মুফতি আহসান শরিফ।।
ইবাদত হচ্ছে আনুগত্য এবং মান্য করার নাম। সিয়াম আদায়ের মাধ্যমে মানুষ আনুগত্যের চুড়ান্ত প্রশিক্ষণ পায়। নির্ধারিত সময়ের পর ইচ্ছে হলেও আর খাবে না। কেউ না দেখলেও খাবে না। আল্লাহর আদেশ মানবে। আল্লাহর আনুগত্য করবে। এটাই মুমিনের বড় পরিচয়। বৈধ কাজ করবে, অবৈধ কাজ ছাড়বে। নিজ হাতে কামাই করা হালাল উপার্জনে ক্রয় করা খাবার সামনে পড়ে থাকবে।
সায়েম খাবে না। কেউ খাইয়ে দিতে চাইলেও খাবে না। কোনভাবে মুখের ভেতরে চলে যেতে চাইলেও জোরপূর্বক বের করে ফেলবে। কারণ, আল্লাহর নিষেধ। রমজানের দিনে পানাহারে আল্লাহ তায়ালা নিষেধ করেছেন। মন যা চাবে তা করলে আর যাই হোক ইবাদত হবে না। পার্থিব জীবনেও সুখনামক সোনার হরিণের দেখা মিলবে না। পাওয়া যাবে না অসামান্য মূল্যের স্বস্তিটুকুও। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, রাসূল তোমাদেরকে যা দেন তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক। আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা। [সূরা হাশর : আয়াত :০৭]
নবীজি সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেহরি খেতেন। সেহরি খেতে বলতেন। এজন্য সেহরি খাওয়া নবীজির সুন্নত। সাহাবায়ে কেরামও গুরুত্বের সঙ্গে আমলটি করেছেন। আমরা সেহরি খাব। নবীজির আনুগত্যের জন্যই সেহরি খাব। খুধা না থাকলেও খেতে হবে। খাবার খাওয়া না গেলে সুন্নত পালনের জন্য একটু পানি হলেও খেতে হবে। সেহরি না খেলে সারাদিন কষ্ট হবে এ জন্য নয়, বরং সেহরি খাওয়া নবীজির সুন্নত এ জন্যই খাবো। কেননা হাদিস শরিফে এসেছে, নবীজি সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা সেহরি খাও। সেহরির মধ্যে বরকত রয়েছে। [বুখারি, হাদিস নং : ১৮৮৪]
এ ছাড়া সেহরি খেলে আল্লাহর রহমত এবং ফেরেশতাদের দোয়া পাওয়া যায়। নবীজি সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যারা সেহরি খায় নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তাদেরকে রহমত দান করেন এবং ফেরেশতারা তাদের জন্য রহমতের দোয়া করেন। [তবরানি ও ইবনে হিব্বান]
সেহরি খেলে আল্লাহর রহমত ও ফেরেশতাদের দোয়া পাওয়া যাবে, এ নিয়তে সেহরি খাওয়া। সুন্নতের নিয়তে খেলেও কিন্তু পেট ভরবে। তবে পেট ভরার নিয়তে খেলে সুন্নত আদায় হবে না। রহমত, বরকত ও ফেরেশতাদের দোয়া পাওয়া যাবে না। এ জন্য সুন্নতের নিয়তে খেলে সেহরির সুন্নতও আদায় হবে, প্রয়োজন মিটবে। শরীর সাস্থ্যও ভালো থাকবে।
সেহরির সময় থাকা পর্যন্ত সেহরি খাওয়া যাবে। রোজার নিয়ত হয়ে গেলেও সময় বাকি থাকলে সেহরি খাওয়া যাবে। নিয়ত করে ফেলেছি, এখন আর খাওয়া যাবে না, এ ধারণা ভুল। আগে সেহরি খাওয়া হয়ে গেলে শেষ সময়ে একটু পানি, দুধ বা অন্য কিছু খেয়ে হাদিসের ওপর আমল করার চেষ্টা করা।
পাঠক, সেহরি খাওয়া সুন্নত এ জন্য তিন বেলার খাবার একবারে খেয়ে ফেলতে হবে, এমন আদেশ বা পরামর্শ আপনাকে কেউ দেয়নি। রোজাদারের জন্য পেট পুরে খাওয়া জায়েজ। তাই বলে সব আপনি একাই খাবেন, এমনটি কি জরুরি? এখানেও গরিব, অসহায় মানুষের প্রতি খেয়াল রাখা সিয়ামের শিক্ষা।
সামর্থবানরা প্রতিদিন অন্তত একজন গরিব মানুষের সেহরি খাবারের ব্যবস্থা করলে এ দেশের অসহায় মানুষগুলো সুখ পাবে। না খেয়ে রোজা থাকতে হবে না। সিয়ামের আলো পৌঁছে যাবে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। রমজানের এ আমল চলবে বার মাস। তাহলেই তো রোজা সার্থক হবে। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।
লেখক: প্রিন্সিপাল, মাদরাসাতুল বালাগ ঢাকা, ঝাউচর বাজার, পশ্চিম হাজারীবাগ, ঢাকা।
-ওআই/আবদুল্লাহ তামিম