আমিনুর রহমান হাসান
মানুষ সামাজিক জীব। সামাজিক জীবনযাপনে মানুষ একা থাকতে পারে না। জগৎসংসারে তাকেও সবার সাথে মিলেমিশে চলতে হয়। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে এমনভাবে সৃষ্টি করেছেন, সবকিছু একা করার যোগ্যতা বা শক্তি তিনি আমাদেরকে দেননি। একজনকে যেটা দিছেন অন্যজনকে সেটা দেননি। তাই জীবন চলার পথে আমরা পরস্পর একে অন্যের মুখাপেক্ষী। আমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ঔ ব্যাক্তি যে নিজেকে অন্যর উপকারে নিয়োজিত রাখতে পারে।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেন, ‘তোমরাই শ্রেষ্ট জাতি, মানবজাতির কল্যাণের জন্য তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করবে’। (সুরা আলে ইমরান, ১১০)।
মানুষের শ্রেষ্ঠ গুণগুলোর অন্যতম হলো পরোপকারী। রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন পরোপকারীর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। যা রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অহী লাভের হাদিস থেকে স্পষ্ট বুঝা যায়। নবীজি সাঃ এর উপর যখন ওহী অবতীর্ণ হলো, তখন তিনি হযরত খাদিজাতুল কুবরা রাদিআল্লাহু আনহার কাছে এসে বললেন, আমাকে কম্বল দিয়ে আবৃত করো। আমি আমার জীবনের আশঙ্কা করছি।
তখন খাদিজা রাদিআল্লাহু আনহা তাঁকে অভয় দিয়ে বললেন আল্লাহ পাক কখনো আপনার অমঙ্গল করবেন না। কারণ, আপনি আল্লাহর সৃষ্টির সেবা করেন, গরিব-দুঃখীর জন্য কাজ করেন, অসহায়-এতিমের ভার বহন করেন, তাদের কল্যাণের জন্য নিজেকে নিয়োজিত রাখেন।’ (বুখারি: ৪৫৭)।
ইসলাম সহানুভূতির ধর্ম। ইসলাম মানুষকে সহানুভূতির শিক্ষা দেয়। পরোপকারে ইসলামে অনেক উপকার রয়েছে। হাদিস শরীফে আছে, নবী করীম সাঃ ইরশাদ করেন, তোমার ভাইয়ের চেহারায় তাকিয়ে মুচকি হাসাও তোমার জন্যে একটি সদকা। সৎকাজের প্রতি আদেশ এবং অসৎকাজ থেকে বাধাপ্রদানও সদকা। পথ হারানো কাউকে সঠিক পথ দেখিয়ে দেয়াটাও তোমার জন্যে সদকা। দৃষ্টিশক্তি দুর্বল- এমন কাউকে সহযোগিতা করাও তোমার জন্যে সদকা। রাস্তা থেকে পাথর, কাটা আর হাড্ডি সরিয়ে দেওয়াও তোমার জন্যে সদকা। ভাইয়ের বালতিতে তোমার বালতি থেকে একটু পানি ঢেলে দেওয়াও তোমার জন্যে সদকা। (জামে তিরমিযী, হাদীস ১৯৫৬)।
ইসলাম ধর্মে সবধরনের ভালো কাজে রয়েছে মনাপূণ্য ও বিশেষ ফজিলত। পরোপকারে মানুষের নিজের কল্যাণ সাধিত হয়। পরোপকার মানুষকে সম্মানের চুড়ান্ত আসনে আসীন করে। রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অবশ্যই দান সাদকা মানুষের হায়াত বৃদ্ধি করে। অপমৃত্যু থেকে বাঁচায় এবং অহংকার দূর করে। (আল মুজামুল কাবীর, ১৩৫০৮)।
মানুষ একে অপরের সহযোগিতা ছাড়া চলতে পারে না। যে সমাজে পরোপকারীতা নেই সেখানে কোনো শান্তি নেই। পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা ও সম্মান শ্রদ্ধা নেই সেই সমাজে। একে অন্যকে সহায়তা করার মাধ্যমে সমাজে শান্তি পরস্পর ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সৃষ্টি হয়।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেন, ‘নিশ্চয়ই দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী, যে ক্ষেত্রে তাঁরা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান করে, তাঁদের প্রতিদান বর্ধিত করা হবে এবং তাঁদের জন্য রয়েছে সম্মানজননক প্রতিদান’। (সুরা হাদিদ, ১৮)।
রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যাক্তি কোনো মুমিনের জাগতিক সমস্যাগুলোর একটি সমাধান করে দেয়, আল্লাহ তায়ালা তাঁর আখেরাতের সংকটগুলোর একটি মোচন করবেন। যে ব্যাক্তি কোনো অভাবগ্রস্তের অভাব মোচনে সাহায্য করবে, আল্লাহ তাঁকে দুনিয়া ও আখেরাতে স্বাচ্ছন্দ্য দান করবেন। যে ব্যাক্তি কোনো মুসলমানের দোষ গোপন করবে, আল্লাহ তাঁর দুনিয়া ও আখেরাতে দোষ গোপন রাখবেন। আল্লাহ বান্দার সাহায্যে থাকেন, যতক্ষণ বান্দা তাঁর ভাইয়ের সাহায্যে নিয়োজিত থাকে’। (সহীহুল মুসলিম, ২৬৯৯)।
উপরোল্লিখিত কুরআনের আয়াত এবং হাদিসের মাধ্যমে প্রতীয়মান হয় যে, পরোপকার যেভাবে ব্যাক্তির জাগতিক জীবনে মর্যাদা বৃদ্ধি করে,
তেমনিভাবে পারলৌকিক জীবনের কল্যাণ সাধন করে। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে পরোপকারের মাধ্যমে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের তাউফীক দান করুন।
লেখক: আলেম, প্রাবন্ধিক
-এটি