মুসা আল হাফিজ
লেখক, গবেষক
আমাদের দেহের ভেতরে যে দুনিয়া, সে ছোট নয়। প্রতিদিন আমাদের দেহে হার্টের সাহায্যে ১২০০ মাইল পথ ভ্রমণ করে রক্ত!
আমাদের দেহে পড়ে আছে কর্মমুখর এক পৃথিবী। চলছে কাজ, চলছে উৎপাদন। হার্ট প্রতি মিনিটে গড়ে রক্ত পাম্প করে ১০০ বার, ঘণ্টায় ৬০০০ বার, দিনে ১৪৪,০০০ বার।
বছরে পাঁচ কোটি পচিশ লক্ষ ষাট হাজার বার! হার্ট থেকে সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ে ধমনী। যেগুলোকে একের পর এক লম্বাভাবে সাজালে দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ষাট হাজার মাইল। এর মধ্য দিয়ে হার্ট প্রায় ১৫ লাখ ব্যারেল রক্ত সঞ্চালন করে থাকে।
প্রতিদিন কাজের মাধ্যমে সে উৎপাদন করে এনার্জি । একদিনের এনার্জি দিয়ে একটি ভারি ট্টাক অতিক্রম করতে পারবে ২০ মাইল পথ। একজীবনের এনার্জি দিয়ে গাড়ি চালিয়ে চাঁদে গিয়ে আবার ফিরে আসা যাবে। তোমার সমীপে সেজদা না দিয়ে কী উপায় আমার!
আমার শরীরে আছে প্রায় ১০০ ট্রিলিয়ন (১০০০০০০০০০০০০০০ কোটি) কোষ । সকল কোষেই প্রয়োজন রক্ত সরবরাহ। হার্টের মাধ্যমে প্রতিদিন এক হাজার বার করে প্রতিটি কোষে রক্ত সরবরাহ করাচ্ছো তুমি। এভাবেই চলছে মাসের পর মাস! বছরের পর বছর!
আমি কী পৃথিবী সমান সম্পদ দিয়ে জীবনভর এই রক্ত সরবরাহ জারি রাখতে পারতাম? কেউ পারতো এর ব্যবস্থা করে দিতে?
তুমি সেটা করছো, করেই চলছো। প্রতিটি কোষে প্রতি বারের রক্ত সরবরাহের কৃতজ্ঞতা আমার আদায় করা উচিত। কিন্তু দশ লক্ষ কোটি কোষে মাত্র একদিনে এক হাজার বার করে রক্ত সরবরাহের কৃতজ্ঞতা আদায়ের জন্যে আমার গোটা জীবন যথেষ্ট নয়।
আমার তাহলে সেজদা ছাড়া কী করার আছে?
ফুসফুস শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে গৃহিত বাতাসের শুদ্ধ অংশ বাছাই করে, গ্রহণ করে এবং তাকে ছড়িয়ে দেয় রক্তে। ফুসফুসে জড়ো হওয়া ৭০ শতাংশ বর্জ্য নি:শ্বাসের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয় বাইরে।
হার্ট একটি পাম্প মেশিন। দূষিত রক্ত সে ফুসফুসে পাঠায়। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফুসফুস তাকে বিশুদ্ধ করে। তারপর সেই রক্ত ছড়িয়ে পড়ে দেহরাজ্যে। ফুসফুস থেকে দেহরাজ্যে ছড়িয়ে আছে ৩৩ কোটি সড়ক বা ক্ষুদ্রতম রক্তনালী। যাকে বলে ক্যাপিলারি। প্রতিটি ক্যাপিলারির সাথে যুক্ত আছে ফুসফুসের একেক ক্ষুদ্রাংশ বা এলভেওলি। এর মানে ফুসফুসে সক্রিয় ক্ষুদ্রাংশ বা এলভেওলি আছে প্রায় ৩৩ কোটি। তারা কাজ করছে প্রত্যহ! আর আমি বেঁচে আছি।
আমি বেঁচে আছি আর প্রতি মিনিটে নি:শ্বাসের সাথে গ্রহণ করছি প্রায় ৫৭ লিটার বাতাস! প্রতি ঘন্টায় নি:শ্বাসের সাথে ত্যাগ করছি প্রায় ১৭ মি.লি. পানি। এর পেছনে সক্রিয় আছে দেহরাজ্যের বিশাল ও বিস্তীর্ণ শৃঙ্খলা। যে শৃঙ্খলা ও কার্যক্রম চালিত হচ্ছে তোমারই নিয়ন্ত্রণে। যে তোমাকে ভুলে থেকে আমি প্রত্যহ বাড়াই অকৃতজ্ঞতার দায়। প্রতি সেকেন্ডে দায় বাড়ে। প্রতি নি:শ্বাসে দায় বাড়ে। আমি সেজদায় নিবেদিত না হয়ে কী করবো অতএব?
এমডব্লিউ/