয়ে দেয়, অমুক জায়গায় রয়েছে এক পিঁপড়ার লাশ! অন্যরা এভাবেই দূরে কোথাও মৃতস্বজনের খবর পায়। মরা পিঁপড়ার শরীরের রাসায়নিক পদার্থ খুবই বিপজ্জনক। মৃতের দেহের এ পদার্থ কোনো জীবিতের গায়ে লাগতে নেই। লাগলেই মারা যেতে পারে জীবিত পিঁপড়াও!
পিঁপড়াদের রয়েছে রাষ্ট্র ও প্রশাসন। রয়েছে সেনাবাহিনী। সেনা পিঁপড়ারা নানা ইউনিটে বিভক্ত হয়ে খাদ্যের তালাশ করে। প্রয়োজনে দলবেঁধে আক্রমণ করে অন্যকে । চোখ যদিও নেই, তবুও নিজস্ব সচেতনতার অ্যান্টেনা দিয়ে তারা বুঝে নেয় কোথায় আছে খাবার? কোথায় আছে শত্রু বা মিত্র! কোথায় তাদের শিকার কিংবা কোন আস্তানায় লুকিয়ে আছে ঘাতক শিকারী! আহা! আমরা চোখ দিয়েও দেখতে পাই না! দেখিয়ে দিলেও দেখি না! আমরা পারি না নিজের ভেতরে তৈরী করতে কোনো এ্যনটেনা!
কর্মী পিঁপড়ারা খাবারের তালাশে বের হয়। একটি , দুইটি নয়; সাধারণত দুই লক্ষের অধিক পিঁপড়া এক সাথে পথে নামে। তাদেরকে অবহেলা করে বড় বড় পোকা। খেয়ে ফেলতে চায়। পিঁপড়াদের তখনই শক্তি প্রদর্শনের সময়। কোথায় তাদের শক্তি? তাদের শক্তি নিজেদের ঐক্যে। সম্মিলিতভাবে তারা আক্রমণ করে মেরে ফেলে সেই দাম্ভিককে, যে শক্তির জোরে এসেছিলো তাদের মেরে ফেলতে! তাকে তারা খণ্ড খণ্ড করে ফেলে। পিঠে করে নিজেদের ঘরে নিয়ে যায়।
দুই ইঞ্চির মত লম্বা এক মাকড়সা একটি পিঁপড়ার জন্য ডায়নোসরের সমান। সে মুহূর্তেই দশটি পিঁপড়াকে মেরে ফেলতে পারে। কিন্তু ঐক্যবদ্ধ পিঁপড়েদল মাত্র দশ মিনিটের মধ্যে তাকে টুকরো টুকরো করে কেটে নিয়ে আসতে পারে নিজেদের ডেরায়। এমনকি যে জায়গায় তারা মাকড়সাটিকে আক্রমণ করেছিলো সেখানে কোন কিছুর চিহ্ন অবধি রাখে না।
খাদ্যের দায়িত্বে নিয়োজিত পিঁপড়ারা যখন শিকার নিয়ে ঘরে ফিরে, তখন অন্য প্রজাতির পিঁপড়ারা তাদের হামলা করে। তেড়ে আসে নানা পোকা-মাকড়। সেনাসদস্য পিঁপড়ারা তখন বিশাল লম্বা লাইন করে দু‘পাশে দাঁড়ায়। তারা প্রস্তুত থাকে যে কোনো আক্রমণ প্রতিহত করবে বলে! যারা খাবারের ময়দানে কাজ করছে, যে কোন মূল্যে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সেনাপিঁপড়াদের মাঝ দিয়ে কর্মী পিঁপড়াগুলো শিকারের কাটা অংশগুলো নিয়ে যাওয়া আসা করতে থাকে।
পিঁপড়াদের ঘরে জড়ো হয় বড় আকারের অনেক খাবার। স্তূপ হয়ে যায়। সেগুলো নিয়ে কাজ করে আরেকদল পিঁপড়া। টুকরোগুলোকে তারা চূর্ণবিচূর্ণ করে সেখান থেকে বের করে এক ধরণের রস । সেই রস পান করে পিঁপড়া শিশুরা, কলোনির অন্য সবাই আর পিঁপড়ারাজ্যের রাজা। কিন্তু পিঁপড়ারাজ্যে রাজা তো নেই, থাকে রাণী! সাধারণত পিঁপড়ার জীবনকাল ২৮ বছর। তবে রাণী পিঁপড়া ৩০ বছরেরও অধিক সময় পর্যন্ত বাঁচতে পারে। এই সময়ে সে জন্ম দেয় কয়েক লক্ষ পিঁপড়াসন্তান!
