রফিকুল ইসলাম জসিম ।।
দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রই তো প্রযুক্তিনির্ভর। পিছিয়ে নেই ঘরের নারীরাও। বর্তমানে নারীর ঝোঁক বাড়ছে অনলাইন ব্যবসায়ে। এখন ঘরে বসে কল করে কিংবা মেসেজ পাঠিয়ে পছন্দের পণ্যটি ক্রেতাদের হাতের নাগালে পৌঁছে দিচ্ছে এ নারী উদ্যোক্তা।
শুধু সোশ্যাল নেটওয়ার্ক ফেসবুক ব্যবহার করেই তারা এগিয়ে নিচ্ছেন নিজেদের ব্যবসা। এমন একজন নারী উদ্যোক্তার গল্প লিখছেন রফিকুল ইসলাম জসিম
মণিপুরি শাড়ি ও মেয়েদের থ্রী পিচসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য নিয়ে কাজ করেন নাসরিন আক্তার লিজা। কমলগঞ্জের মেয়ে। সিলেট এমসি কলেজে থেকে ভোটানি বিভাগ থেকে অনার্স শেষ করেছেন। আদমপুরের পূর্ব কোনাগাঁও গ্রামে অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য সাইফ উদ্দিনের মেয়ে। তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়।
ছোট বেলা থেকে ইচ্ছা ছিল শিক্ষকতা হাওয়ার। এমনকি অনার্স শেষ করে শিক্ষক হওয়ার প্রচণ্ড ইচ্ছা থাকলেও শেষ পর্যন্ত নানান জটিলতায় তা আর হয়ে ওঠেনি।
এক পর্যায়ে নিজ গ্রামে ক্যাপ্টেন ইব্রাহিম মেমোরিয়াল একাডেমি গড়ে ওঠে। সেখানে শিক্ষকতা পেশা হিসেবে সুযোগ পেয়ে কাজ করছেন এক বছর ধরে হঠাৎ করোনা সব কিছুরই ছন্দপতন ঘটিয়ে দিয়েছে। সবচেয়ে বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষেত্রে। কিন্তু সময় যেমনই হোক জীবনকে থামিয়ে রাখা যাবে না। করোনা সংকটে স্কুল কলেজ বন্ধ। নারী উদ্যোক্তা হওয়ার বাসনা তাকে বেশি টানত। এরপর চাকুরির পাশাপাশিই অনেক তার প্রিয় মানুষের অনুপ্রেরণা এবং সাহস নিয়ে তিনি স্বপ্নের দিকে পা বাড়াই চলতি বছর ১ম রমযানে অনলাইন ব্যবসায় শুরু করেন৷
ছাত্রজীবন থেকেই নাসরিন আক্তার লিজার ইচ্ছা ছিল ব্যবসার মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা। এখন ব্যবসার মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার বড় চ্যালেঞ্জটি গ্রহণ করেন তিনি। তাই তার মতে ছোট হোক বড় হোক স্বপ্ন সবার দেখা উচিত।কিন্তু স্বপ্ন দেখে থেমে থাকলেই হবে নাহ, সেই অনুযায় কাজ ও করতে হবে বলে তিনি জানায়।
কিভাবে অনলাইনে ব্যবসা শুরু করলেন জানতে চাইলে নাসরিন আক্তার লিজা বলেন, ব্যবসা শুরু করার ইচ্ছে হয়েছে করোনাকালে। ভাবলাম আনকমন কিছু করা যায় কি না। যেহেতু সব এখন অনলাইনে হয়, সেহেতু অনলাইন ব্যবসার বিষয়টি মাথায় আসে। প্রথম দিকে কিছু মণিপুরি কাপড় সংরক্ষণ করে মোবাইল দিয়ে ছবি তুলেই আমার পেইজে আপলোড করি। অনলাইন পেইজে মানুষ এত সুন্দরভাবে স্বাগতম করবে আমি ভাবতে পারিনি।
তিনি আরো বলেন, মূলত বিভিন্ন কাপড়ের সাথে মণিপুরি শাড়ির ওপর বেশি কাজ করছি। মনিপুরি মেয়ে হওয়ার সুবাদে মণিপুরি তাঁতপল্লী থেকে একদম নিজ হাতে প্রতিটা শাড়ি সংগ্রহ করি। তাই এই ব্যাপারে মোটামুটি খুব ভালো একটা জানাশোনা আছে। তাই সাহস করে শুরু করে দিলাম।
কথা বলতে বলতে ফেইসবুকে তার কাপড়ের পেইজ মরিয়ম মনিপুরী শাড়িঘর এ গিয়ে দেখা যায়
মণিপুরি কাপড়ের সাথে নানা ডিজাইনের কাপড় এর ছবি। এছাড়াও কয়েকজন কাস্টমারের রিভিউ দেখা যায়। সেখানে ইসরাত মুন্নী নামে একজন লিখেছেন, প্রথমবার নিলাম, ইনশাআল্লাহ আরো নিব।ড্রেসটার কোয়ালিটি অনেক বেশি ভালো। হৃদয়ের গভীর থেকে জানাই মরিয়ম মনিপুরী শাড়িঘর এর জন্য অনেক ভালোবাসা এবং শুভকামনা।
যতটা না আশা করেছিলাম তার থেকে বেশি রেসপন্স পেয়েছি। সবচেয়ে আনন্দে বিষয় হচ্ছে সেটা হয়তো ক্রেতারা আমার কাছে পেয়েছে তাদের চাহিদা মতো পণ্যে। নিজে একা সবকিছু সামলে নিয়েছি। মানুষের ভালোবাসা অর্জন করে নিয়েছি। পরিবারের সবার সাপোর্ট থাকলেও চেষ্টা এবং শ্রম দুটোই আমি দিয়েছি। উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার পেছনে যে শ্রম শক্তি এবং পরিশ্রম লাগে মনে হয় তা করতে পেরেছি বললেন নাসরিন আক্তার লিজা।
মণিপুরি মুসলিমদের সফল নারী উদ্যেক্তা ও কবি রওশান আরা বাঁশি। মণিপুরি মেয়ে নাসরিনের এ উদ্যামের প্রশংসা তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে নারীদের ঘরে বসে কাজ করার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে ই-কমার্স। এই সেক্টরে মণিপুরিদের মাঝে নারী উদ্যেক্তাদের সংখ্যা যে হারে বাড়ছে তা আমাদের দেশের জন্য অবশ্যই ইতিবাচক। তাই যারা এপথে হাঁটার সাহস করেন, তাদেরকে সবার উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দেয়া উচিত।
আমাদের সমাজের অনেক নারী আছেন যারা ঘরের বাইরে গিয়ে চাকরি করতে পারছেন না কিন্তু তারা স্বাবলম্বী হতে চান। সেদিক থেকে ই-কমার্সের মাধ্যমে নারীরা ঘরে বসে ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। ই-কমার্স মেয়েদের জন্য স্বাবলম্বী হওয়ার অন্যতম মাধ্যম।
-এটি