আন্তর্জাতিক ডেস্ক: টানা ১১ দিনের আগ্রাসনের পর অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজা নিয়ন্ত্রণকারী স্বাধীনতাকামী সংগঠনের সাথে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে ইসরায়েল। শুক্রবার সকাল থেকে এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে।
যুদ্ধের এই অবসরে উভয় পক্ষই সময় পেয়েছে নিজেদের ক্ষয়ক্ষতির পরিসংখ্যান পর্যালোচনার।
যুদ্ধবিরতির পর থেকে গাজায় নতুন করে উদ্ধার অভিযান শুরু হয়েছে। টানা ইসরায়েলি বিমান হামলায় পরে থাকা ধ্বংসস্তুপ থেকে হতাহতদের উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করেছেন উদ্ধারকর্মীরা।
শুক্রবার গাজায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত বিবৃতি অনুসারে, ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধবিরতিতে উদ্ধার অভিযানে নতুন হতাহতদের উদ্ধারের পর নিহতের সংখ্যা বেড়ে দুই শ' ৪৮ জনে দাঁড়িয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৬৬ শিশু ও ৩৯ নারী রয়েছেন।
অপরদিকে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে আরো এক হাজার নয় শ' ৪৮ ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে জানানো হয়। এর মধ্যে ৫৬০ জনই শিশু।
অবশ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজায় আহতের সংখ্যাকে আরো বেশি উল্লেখ করেছে। সংস্থাটির মতে, অন্তত আট হাজার ছয় শ' ফিলিস্তিনি ইসরায়েলি হামলায় আহত হয়েছেন।
অপরদিকে, গাজায় আগ্রাসনের প্রতিবাদে অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড পশ্চিম তীরে বিক্ষোভ দমনে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর হামলায় আরো ২৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
অপরদিকে ইসরায়েল ভূখণ্ডে রকেট হামলায় এক সৈন্যসহ মোট ১২ জনের প্রাণহানী ঘটেছে। এছাড়া হামলায় আরো সাত শ' ৯৬ জন আহত হয়েছেন বলে খবরে জানা যায়।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর বিবৃতি অনুসারে, গাজা থেকে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে মোট চার হাজার তিন শ' ৬০টি রকেট নিক্ষেপ করা হয়। তবে এর বেশিরভাগই ইসরায়েলি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোমের মাধ্যমে ঠেকিয়ে দেয়া হয়েছে।
তবে ইসরায়েলি ট্যাক্স কর্তৃপক্ষ বলছে, দক্ষিণ ও মধ্য ইসরায়েলে রকেট হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত দুই হাজার ৬১টি বাড়ি এবং এক হাজার তিন শ' ৬৭টি গাড়ির জন্য ক্ষতিপূরণের আবেদন তারা পেয়েছেন।
ফিলিস্তিনি গৃহায়ন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, ইসরায়েলি হামলায় গাজায় মোট এক হাজার বাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস ও এক হাজার আট শ' বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জাতিসঙ্ঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক সমন্বয় দফতরের (ওসিএইচএ) তথ্য অনুসারে, গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে অন্তত ৯০ হাজার ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
অধিকৃত জেরুসালেমের শেখ জাররাহ মহল্লা থেকে ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করে ইহুদি বসতি স্থাপনে গত ২৫ এপ্রিল ইসরায়েলি আদালতের আদেশের জেরে ফিলিস্তিনিদের বিক্ষোভে পরপর কয়েক দফা মসজিদুল আকসায় হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। ৭ মে থেকে ১০ মে পর্যন্ত এই সকল হামলায় এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন বলে জাতিসঙ্ঘের মানবিক সাহায্য বিষয়ক দফতর ইউএনওসিএইএ।
মসজিদুল আকসা চত্ত্বরে মুসল্লিদের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ১০ মে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে মসজিদ থেকে সৈন্য সরিয়ে নিতে ইসরায়েলকে আলটিমেটাম দেয় গাজা নিয়ন্ত্রণকারী ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। আলটিমেটাম শেষ হওয়ার পর গাজা থেকে ইসরায়েলের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে হামাস রকেট হামলা শুরু করে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গাজা থেকে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে মোট চার হাজার তিন শ' ৬০টি রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছে। ইসরায়েলি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোমে বেশিরভাগ রকেট ধ্বংস করা হলেও বেশ কিছু রকেট ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থানে আঘাত হানে।।
গাজায় ইসরাইলের টানা ১১ দিনের ইসরায়েলি আগ্রাসনের পর বৃহস্পতিবার রাতে ইসরায়েল ও হামাস যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার ঘোষণা দেয়। মিসরীয় উদ্যোগে এই যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টায় ইসরায়েলি মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর শুক্রবার সকাল থেকে তা কার্যকর হয়। ফিলিস্তিনিরা এই যুদ্ধবিরতিকে নিজেদের বিজয় হিসেবে গণ্য করছেন।
সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি, বিবিসি ও ডেইলি মেইল
এনটি