সাধারণত বসন্তকালে কলোনিতে জন্মায় কিছু ডানাওয়ালা পুরুষ আর স্ত্রী পিঁপড়া। এরা একসময় বাসার বাইরে উড়ে আসে ঝাঁক বেঁধে, মিলনের প্রয়োজনে। স্ত্রী পিঁপড়া ডিম দেবে বলে নতুন এক কলোনির সূচনা করে। তার প্রথম প্রজন্মের সন্তানরা সাধারণত হয় স্ত্রী শ্রমিক। এরা বাসা বানায়, খাবার তালাশ করে, নতুন সন্তানদের দেখাশোনা করে । এরা হয় বন্ধ্যা এবং এ কাজে শ্রমিক ও সেনা হিসেবে ধীরে ধীরে যুক্ত হয় আরো বন্ধ্যা স্ত্রী ও বন্ধ্যা পুরুষ পিঁপড়েরা।
স্ত্রী বা রাণী পিঁপড়ে, পুরুষ ও শ্রমিক পিঁপড়ে মিলে পিঁপড়েকলোনি। সবার উপরে স্ত্রী বা রাণী পিঁপড়ার মর্যাদা। সে ঘরেই থাকে কিছু পুরুষ পিঁপড়াদেরকে নিয়ে। পুরুষদের একমাত্র কাজ তার সাথে মিলন। মিলনের কিছুদিন পরেই পুরুষগুলো মারা যায়। থাকে শুধু রাণী আর তার আধিপত্য। অগণিত সন্তান-সন্ততি! পিঁপড়াকলোনি এক জায়গায় পড়ে থাকে না। কোনো জায়গায় যখনই তারা শিকার করে ফেলে এবং পরবর্তী খাবারের সন্ধান পায় না, সেখানে তারা আর থাকে না, অন্য কোথাও চলে যায়।
তারা মূলত বসতিবদল করে রাতের বেলা। বিশাল লম্বা লাইন ধরে এগিয়ে যায়। সৈন্য পিঁপড়ারা সজাগ পাহারা দেয় দুই দিকে। কিছু পিঁপড়া থাকে আগে । তারা দেখে সামনের পথে কোনো বিপদ আছে কি না! তাদেরও আগে থাকে আরো কিছু পিঁপড়ে। তারা দেখে , কোন জায়গা বসবাসের উপযুক্ত! পথে পথে তারা রাসায়নিক পদার্থ ছিটিয়ে এগিয়ে যায়। এরই মাঝ দিয়ে অন্য পিঁপড়ারা রাণী পিঁপড়াকে বহন করে নিয়ে যায়, সাথে থাকে তার ডিম আর অগণিত লার্ভা। পিঁপড়াদের আছে বাইশ হাজারের অধিক প্রজাতি। তাদের নিয়ে ব্যাপক আলাপের জন্য বিশাল গ্রন্থও যথেষ্ট নয়।
একদল পিঁপড়া কৃষিবিদ। ধরা যাক লিফ কাটার পিঁপড়েদের কথা । তারা তাদের ধারালো দাঁত দিয়ে পাতা কেটে আবাসস্থলে নিয়ে যায়। এরপর সেই পাতা থেকে অনেকটা ব্যাঙের ছাতার মত ফাঙ্গাস এর চাষ করে। ফলে এদের আরেক নাম ‘ফাঙ্গাস ফার্মার’। খুব ব্যস্ত থাকে তারা। ছোটাছুটি করে খুব বেশি। কিছু পিঁপড়া কাচির মতো কাটতে থাকে গাছের পাতা। তাদের দাঁত হয় খুব ধারালো। দাঁতের ম্যান্ডিবল নামের অংশটি সেকেন্ডে এক হাজার বারের চেয়ে বেশি কম্পন দেয় । যে কোনো গাছের পাতাকে কুচি কুচি করা কোনো ব্যাপারই নয় তাদের কাছে।
