সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


শবে কদর ও কিয়ামুল লাইল

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আবু সুফিয়ান মাহমুদ।।

শবে কদর। পূন্যময়ী এক রজনী। এই রজনীতে বিশ্ববাসীর জন্যে মহান প্রভুর পক্ষ হতে অবতীর্ন হয়েছিলো মহাশান্তির পয়গাম। যা পৃথিবীর ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে এবং আল কুরআন রূপে যে বিশ্বাস ও বিধান মানবজাতিকে দেয়া হয়েছিলো,তা মানবসভ্যতার শান্তি ও মুক্তির পূর্বশর্ত এবং একমাত্র পথ ও পন্থা আখ্যা পেয়েছে। তাই, এ রজনীর গুরুত্ব ও তাৎপর্য বিশ্বমুসলিমের অন্তরে এই রজনীকে করে তুলেছে মহিমান্বিত।

এই রজনীতে মানবসভ্যতা যে বিধানাবলী প্রাপ্ত হয়েছিলো, তা পূর্ববর্তী সকল অন্ধবিশ্বাস, সভ্যতার নামে যুগ যুগ ধরে হয়ে আসা কুসংস্কারকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে। অন্ধযুগের সকল বর্বরতা, কুসংস্কার, বংশগৌরব নিমিষেই যেনো হারিয়ে গেলো কালের অতল গহ্বরে। তদানিন্তন কালের দুই পরাশক্তি রোম-পারস্যের শতাব্দীর দাম্ভিকতার ভীত নড়ে গিয়েছিলো সেই রজনীতেই। হ্যাঁ, তা ছিলো মহাগ্রন্থ "আল কুরআনুল কারিম" অবতীর্ণ হওয়ার রজনী। মহিমান্বিত পূন্যময়ী এক রজনী।

রমজানের শেষদশকের কোনো এক বেজোড় রাত- শবে ক্বদর। শেষ দশকের এই রাতগুলো একজন মুমিনের জীবনে আসা সর্বোৎকৃষ্ট রাতগুলোর অন্যতম। ইস্তেগফার-গুনাহমাফি ও আত্মোপলব্ধির রাত। এই রাতে মুমিন বান্দা আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে বিভোর থাকে। প্রভুর অসীম ধনভাণ্ডারে আপন আকাঙ্খার অন্বেষণ করে। সবাই যখন ঘুমে বিভোর, মুমিন তখনও আল্লাহর কুদরতি পায়ে সাজদা'য় লুটিয়ে ভিখ মাঁঙ্গে।

রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, রাতে এমন একটি সময় আসে, কোনো মুমিন ঐসময়ে আল্লাহ তায়ালার কাছে দুনিয়া ও আখিরাতের যা চাইবে, আল্লাহ তায়ালা তাঁকে তা'ই দিবেন। আর ঐ বিশেষ সময়টি প্রতিটি রাতেই আসে। (মুসলিম, আহমদ)

আল্লাহর যেসকল বান্দারা আরামদায়ক বিছানা পরিহার করে মা'রেফতের সফর পাড়ি দিতে মহান প্রভুর সকাশে হাজিরা দেয়, তাদের ব্যপারে আল্লাহ তায়ালা বলেন " তারা রাত্রির সামান্য অংশেই নিদ্রা যেত, রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমাপ্রার্থনা করত এবং তাদের ধন-সম্পদে প্রার্থী ও বঞ্চিতের হক ছিল" (যারিয়াত, ১৭.১৮.১৯)

ক্বিয়ামুল লাইল তথা রাত্রীকালীন ইবাদাত মুসলিমদের গুরুত্বপূর্ণ বিধান। যা থেকে মুসলিমগণ এমনকি যুদ্ধের ময়দানেও গাফেল হননি। ক্বিয়ামুল লাইল থেকে তারা এমন ঐশ্বরিক শক্তি অর্জন করতেন, যার ফলে শত্রুপক্ষ তাদের ভয়ে তটস্থ থাকত। এজন্যই তাদেরকে বলা হয়েছে "রুহবানুল লায়ালী ওয়া ফুরসানুন নাহার" রাতে সূফী, দিনে গাজী।

