আন্দামান নওশাদ: বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের ৪৪ তম কেন্দ্রীয় পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে গতকাল সোমবার (১০ মে)। এতে ইবতিদাইয়্যাহ মারহালা (প্রাইমারী) তাইসির জামাতে পুরুষ শাখায় মেধা তালিকায় শীর্ষস্থান অধিকার করেছে জামিয়া রাব্বানিয়া রাব্বানিনগর, সিদ্ধিরগঞ্জ মাদরাসার মুহাম্মদ আবদুর রহীম। তার মোট প্রাপ্ত নম্বর ৬৮৯। একই মারহালার বালিকা শাখায় মেধা তালিকায় শীর্ষ স্থান অধিকার করেছে ঢাকা জেলার আয়েশা সিদ্দীকা মহিলা যাত্রাবাড়ী মাদরাসার মুবাশ্বিরা বিনতে মুর্শেদ। প্রাপ্ত নাম্বার ৬৮৩।
জামিয়া আরাবিয়া রাব্বানিয়া মাদরাসাটি নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ রাব্বানিনগরে অবস্থিত। মাদরাসাটি বিগত কয়েকবছর ধরে ফলাফলের শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। এবছরও তার ব্যতিক্রম হলো না। সারাদেশে তাইসিরে প্রথমস্থান লাভকারী মুহাম্মদ আব্দুর রহীম এ মাদরাসারই ছাত্র। এছাড়া মাদরাসাটিতে আরো একাধিক সিরিয়াল এসেছে। মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা নজরুল ইসলাম ভাসানী।
আয়েশা সিদ্দীকা মহিলা যাত্রাবাড়ী মাদরাসাও বেশ সুনামের সাথে তাদরে মান ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। এরই অংশ হিসেবে এ বছর তারা বেফাকের বালিকা শাখায় ঈর্ষণীয় ফলাফল অর্জন করলেন।
এছাড়া ইবতিদাইয়্যাহ মারহালা (প্রাইমারী) তাইসিরে ২য় স্থান লাভ করেছে যৌথভাবে দুইজন। তারা হলো, জামিয়া কোরআনিয়া ইমদাদিয়া ফুলছোঁয়া হাজিগঞ্জ চাঁদপুর মাদরাসার মুহাম্মদ আবদুল কাইয়ুম। তার মোট প্রাপ্ত নাম্বার ৬৮৮ নম্বর। ২য় জন জামিয়াতুস সুন্নাহ মাদারীপুর শিবচর মাদরাসার মুহাম্মদ ওমর ফারুক। তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৮৮। তৃতীয় স্থানও যৌথভাবে দুইজন। তারা হলো, জামিয়া রাব্বানিয়া আরাবিয়া রাব্বানিনগর সিদ্ধিরগঞ্জ মাদরাসার মুহাম্মদ কায়সার। তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৮৭। অন্যজন জামিয়া কোরআনিয়া বকচর যশোর থেকে মুহাম্মদ মাহফুুজুর রহমান। তার মোট প্রাপ্ত নম্বর ৬৮৭।
আর একই মারহলার বালিকা শাখায় মেধা তালিকায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে যৌথভাবে ২ জন। তারা হল, শরীয়তপুর জেলার আলহাজ্ব সফুরা বেগম মহিলা মাদরাসার আশেয়া। তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৭৩। একই মাদরাসার মােসাম্মৎ মিনারা। তার প্রাপ্ত নাম্বার ৬৭৩। তৃতীয় স্থানও অধিকার করেছে যৌথভাবে ২ জন। তারা হল, ঢাকা জেলার জামিয়া মিল্লিয়া আয়েশা ছিদ্দিকা রা. মাদরাসার আফিয়া আখতার নূহা। তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৭২। অন্যজন কুমিল্লা জেলার আয়েশা ছিদ্দিক্বা রা. মহিলা মাদরাসার মোসা. লাবিবা আক্তার নাজিবা। তার প্রাপ্ত নাম্বার ৬৭২।