তারা কাটে আর অন্যরা কাটা পাতা নিয়ে কলোনিতে যায়। একদল সেগুলোকে মাছির কবল থেকে পাহারা দেয়। আরেকদল সেগুলোকে নিয়ে যায় মাটির নিচে, যারা পচা পাতা থেকে সার তৈরী করতে জানে। তারা পাতার কাটা টুকরোগুলো দিয়ে বানায় মণ্ড। তাতে নিজেদের দেহ থেকে ছড়িয়ে দেয় এক ধরণের রস। সেগুলো সারের কাজ করে। যার ফলে জন্ম নেয় একধরণের ফাঙ্গাস। ফাঙ্গাসের যাকে সুস্বাদু খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে রাণী ও অন্য পিঁপড়েরা।
এই পিঁপড়াদের কলোনি মাটির নিচে , বড় জায়গা নিয়ে তৈরী হয়। বাসা বানাবার সময় রাখা হয় অনেকগুলো প্রবেশপথ। একেক বাসায় থাকে শতশত কক্ষ। সেখানে চাষ করা হয় ফাঙ্গাস! রাণী ডিম দেয়। একেবারে ছোট পিঁপড়ারা সেগুলো পরিষ্কার করে। ঘরদোর সাফ রাখা তাদের দায়িত্ব। লার্ভাদের খাওয়ানোও তাদের কাজ!
পুরনো ফাঙ্গাস আর ময়লা কলোনিতে জমে যায়। একদল পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে এ জন্য কাজ করতে হয়। পুরনো ফাঙ্গাস ও ময়লাকে তারা কলোনি থেকে অনেক দূরে নিয়ে যায়। মাটির উপরে নিয়ে তার স্তুপ বানায়। এই কাজে যারা নিয়োজিত, তাদের কাছে ভিড়ে না কৃষক পিঁপড়ারা। কারণ তারা জীবাণু আর অসুখ বহন করে। সেই জীবাণু কৃষক পিঁপড়াদের মধ্যে ছড়ালে ফাঙ্গাসে তা ছড়াতে পারে। যা গোটা কলোনির খাবার! যার উপর টিকে থাকে সবার জীবন! পিঁপড়াদের প্রতিটি প্রজাতির জীবন ও কাজে আমরা দেখবো এমনই বৈচিত্র ও শৃঙ্খলা।
তাদের কিছু সাধারণ অভ্যাস রয়েছে। যা যে কেউ লক্ষ্য করবেন। দুটি পিঁপড়া এক সাথে হলে অল্প সময়ের জন্য হলেও দাঁড়ায়। একজন আরেকজনের খোঁজ-খবর নেয়। কঠিন পরিস্থিতিতেও কাজটি করতে তারা ভুলে না। আমরা সহজ ও স্বাভাবিক পরিস্থিতিতেও একজন আরেকজনকে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে ভুলে যাই! খোঁজখবর নিতে পারি না এমনকি তাদেরও, যাদের খোঁজখবর না নিলে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে!
পিঁপড়াদের অবহেলা করতে নেই। সংখ্যায় তারা কল্পনাতীত।পৃথিবীতে মানুষের তুলনায় পিঁপড়ার সংখ্যা দশ লাখ গুণ বেশি। দুনিয়ার প্রায় সাত শ কোটি মানুষ আছে। তাদের সাথে যদি দুনিয়ার সকল পিঁপড়ার ওজন করা হয়, তাহলে মানুষ ও পিঁপড়ার ওজন হবে সমান!
