রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


যুবকদের ভালো খাদ্য তুলে দিতে পারলে টিকটকে আসক্ত হবে না: শাহ ইফতেখার তারিক

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

বর্তমান সময়ের তরুণ-তরুণীদের কাছে সবচেয়ে আলোচিত অ্যাপের নাম ‘টিকটক’। যাতে ভিডিও তৈরি করার মধ্য দিয়ে রাতারাতি জনপ্রিয় হওয়ার নেশায় মেতে  ওঠে একদল তরুণ-তরুণী। আর তাদের সঙ্গে পিছিয়ে নেই আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা, এমনকি শোবিজের তারকারাও। নতুন প্রজন্মের প্রায় অনেকেরই অ্যাকাউন্ট রয়েছে টিকটকে। নানা গানের সংলাপ ও সংগীতে নিজেদের ঠোট মিলাচ্ছেন তারা। বাদ পড়েনি ইসলামিক আইটেম কিংবা ওয়াজ মাহফিলও। ইসলামী সঙ্গীতও আছে তাতে। টিকটক, ভিগো বা লাইকি বর্তমান সংস্কৃতিতে ঠিক কতখানি প্রভাব ফেলছে? কতটুকু অপসংস্কৃতি বিস্তার করছে এই চীনা বিনোদন-তা নিয়ে কথা বলেছেন বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব শাহ ইফতেখার তারিক। তার সঙ্গে আলাপ করেছেন আওয়ার ইসলামের নিউজরুম এডিটর মোস্তফা ওয়াদুদ।। 


-সবকিছু বাদ দিয়ে সোশ্যাল প্রযুক্তিতে কেনো আসক্ত হচ্ছে যুব সমাজ?

শাহ ইফতেখার তারিক: বিশ্ব এখন প্রযুক্তির যুগ। প্রযুক্তির সময়ে প্রযুক্তি আসবেই-এটা স্বাভাবিক। কোন রকমের দেয়াল তুলে এই প্রযুক্তিকে আটকে রাখা যাবে না। যুব সমাজকে যদি আমরা দায়িত্ববোধ জাগিয়ে তুলতে না পারি, তাদেরকে সত্যিকারের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে না পারি, অথবা তাদের কোনো কাজে না লাগিয়ে এ জাতীয় বিনোদনে সামনে তুলে ধরি, তাহলে যুব সমাজের মাঝে অবক্ষয় নেমে আসবেই। তারা সোশ্যাল প্রযুক্তিতে আসক্ত হবেই।

-তাদেরকে এর থেকে ফেরানোর জন্য করণীয় কী?

শাহ ইফতেখার তারিক: এক্ষেত্রে যারা দেশের কর্তাব্যক্তি বা রাষ্ট্রপক্ষ আছেন তারা যদি তাদের কাজে লাগাতে পারেন। সময়োপযোগী কোনো বিষয় ধরিয়ে দিতে পারেন তাহলে যুবসমাজ এ ধরনের টিকটক, লাইকি কিংবা স্ন্যাপচ্যাটের মত সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্ত হবে না। মোটকথা রাষ্ট্র যদি তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করতো, তাহলে তারা এসবের প্রতি এতটা ধাবিত হতো না।

-ব্যক্তিগতভাবে কী কোনো উদ্যোগ নেয়া যায় না?

শাহ ইফতেখার তারিক: অবশ্যই। এক্ষেত্রে আমি শুধু রাষ্ট্রকেই দোষারোপ করছি না। বরং সমাজে যারা ধর্মীয় নেতা আছেন, তারা যদি যুবসমাজকে ট্রেস করতে ব্যর্থ হোন, যুবসমাজের মাঝে প্রকৃত দায়িত্ববোধ জাগিয়ে তুলতে না পারেন, তাহলে তো এরকম হবেই। সুতরাং অবক্ষয়ের জন্য শুধু যুবসমাজ আর রাষ্ট্রকে দোষারোপ করে লাভ হবে না। ব্যক্তিগতভাবেও উদ্যোগী হতে হবে।

- এসবের বিকল্প ব্যবস্থা কী নেয়া যেতে পারে?

শাহ ইফতেখার তারিক: বিকল্প ব্যবস্থা অনেক আছে। যেমন মনে করেন, বাংলাদেশের শুরুর সময় একটা নিয়ম ছিল যে, দেশের ১৮ বছর বয়সী সকল যুবকদের ন্যূনতম সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে হবে। যদি সেই বিষয়টি এখনও চালু থাকতো, তাহলে দেশের সকল যুবকরা রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষার কাজে নিজেদের ব্যবহার করতে পারতো। রাষ্ট্রও তাদের মাধ্যমে ফায়দা  নিতে নিতে পারতো। কিন্তু এখনতো যুব সমাজের কাছে কোন কাজ নাই। কাজেই তারা কী করবে? বেকারও বসে থাকতে পারে না। তাদেরকে কাজ দিতে হবে। না হয় এমন বিষাক্ত জিনিসের প্রতিই তারা আসক্ত হবেন।

-টিকটকের মতো এসব সোশ্যাল মিডিয়া বন্ধ করলে কী সমাধান আসতে পারে বরেল মনে করেন?

শাহ ইফতেখার তারিক: আসলে শুধু বন্ধ করলেই সমাধান বেরিয়ে আসবে বিষয়টা এমন নয়। আবার এসব বন্ধ না করে শুধু গ্রেফতারের মাধ্যমেও এসব থেকে মুক্তি লাভ সম্ভব নয়। শুধু একজন ‘টিকটক হৃদয়’কে গ্রেফতার করে এই বিষয়টিকে বন্ধ করা যাবে না। কেননা এখন ঘরে ঘরে এখন লক্ষ ‘হৃদয়’ তৈরি হয়ে গিয়েছে। সমস্যার সমাধান করতে হলে গ্রেফতার কিংবা টিকটক বন্ধ করলেই সমাধান সম্ভব নয়।

আপনি দেখুন, বাচ্চারা এখন যে গেমস খেলে, এই গেমস কেন খেলবে না তারা? যখন শিশুপার্কগুলো বন্ধ করে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে তাতে। শিশুদের জন্য পার্কগুলোকে খেলার মাঠ হিসেবে উন্মুক্ত না করে বাণিজ্যকরণ করছে? তখনতো তারা মাঠে খেলতে না পেরে ডিভাইসে খেলবেই। আর ডিভাইসের এসব গেমসের প্রতি আসক্ত হয়ে উঠে।

অতএব এসব বন্ধের পাশাপাশি তাদেরকে ভালো খাদ্য তুলে দিতে হবে। আমরা যদি তাদের হাতে ভালো খাদ্য যদি তুলে দিতে পারি, তাহলে তারা এ সকল অশ্লীল খাদ্য থেকে ফিরে আসবে।

এমডব্লিউ/


সম্পর্কিত খবর