গতকাল দুপুর ৩ টা ২০ মিনিটে রাজধানীর কাজলার পাড় (ভাঙ্গাপ্রেস) বেফাক মিলনায়তনে ৪৪ তম কেন্দ্রীয় বেফাক পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে এ ফলাফল ঘোষণা করে বেফাক। এ সময় বেফাক সভাপতি ও হাইয়াতুল উলইয়ার চেয়ারম্যান আল্লামা মাহমুদুল হাসানের হাতে ফলাফল তুলে দেন বেফাকের প্রধান পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মুফতি আমিনুল হক। এ সময় অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন, বেফাকের সহ-সভাপতি মাওলানা সফিউল্লাহ, মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক, (ভারপ্রাপ্ত) মহাপরিচাল মাওলানা মুহাম্মদ যুবায়ের, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মুফতি আমিনুল হক, বারিধারা মাদরাসার মাওলানা মকবুল আহমদ, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, মাওলানা নেয়ামাতুল্লাহ আল ফরিদী প্রমূখ।
এ বছর প্রকাশিত ফলাফলে বেফাকের মোট গড় পাসের হাড় ৭৪.৪%। ফজিলত মারহালায় গড় পাসের হার পুরুষ ৮০.৩৪%, মহিলা ৬৮.৫০%, সানাবিয়া উলইয়ায় গড় পাসের হার পুরুষ ৭২.৯৪%, মহিলা ৫৬.২৫%, মুতাওয়াসসিতাহ মারহালায় গড় পাসের হার পুরুষ ৮৫.২৭%, মহিলা ৬৮.৬৪%, ইবতিদাইয়্যা গড় পাসের হার পুরুষ ৭৫.৬১%, মহিলা ৬৬.৭৭%, হিফজ মারহালায় ৯৫.১৫%, ইলমুজ তাজভীদ ও কেরাত মারহালায় ৯০.৭৪%।
বেফাকে অংশ নেওয়া মোট শিক্ষার্থীদের হিসাব:
ফজিলত মারহালা
মুমতাজ: হয়েছেন মোট ১৫৮১ জন। পুরুষ ১২৬৫। নারী ৩১৬ জন।
জায়্যিদ জিদ্দান:মোট ৪৮৪০ জন। পুরুষ ৩১০৪ জন। নারী ১৭৩৬।
জায়্যিদ: মোট ৭০২৩ জন। পুরুষ ৩৮০৪। নারী ৩২১৯জন।
মকবুল: মোট ৮৩৫ জন। পুরুষ ৩৬৫৯। নারী ৪৩৭৬।
সানাবিয়্যা উলইয়া
মুমতাজ: হয়েছেন মোট ১৭৫৭ জন। পুরুষ ১৪৭০। নারী ২৮৭ জন।
জায়্যিদ জিদ্দান:মোট ৩৯৮৭ জন। পুরুষ ২৫৬ জন। নারী ১৪৬১।
জায়্যিদ: মোট ৫৫৩৪ জন। পুরুষ ২৭৯৭। নারী ২৭৩৭ জন।
মকবুল: মোট ৭৭০৮ জন। পুরুষ ২৬৮২। নারী ৫০২৬।
মুতাওয়াসসিতাহ
মুমতাজ: হয়েছেন মোট ৮৪৭৬ জন। পুরুষ ৬৫০৯। নারী ১৯৬৭ জন।
জায়্যিদ জিদ্দান:মোট ১০০২৩ জন। পুরুষ ৫১৭১ জন। নারী ৪৮৫২।
জায়্যিদ: মোট ১১০৫৮ জন। পুরুষ ৩৮৮৮। নারী ৭১৬৬ জন।
মকবুল: মোট ১২০৩৫ জন। পুরুষ ৩৪৭১। নারী ৮৫৬৪ জন।
ইবতিদাইয়্যা
মুমতাজ: হয়েছেন মোট ৪২৮৩ জন। পুরুষ ৩৩৪৮। নারী ৯৩৫ জন।
জায়্যিদ জিদ্দান:মোট ৮২০৯ জন। পুরুষ ৪৫৫৮ জন। নারী ৩৬৫১।
জায়্যিদ: মোট ৯৮৯১ জন। পুরুষ ৩৯১১। নারী ৫৯৮০ জন।
মকবুল: মোট ২৩৭৮২ জন। পুরুষ ৬৭৫৮। নারী ১৫০২৪ জন।
হিফজুল কুরআন
মুমতাজ: হয়েছেন মোট ১০৮৭২ জন।
জায়্যিদ জিদ্দান: মোট ৪১১৯ জন।
জায়্যিদ: মোট ২৮০৪ জন।
মকবুল: মোট ২৩২৮।
ইলমুত তাজবিদ ওয়াল কিরাত
মুমতাজ: হয়েছেন মোট ৯৩ জন।
জায়্যিদ জিদ্দান: মোট ২৮৬ জন।
জায়্যিদ: মোট ৩১০ জন।
মকবুল: মোট ২১৩।
উল্লেখ্য, বেফাকের ৪৪ তম কেন্দ্রীয় পরীক্ষা শুরু হয়েছিলো গত ১৮ মার্চ ২০২১। শেষ হয়েছে ২৫ মার্চ ২০২১। সারাদেশে বেফাকের ২ লক্ষ ৩০ হাজার নিবন্ধিত পরীক্ষার্থীর থেকে ২ লক্ষ ২৫ হাজার পরীক্ষার্থী অংশ নেয় পরীক্ষায়। এবছর বেফাক শিক্ষার্থীদের খাতা দেখার জন্য করা হয়েছিল নতুন নিয়ম। সারাদেশকে ১২টি জোনে ভাগ করা হয়েছিলো। মুমতাহিনগণ নির্দিষ্ট জোনে এসেই দেখতেন পরীক্ষার্থীদের খাতা। কিন্তু করোনা ভাইরাস বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার ঘোষিত লকডাউনের কারণে এবারও বাড়িতে বসেই খাতা দেখার সিস্টেম চালু করে বেফাক। এরপর চূড়ান্তভাবে নিরীক্ষণ শেষ করে আজ সোমবার ফলাফল প্রকাশ করলো বেফাক।
এমডব্লিউ/