পিঁপড়ারা বাস করে মানুষের মতো সামাজিকভাবে। তারা খাদ্য উৎপাদন করে, শিকার করে এবং খাদ্য মজুদ রাখে মানুষের মতো। তারা কর্মী এবং দায়িত্বশীল। নিজেদের জীবনকে তারা শৃঙ্খলার হাত দিয়ে সাজিয়েছে। তাদের আছে ভাষা।তাদের নাগরিকরা কখনো গাফিল থাকে না আপন দায়িত্বের প্রশ্নে। তাদের কলোনি ও রাজ্যের প্রধান কখনো উদাসীন থাকে না নাগরিকদের প্রতি।
সেই দায়িত্ব ও সচেতনতার উল্লেখ রয়েছে মহাগ্রন্থ আল কুরআনে। আল্লাহ পাক জানান, ‘যখন সুলাইমান আ. এবং তার বাহিনী পিঁপড়ার উপত্যকায় পৌঁছল তখন একটি নারী পিঁপড়া বলল, হে পিঁপড়ারা! তোমাদের গর্তে প্রবেশ কর। এমন যেন না হয়, সুলাইমান এবং তার সৈন্যরা তোমাদের পিষে ফেলবে আর তোমরা তা টেরও পাবে না। ’ (সূরা নামল : ১৮)
পিঁপড়ারাজ্যের দায়িত্বশীল সম্মিলিত বিপদের প্রতি খোলা রেখেছিলো চোখ-কান । সবার সুরক্ষায় তার ছিলো সচেতনতা। সে দেখছিলো কী ঘটে চলছে এবং তার সম্ভাব্য ক্ষতি কী হতে পারে! তার উদ্বেগ শুধু নিজেকে নিয়ে নয়, সবাইকে নিয়ে! সে কেবল নিজের বাঁচার উপায় নিয়ে ভাবেনি, সবাইকে বাঁচিয়ে নিজে চেয়েছে বাঁচতে!
পিঁপড়ার জীবন ও কাজ আমাদের ক্ষতি করে না, তা নয়। তবে এর মধ্যে রয়েছে আমাদের অনেক উপকার। এমনকি প্রাকৃতিক ভারসাম্যেও রয়েছে তার ভূমিকা। চীনের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, বায়ু ও জলপ্রবাহ এবং জৈব পদার্থ বাড়ানোর মাধ্যমে মাটির উপকারিতা বাড়ায় পিঁপড়া। একই সঙ্গে মাটিতে বাসা বাঁধার সময় সে আশপাশে যে স্তূপ বা ঢিবি বানায়, মাটির পানি ধরে রাখার ক্ষেত্রেও তা সহায়ক ভূমিকা রাখে।
পিঁপড়েকে অবহেলা করি কীভাবে? পায়ের তলে তাকে কীভাবে পিষে মারি যখন-তখন? আল্লাহ তায়ালা অপ্রয়োজনে তাদের মারতে নিষেধ করেছেন।
হাদিসে আছে, একবার একটি গাছের নিচে একজন নবীকে পিঁপড়া কামড় দিলে তিনি গর্তসহ পিঁপড়ার দল পুড়িয়ে ফেলেন। তখন আল্লাহ তাকে ওহির মাধ্যমে জানালেন, ‘তোমাকে একটি পিঁপড়া কামড় দিল, তুমি এমন একটি জাতিকে পুড়িয়ে মারলে, যারা (আমার) তসবিহ পাঠ করত? তুমি মারবেই যদি একটিই মারলে না কেন, যে তোমাকে কামড় দিয়েছিল।’ (মুসলিম : ২২৪১)
হ্যাঁ, পিঁপড়ারা বহুমুখী কাজের ব্যস্ততার মধ্যেও মহান আল্লাহর তাসবিহপাঠ করে। সে পরম প্রভুকে ভুলে না। কিন্তু আমি যে ভুলে যাই! আমরা যে ভুলে যাই!
-এএ