আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: দেশে প্রথমবারের মত ভয়ঙ্কর নতুন মাদক এলএসডি (লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইথ্যালামাইড) জব্দ করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাফিজুর রহমানের মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে ‘লাস্ট স্টেট অব ড্রাগ’টির সন্ধান পায় ঢাকা মহানগর পুলিশ। এই মাদক বিক্রির সঙ্গে জড়িত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। গ্রেপ্তারের পর গোয়েন্দারা বলছেন, ফেসবুকে দুটি গোপন গ্রুপ খুলে এই মরণ নেশার ব্যবসা করছিল তারা। গ্রুপ দুটিতে সদস্য সংখ্যা এক হাজারের বেশি।
ঈদের পরদিন ১৫ মে কার্জন হল এলাকায় তিন বন্ধুর সঙ্গে মাদক সেবন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্র হাফিজুর রহমান। এর প্রতিক্রিয়া শুরু হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে এক ডাব বিক্রেতার ভ্যানে রাখা দা নিয়ে নিজের গলায় আঘাত করেন তিনি। কিছুক্ষণ পর হাসপাতালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন হাফিজুর।
এই মৃত্যুর ঘটনার তদন্তে নেমে রাজধানীর ধানমন্ডি ও লালমাটিয়া এলাকা থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের রমনা বিভাগ। তারা হলো- নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর ছাত্র সাদমান সাকিব লুপল, আসহাব ওয়াদুদ তুর্জ এবং ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র আদিব আশরাফ।
এই তিনজনই প্রতিষ্ঠিত পরিবারের সন্তান। তাদের কাছ থেকে এলএসডির দুইশটি ব্লট জব্দ করা হয়েছে, যার মূল্য ছয় লাখ টাকা। সাধারণত ব্লটার পেপার বা নকশা করা বিশেষ কাগজে এলএসডি মিশিয়ে বিক্রি করা হয়ে থাকে। এ ছাড়া ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল তরল বা কিউব আকারেও পাওয়া যায়।
পুলিশ বলেন, এই মাদক সেবনের ফলে পিছনের অতীতের স্মৃতি মনে পড়ে যায়। অনেক সময় মনে হয় যে সে ট্রেন ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে পারে। অনেক সময় আবার উগ্র আচরণ করতে পারে।
গোয়েন্দারা বলছেন, প্রায় এক বছর ধরে ফেসবুকে ‘আপনার আব্বা’ এবং ‘বেটার ব্রউরি অ্যান্ড বিয়ন্ড’ নামে দুটি গ্রুপের মাধ্যমে এলএসডির ব্যবসা করছিল গ্রেপ্তার তিন তরুণ। এক হাজারের বেশি সদস্যের গ্রুপ দুটি পরিচালনা করেন লুপল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর ছাত্রত্ব বাতিল হওয়ার পর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন তিনি।
পুলিশ আরও বলেন, আমরা তিনজনকে গ্রেফতার করেছি তাদের আইনের আওতায় আমরা নিয়ে এসেছি এবং সামনে যে অভিযান আছে সেটাতেও ভালোভাবে তথ্য বের করার চেষ্টা করব।
গ্রেপ্তার তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে গোয়েন্দা পুলিশ জানিয়েছে, টেলিগ্রাম অ্যাপসের মাধ্যমে যোগাযোগ করে পেপ্যাল মেইলের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে নেদারল্যান্ডস থেকে এলএসডি আমদানি করা হয়। পরে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে মাদকটি গ্রহণ করত তারা।
তিনি আরও বলেন, এই মাদক কারা কারা ব্যবহার করে এগুলো আমরা আরও তথ্য নিয়ে দেখব। আর কারা বিক্রেতা আছে তাদেরকেও আমাদের সন্ধানে নিয়ে আসব। এগুলো বিষয় কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে।
খুবই শক্তিশালী এলএসডির ডোজগুলো সাধারণত মাইক্রোগ্রাম হিসেবে নেয়া হয়। এই মাদক উত্তেজক ও আনন্দদায়ক। মনের ওপরও এর প্রভাব রয়েছে। কখনো কখনো এর প্রভাবে ভীতিকর অনুভূতি তৈরি হয়, যাকে ব্যাড ট্রাপ বলা হয়।
-এটি