আবু মালেক আশ'আরী রা. থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, জান্নাতের ভেতরে একটি অনিন্দ্য সুন্দর বালাখানা রয়েছে, যার ভেতরের সচ্ছতা বাহির থেকে এবং বাহিরের সৌন্দর্য ভেতর থেকে অবলোকন করা যায়। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা জানতে চাইলাম ইয়া রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, এই বালাখানাটি কার জন্যে প্রস্তুত করা হয়েছে, তিনি বলেন,চার শ্রেণির লোকের জন্য;

১.যারা খাদ্যদান করে। ২.বিনয়াবনত কথা বলে। ৩.সিয়ামের পর সিয়াম পালন করে। ৪.সালামের প্রসার করে এবং রাতে সালাত আদায় করে যখন লোকেরা ঘুমিয়ে থাকে।

উপরোক্ত হাদিসগুলোর আলোকে প্রতীয়মান হয়, কিয়ামুল লাইলে অভ্যস্ত না হতে পারা দুর্ভাগ্য বৈ কিছুই নয় এবং কিয়ামুল লাইল ছেড়ে দেয়ার ফলে, ফরজ নামাজের খুশু-খুজু বিলুপ্ত হয়ে যায়। যার ফলে ইবাদতের স্বাদ ও লজ্জত অনুভব করা থেকে বান্দা মাহরুম হয়। আল্লাহ পানাহ।

হাসান বসরী রা. এর কাছে এসে এক ব্যক্তি অভিযোগ করলো, কিয়ামুল লাইলের জন্য সে শক্তি সাহস পায়না। তিনি উত্তর করলেন, তোমার পাপসমূহ তোমাকে শেকলাবদ্ধ করে রেখেছে, বান্দা যখন গুনাহ করে, কিয়ামুল লাইলের দৌলত হতে মাহরুম হয়ে যায়।

এক ব্যক্তি ইবরাহীম ইবনে আদহাম রহ. এর কাছে এসে বললো, আমার রাত্রি জাগার সৌভাগ্য হয়না, কিছু নসীহত করুন। তিনি বললেন, দিনের বেলায় তার নাফরমানী করোনা, রাতে তিনি তোমাকে তার দরবারে জায়গা দেবেন। এটা হলো উচ্চপর্যায়ের নেয়ামত, গুনাহগারকে আল্লাহ তায়ালা এমন নেয়ামত দান করেননা। (তানবিহুল মুফাসসিরীন লিশ শা'রানী)

প্রিয় পাঠক, আগামী রমজান আমাদের ভাগ্যে জোটে কিনা, তার নিশ্চয়তা নেই। তাই অন্তত রমজানের এই শেষদশককে গনীমত মনে করুন, নিজের অগোছালো জীবনকে সাজিয়ে নিন এই সুবর্ণ সুযোগে। চিন্তা করুন, আল্লাহ তায়ালার রহমতে যদি আপনি শবে কদর পেয়ে যান এবং একটি সাজদার মাধ্যমে হলেও তার দরবারে উপস্থিত হন, নিজের অক্ষমতা প্রকাশ করে তাওবাহ করেন, লজ্জিত হন আল্লাহর দরবারে। হতে পারে এটিই আপনার নাজাতের উসিলা হবে। অতীত চিন্তা আর ভবিষ্যতের ফিকির ছুঁড়ে ফেলো, এইক্ষণকে কাজে লাগাও, তা অমুল্য রতনে পরিণত হবে

যে ব্যক্তি শবে কদরে আল্লাহ'র উপর পূর্ণ বিশ্বাস রেখে পূণ্যের আশায় ইবাদাত করে, তার পূর্বকৃত সকল পাপ ক্ষমা করে দেয়া হয়।
(মুত্তাফাক আলাইহ)

আর বাস্তবতা হলো, আল্লাহ'র কোনো বান্দা যদি এই রজনীর তাৎপর্য অনুধাবন করে ইবাদাতে মগ্ন থাকে, সে এই একটা রজণী'তেই মহান প্রভুর এতই নিকটবর্তী হয়ে যেতে পারে, যা হাজার মাসেও সম্ভব নয়।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