মোস্তফা ওয়াদুদ: বিশ্বখ্যাত বিদ্যাপীঠ দারুল উলুম দেওবন্দের কার্যনির্বাহী মুহতামিম ও জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের (একাংশ) সভাপতি সাইয়েদ মাওলানা কারী উসমান মানসুরপুরী রহ. আর নেই। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
আজ শুক্রবার (২১ মে) জুমার নামাজের পর (দুপুর দেড়টায়) তিনি ইন্তেকাল করেন। বিষয়টি তার ছেলে মুফতি সালমান মানসুরপুরী গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে ৫ মে (বুধবার) তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেদিন বিশ্ববাসীর কাছে দোয়া চেয়ে তারে ছেলে মুফতি আফফান মানসুরপুরী এক হোয়াটএ্যাপ ম্যাসেজ প্রেরণ করেছিলেন।
হোয়াটএ্যাপ ম্যাসেজে তিনি লিখেছিলেন, ‘আমার পিতা সাইয়েদ মাওলানা কারী উসমান মানসুরপুরীর গত চারদিন থেকে সর্দি-জ্বর ও ঠান্ডা। গতকাল বুধবার (৫ মে) থেকে বেশি দুর্বলতা অনুভব করছেন। প্রাথমিক টেষ্ট অনুযায়ী কোভিড পজিটিভ এসেছে। গতকাল তারাবীর পর থেকে শ্বাস-প্রশ্বাসে অসুবিধা অনুভব করায় বাসাতেই সামান্য অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত দেওবন্দে নিজ বাসাতেই ঘরোয়া চিকিৎসা চলছে তার।’
কারী সাইয়েদ উসমান মানসুরপুরী শাইখুল ইসলাম হজরত মাওলানা সাইয়েদ হুসাইন আহমাদ মাদানী রহ. এর সুযোগ্য জামাতা। অল ইন্ডিয়া মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়াতের সদর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি।
এদিকে সম্প্রতি গত এক মাসের ভেতরে দারুল উলুম দেওবন্দের আরো সুযোগ্য দুইজন উস্তাদ ইন্তেকাল করেন। একজন দেওবন্দের আদব বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান মাওলানা নূরে আলম খলীল আমিনী রহ.। অন্যজন ইবনে হাজার ছানীখ্যাত মাওলানা হাবীবুর রহমান আজমী রহ.।
গত সোমবার (৩ এপ্রিল) রাত ৩ টা ১৫ মিনিটে তিনি ইন্তেকাল করেন দারুল উলুম দেওবন্দের প্রবীণ উস্তাদ আরবি ম্যাগাজিন আদ-দাঈ-এর চিফ এডিটর মাওলানা নুর আলম খলিল আমিনী ইন্তেকাল করেন।
মাওলানা নুর আলম খলিল আমিনী রহ. এর আগে গত ১৫ দিন যাবৎ অসুস্থ ছিলেন। তাকে অক্সিজেন লাগানো হয়েছিল, প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে দুইদিন আগে কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। গতকাল দুপুর থেকে তার শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে। এরপর আজ মধ্যরাতে তিনি দেওবন্দে নিজের বিশ্রামাগারে ইন্তেকাল করেন।
মাওলানা নূর আলম খলিল আমিনী রহ. দারুল উলুম দেওবন্দে তিন দশক ধরে আরবি ভাষা সাহিত্যের খেদমত আঞ্জাম দিয়ে আসছিলেন। এছাড়াও তিনি হিন্দুস্তান থেকে প্রকাশিত মাসিক আদ দাঈ ম্যাগাজিনের চিফ এডিটর ছিলেন। তিনি আরবি উর্দু দুই ভাষাতেই প্রায় ১০ টির মত কিতাব লিখেছেন এবং কিতাবগুলো আহলে ইলমের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়।
তাঁর তার লিখিত বই "فلسطین في انتظار صلاح دين" (ফিলিস্তিন ফি ইন্তিজারি সালাহিদিন) আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি গবেষণার অর্ন্তভুক্ত ছিল। এছাড়া তার مفتاح العربية( মিফতাহুল আরব) বইটি বিভিন্ন মাদ্রাসায় দরস নিজামির সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত।
তিনি ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপালের বাইরে আরব ও ইউরোপের দেশগুলোতেও জনপ্রিয়। তার আরবি কিতাবগুলো আরব দেশের পাঠকরাও আগ্রহভরে পড়েন। বিশ্বজুড়ে তার অসংখ্য শাগরিদ রয়েছে।
মাওলানা খলিল আহমদ আমিনী রহ. বিহারের সীতামরাহী জেলার রায়পুর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। ১৯৫২ সালের ১৮ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। তিনি ২০১৭ সালে প্রেসিডেন্সিয়াল সার্টিফিকেট অফ অনার লাভ করেন।
স্ত্রী, তিন ছেলে ও কন্যা সন্তান রেখে ইন্তেকাল করেছেন মাওলানা খলিল আহমদ আমিনী রহ.। তার জানাযা ও দাফন কাফন সম্পর্কে এখনো বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। তার ইন্তেকালের খবর ছড়িয়ে পড়তেই বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের সোশ্যাল মিডিয়ায় শোক প্রকাশ করতে দেখা গেছে নেটিজেনদের।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার ৩০ রমজানুল মোবারক ভোর সকালে ৭৭ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন দারুল উলূম দেওবন্দের প্রবীণ উস্তায ইবনে হাজার ছানীখ্যাত মাওলানা হাবিবুর রহমান আজমী রহ.।
দারুল উলূম দেওবন্দ থেকে প্রকাশিত মাসিক পত্রিকা দারুল উলূম দেওবন্দের সম্পাদক ছিলেন মাওলানা হাবিবুর রহমান আজমী রহ.। তিনি আসমাউর রিজাল সম্পর্কে অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ ছিলেন। ছাত্রদের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় শিক্ষক ছিলেন।
মাওলানা হাবিবুর রহমান আজমী ইতিহাসের প্রতি গভীর নজর রেখেছিলেন। ইসলামের ইতিহাস ও অন্যান্য বিষয়ের অনেকগুলো বই রচনা করেন তিনি। জনসাধারণের মধ্যে তার বইগুলো বেশ জনপ্রিয় ছিলো।
এমডব্লিউ/