রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


করোনার ভারতীয় ধরনে ফাইজারের টিকার কার্যকারিতা কম

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: করোনার ভারতীয় বা ডেল্টা ধরনে ফাইজারের টিকার কার্যকারিতা কম বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে। ফাইজার–বায়োএনটেকের টিকা নেয়া ব্যক্তির দেহে করোনা ভাইরাসের মূল ধরনের বিরুদ্ধে যে মাত্রায় অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, তার তুলনায় ভাইরাসটির ডেল্টা ধরনের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডির মাত্রা পাঁচ ভাগের এক ভাগের কম হয়।

বিশ্বখ্যাত ল্যানসেট সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

টিকা গ্রহণের ফলে শরীরে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, তা দেহে করোনা ভাইরাস ঢুকলে ওই ভাইরাসকে শনাক্ত করে নিষ্ক্রিয় করে। গবেষণায় দেখা গেছে, টিকাগ্রহীতাদের বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ফাইজারের টিকা থেকে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডির এই কার্যক্ষমতা কমতে থাকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গেও তার কার্যক্ষমতা কমে যায়। এসব পর্যবেক্ষণ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের সুরক্ষায় বুস্টার ডোজ দেওয়ার পক্ষের যুক্তিকে জোরালো করছে।

গবেষণার এই ফল যুক্তরাজ্যে টিকার দুই ডোজের মধ্যে সময়ের ব্যবধান কমিয়ে আনার বর্তমান পরিকল্পনাকে সমর্থন করছে। যুক্তরাজ্য কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি দেখতে পেয়েছে, ফাইজারের টিকাগ্রহীতাদের মধ্যে আগে যুক্তরাজ্যের কেন্টে প্রথম দেখা দেওয়া করোনা ভাইরাসের বি. ১.১.৭ (আলফা) ধরনের বিরুদ্ধে যে মাত্রায় অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছিল, ডেল্টা ধরন বি.১.৬১৭.২ (ভারতীয় ধরন) এর বিরুদ্ধে সেই মাত্রায় হচ্ছে না। এর ভিত্তিতে তারা টিকার দুই ডোজ দেওয়ার সময়ের ব্যবধান কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

যুক্তরাজ্যের ফ্রান্সিস ক্রিক ইনস্টিটিউটের গবেষকেরা এই গবেষণায় নেতৃত্ব দেন। গবেষকেরা বলছেন, শুধু অ্যান্টিবডির মাত্রাই টিকার কার্যকারিতার প্রমাণ দেয় না। এ বিষয়ে আরও গবেষণা দরকার। করোনাভাইরাস নিষ্ক্রিয়কারী অ্যান্টিবডির স্বল্প মাত্রাই কোভিড–১৯–এর বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে পারে।

গবেষণায় ফাইজারের টিকার দুই ডোজ নেওয়া ২৫০ জন স্বাস্থ্যবান ব্যক্তির রক্তে অ্যান্টিবডির মাত্রা বিশ্লেষণ করা হয়। এই ব্যক্তিদের টিকার দুই ডোজ গ্রহণের মধ্যে সময়ের ব্যবধান ছিল তিন মাস পর্যন্ত।

সার্স–কোভ–২–এর পাঁচটি ধরনের ওপর গবেষণাটি করা হয়। ভাইরাস মানুষের শরীরের কোষে প্রবেশের ক্ষেত্রে এই অ্যান্টিবডি কতটা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে, তা পরীক্ষা করে দেখা হয়। এরপর তারা সব ভেরিয়েন্টের ক্ষেত্রে এই ‘নিউট্রালাইজিং অ্যান্টিবডির’ কনসেনট্রেশনের তুলনা করেন।

উচ্চমাত্রায় অ্যান্টিবডি কনসেনট্রেশন টিকার কার্যকারিতা এবং কোভিড–১৯–এর বিরুদ্ধে সুরক্ষার ইঙ্গিত দেয় বলে বিগত ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা গেছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, ফাইজারের দুই ডোজ টিকাগ্রহীতাদের রক্তে নিউট্রালাইজিং অ্যান্টিবডির মাত্রা ভাইরাসের মূল ধরনের তুলনায় বি.১.৬১৭.২ ধরনের ক্ষেত্রে পাঁচ ভাগের এক ভাগের চেয়ে কম। যারা মাত্র এক ডোজ নিয়েছেন, তাদের অ্যান্টিবডি রেসপন্স আরও কম।

ফাইজারের টিকার এক ডোজ নেয়ার পর ৭৯ শতাংশ মানুষের শরীরে ভাইরাসটির মূল ধরনের বিরুদ্ধে নিউট্রালাইজিং অ্যান্টিবডি রেসপন্স দেখা যায়। সেখানে বি.১.১.৭ ধরনের বিরুদ্ধে তা নেমে আসে ৫০ শতাংশে, বি.১.৬১৭.২ ধরনের বিরুদ্ধে তা কমে আসে ৩২ শতাংশে এবং বি.১.৩৫১ বা বেটা ভেরিয়েন্টের (দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম দেখা দেয়) ক্ষেত্রে তা নেমে আসে ২৫ শতাংশে।

প্রতিটি ধরনের ক্ষেত্রেই বয়সের সঙ্গে সঙ্গে অ্যান্টিবডির মাত্রা কম হলেও নারী– পুরুষ বা শরীরের ওজনভেদে কোনো তারতম্য দেখা যায়নি।

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন হসপিটালস এনএইচএস ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের (ইউসিএলএইচ) সংক্রামক ব্যাধি পরামর্শক এমা ওয়াল বলেছেন, এই ভাইরাস আমাদের কাছে আসতে আরও কিছুটা সময় নেবে। তাই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে এবং চটপটে হতে হবে।

মহামারির মধ্যে দ্রুত যাতে পরিবর্তিত ঝুঁকির বিষয়ে তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করা যায় এবং সুরক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়, সে বিষয় মাথায় রেখে এই গবেষণা করা হয় বলে জানান তিনি।

গবেষকদের মতে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, করোনায় আক্রান্ত বহুসংখ্যক মানুষকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হওয়া থেকে রক্ষা করেছে টিকা।

গবেষণায় সম্ভাব্য স্বল্প সময়ের মধ্যে টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া এবং যাদের এসব নতুন ভেরিয়েন্টের বিরুদ্ধে প্রতিরোধক্ষমতা বেশি নয়, তাদের বুস্টার ডোজ দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

-এএ


সম্পর্কিত খবর