আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের ভয়াবহ আক্রমণের মধ্যেও নিজেদের অবস্থানে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ রয়েছে প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। তারা ইসরাইলের সাথে যুদ্ধবিরতির জন্য দুটি বিশেষ শর্ত দিয়েছে। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু অবশ্য বলেছেন, তিনি হামলা অব্যাহত রাখবেন। তবে ইসরাইলি ও বিভিন্ন সূত্রের খবরে বলা হচ্ছে, আগামীকাল শুক্রবার দু'পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হতে পারে। হামাসের এক শীর্ষ নেতাও এমন আভাস দিয়েছেন।
হামাসের সিনিয়র নেতারা বলেছেন, তারা ইসরাইলে রকেট হামলা চালানো বন্ধ করার মাধ্যমে ইসরাইলের সাথে যুদ্ধবিরতি করবেন দুটি বিশেষ শর্তে। এর একটি হলো, আল-আকসা মসজিদের প্রবেশপথে পুলিশ মোতায়েন না রাখার ব্যাপারে রাজি হতে হবে ইসরাইলি বাহিনীকে। দ্বিতীয় শর্ত হলো, বিরোধপূর্ণ পূর্ব জেরুসালেমের শেখ জাররাহ এলাকা থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করা বন্ধ করতে হবে।
ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বুধবারও যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব অগ্রাহ্য করে গাজায় হামলা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন।
ইসরাইল এখনো গাজায় হামলা করে যাচ্ছে। আর ফিলিস্তিনিরাও ইসরাইলে রকেট নিক্ষেপ করছে। উত্তেজনা বাড়ার আরেকটি কারণ ঘটছে লেবাননে। সেখান থেকেও উত্তর ইসরাইলে রকেট নিক্ষেপ করা হচ্ছে।
গত ১০ মে ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে বর্তমান দফার লড়াই শুরু হয়। আল আকসা মসজিদ কমপ্লেক্সে ইসরাইলি পুলিশ ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালানোর প্রতিবাদে হামাস রকেট নিক্ষেপ করলে লড়াই শুরু হয়ে যায়। আল আকসা মসজিদ কমপ্লেক্সে ইসরাইলি পুলিশের কঠোর পদক্ষেপ ও ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের বেশ কয়েকটি ফিলিস্তিনি পরিবারকে উচ্ছেদের হুমকি দেয়ার ফলে উত্তেজনা প্রবল হয়ে ওঠে।
ইসরাইলের বিভিন্ন নগরীতে হামাস এ পর্যন্ত অন্তত ৩,৭০০ রকেট নিক্ষেপ করেছে। অবশ্য এর বেশির ভাগই ইসরাইলের আয়রন ডোম ভূপাতিত করতে সক্ষম হয়েছে।
গাজায় ইসরাইলি হামলায় অন্তত ২২৭ জন নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে ৬৪ জন শিশু, ৩৮ জন নারী। আর আহত হয়েছে ১,৬২০ জন। এই তথ্য দিয়েছে গাজর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
এদিকে অধিকৃত পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুসালেমে ইসরাইলি বাহিনীর হাতে ৪ শিশুসহ ২৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
গাজা উপত্যকা থেকে নিক্ষেপ করা ফিলিস্তিনি রকেটে ইসরাইলে নিহত হয়েছে ১২ জন।
হামাস ও ইসলামিক জিহাদ বলেছে, ইসরাইলি হামলায় তাদের অন্তত ২০ যোদ্ধা নিহত হয়েছে। আর ইসরাইল এ সংখ্যাটি অন্তত ১৩০ হবে বলে দাবি করেছে। প্রায় ৫৮ লাখ ফিলিস্তিনি তাদের বাড়িঘর থেকে পালিয়ে গেছে।
সূত্র : ডেইলি মেইল
দু'দিনের মধ্যে গাজায় যুদ্ধবিরতি : হামাস
গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস বুধবার জানিয়ছে, আগামী দু'দিনের মধ্যে ইসরাইলের সাথে তাদের যুদ্ধবিরতি কার্যকর হতে পারে। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হামলা চালিয়ে যাওয়ার কথা অব্যাহতভাবে বলে যাওয়ার মধ্যেই হামাসের উচ্চপদস্থ এক নেতা এই ভবিষ্যদ্বাণী করলেন।
লেবাননভিত্তিক আল-মায়াদিন টিভিতে পাঠানো এক বিবৃতিতে মুসা আবু মারজুক বলেন, যুদ্ধবিরতির জন্য চলমান প্রয়াস সফল হবে। আমি আশা করছি, এক বা দু'দিনের মধ্যে যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানো যাবে।
হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য মারজুক আরো বলেন যে অধিকৃত পশ্চিম তীর, জেরুসালেম, গাজা ও ইসরাইল রাষ্ট্রের মধ্যে থাকা আবর শহরগুলোসহ নানা ফ্রন্টে একসাথে যুদ্ধ করতে যে ইসরাইল পারবে না, তা নিয়ে তারা চিন্তিত।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বুধবার আনাদুলু এজেন্সিকে বলেন, জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা যুদ্ধবিরতির আহ্বান-সংবলিত একটি খসড়া প্রস্তাব প্রস্তুত করা নিয়ে আলোচনা করছে।
এছাড়া গত বুধবার ইসরালি চ্যানেল ১২ জানায়, ইসরাইল রাজনীতিবিদ ও সামরিক বাহিনীর মধ্যে একমত প্রতিষ্ঠা হয়েছে যে শুক্রবারের আগে কোনো যুদ্ধবিরতি গ্রহণযোগ্য হবে না।
সূত্র : ডেইলি সাবাহ