সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
চিকিৎসকরা বছরে দুইবারের বেশি বিদেশ যেতে পারবেন না ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে খুলনায় গেলো পরীক্ষামূলক ট্রেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস উইং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাম্যের ভিত্তিতে সংবিধান রচনার আহ্বান নেপালে ফের কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সৌদি আগামীকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনে প্রস্তাবনা পেশ করবে ইসলামী আন্দোলন ‘আল্লামা আতহার আলী রহ. জীবন, কর্ম, অবদান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আগামীকাল হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. : কে এই মহান ব্যক্তি হাজিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ধর্ম উপদেষ্টা মহানবীকে সা. নিয়ে কটূক্তি করলে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব পার্থের

বায়তুল মুকাদ্দাস মসজিদের মহাত্মা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতী রফিকুল ইসলাম আল মাদানী

মুসলিম ইতিহাসে একটি ঐতিহ্যবাহী মসজিদ বায়তুল মুকাদ্দাস। এর অপর নাম মসজিদুল আকসা। মসজিদুল আকসা অর্থ দূরবর্তী মসজিদ এবং বায়তুল মুকাদ্দাস অর্থ পবিত্র ঘর। এ মসজিদটি মুসলমানদের তৃতীয় পবিত্র স্থান। প্রথম পবিত্র স্থান হলাে মসজিদে হারাম বা পবিত্র কাবাঘর এবং দ্বিতীয়টি হলাে মসজিদে নববী। মহানবী স. মেরাজ গমনকালে প্রথমে মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসায় পৌঁছেন। ঐ মসজিদে বহু নবী রাসূল তার পেছনে দু'রাকআত নামায আদায় করেন। তিনি তাদের ইমামতি করে সাইয়্যেদুল মুরসালিন এর উজ্জ্বল ইতিহাস স্থাপন করেন।

এ পবিত্র মসজিদ থেকেই রাসূলুল্লাহ স. উর্ধাকাশে তথা মেরাজ গমন করেছিলেন। মহান প্রভু ঘােষণা করেন,“পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রি বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত- যার চারদিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি। (সূরা বণী ইসরাইল-১)” এই বিশ্বে প্রথম নির্মিত মসজিদ বায়তুল্লাহ মক্কা নগরীতে। আর দ্বিতীয় মসজিদটি হলাে বায়তুল মুকাদ্দাস জেরুজালেমে। পবিত্র কাবা শরীফ প্রতিষ্ঠার চল্লিশ বছর পর স্থাপিত হয় এই মসজিদুল আকসা। (সহীহ বুখারী) নির্ভরযােগ্য বর্ণনা মতে দুটি পবিত্র ঘরই হযরত আদম আ. এর মাধ্যমে স্থাপন করা হয়।

পবিত্র কাবাঘর হযরত ইবরাহীম আ. এবং মসজিদুল আকসা হযরত সুলাইমান আ. এর মাধ্যমে বিশেষভাবে সংস্কার করা হয়। প্রিয় নবী মুহাম্মদ স. ইসলামের সূচনা লগ্নে ষােল বা সতেরাে মাস ঐ মসজিদুল আকসার দিকে নামায আদায় করেছেন। পরবর্তীতে মহান আল্লাহর নির্দেশে মুসলমানদের কেবলা মক্কার দিকে পরিবর্তিত হয়। (বাক্কারাহ-১৪৪) এটি মুসলমানদের প্রথম কেবলা। মক্কা এবং মদিনার পর তৃতীয় পবিত্র স্থান। এক হাদীসের আলােকে এই মসজিদে নামায আদায় করলে সাধারণ মসজিদের তুলনায় পাচশত গুণ অধিক বিনিময় লাভ হবে। (বাযযার-৪১৪২, বায়হাকী-৪২১১ সহীহ)।

উল্লেখ্য, পবিত্র কাবাঘরে নামায আদায়ে এক লক্ষগুণ এবং মসজিদে নববীতে পঞ্চাশ হাজার গুণ বেশী বিনিময় লাভ হয়।

এই মসজিদ তিনটি ইসলামের শ্রেষ্ঠতম নিদর্শন। রাসূলে করিম স. মক্কার মসজিদুল হারাম, মদীনার মসজিদুন নববী ও বায়তুল মুকাদ্দাস মসজিদের উদ্দেশে সফরকে বিশেষভাবে সওয়াবের কাজ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যা অন্য কোনাে মসজিদ সম্পর্কে করেননি। (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)।

বায়তুল মুকাদ্দাস মসজিদ এবং তার আশপাশের এলাকা বহু নবীর স্মৃতিবিজরিত। তাদের সমাধিস্থল।

এ পবিত্র নাম শুধু একটি স্থানের সাথে জড়িত নয়। বরং এ নাম সব মুসলমানের ঈমান ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। ঐতিহাসিক ভাবেই এটি মুসলমানদের পবিত্র স্থান।

১৯৪৮ সালের বেলফোর ঘােষণার মাধ্যমে ফিলিস্তিনে অবৈধ ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এর পর বায়তুল মুকাদ্দাস মুসলমানদের হস্তচ্যুত হয়। ফলে যুগ যুগ ধরে ইসরায়েলি ইহুদি এবং ফিলিস্তিনি মুসলমানদের মধ্যে সংঘাত চলেই আসছে।

জেরুজালেমে নতুন করে ইহুদি বসতি স্থাপন এবং বায়তুল মুকাদ্দাস মসজিদে মুসল্লিদের উপর অমানবিক বর্বর হামলাকে কেন্দ্র করে একশত বছরের পুরনাে সংকট নতুনভাবে ভয়াবহ সংঘাতে রূপ নিয়েছে।

দুই পক্ষের হামলার দায় কার, তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলাে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি অবৈধ দখলদারিত্বের কারণেই এই সংঘাত চলে আসছে।

ইসরায়েল যেহেতু ফিলিস্তিনে দখলদারি ভূমিকায় রয়েছে সেহেতু তাদেরকেই সমঝােতায় আসতে হবে। ফিলিস্তিনের স্বাধিনতা মেনে নিয়ে প্রকৃত শান্তির পথ খুলে দিতে হবে। মুসলমানরা মসজিদটি দ্রুত ফিরে পাক-শান্তি প্রিয় বিশ্বমানবের এটা একান্ত প্রত্যাশা।

লেখক: কলামিস্ট, গবেষক ও মুহাদ্দিস ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