মুফতি হাফেজ আহসান শরিফ।।
আজ রমজানের চতুর্থ দিন। দেখতে দেখতে রহমতের দিনগুলো অতিবাহিত হয়ে যাচ্ছে। কামাই এবং অর্জনের এ মাসে আমরা কতটুকু নিতে পেরেছি, হিসেব লাগানো দরকার। আমরা কি নিজেদের পাপরাশি ক্ষমা করিয়ে নিতে পেরেছি? জাহান্নাম থেকে নিজেদের বাঁচাতে পেরেছি? নিজেকে জান্নাতে যাওয়ার উপযুক্ত করতে পেরেছি? মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের উন্নতি কতটুকু হয়েছে? পৃথিবীর সব কিছুর ওপর আল্লাহর মহব্বতকে প্রাধান্য দিতে পেরেছি? নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নত ও আদর্শ কতটুকু নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করতে পেরেছি?
পাঠক! রহমত, বরতক ও নাজাতের এ মাসে আল্লাহর জন্য নিজেকে সপে দেয়ার জন্য আমরা কতটুকু প্রস্তুত হয়েছি? কাবার ভালোবাসায় অন্তরকে ভরপুর করতে পেরেছি? মদিনার মহব্বতে ছুটে যাওয়ার জন্য বেচাইন হতে পেরেছি? নিজের পাপরাশি ক্ষমার জন্য কদিন অশ্রু ঝরিয়েছি? মহান মালিকের সান্নিধ্য লাভের জন্য কদিন বিনিদ্র রজনী কাটিয়েছি? গভীর রজনীতে কিয়ামুল লাইলে রবের সঙ্গে মধুর আলাপচারিতার স্বাদ কতটুকু পেয়েছি? কুরআনুল কারিম তিলাওয়াতে কতটুকু সময় দিয়েছি? কুরআন বুঝার জন্য অনুবাদ বা তাফসির অধ্যায়ন কী পরিমাণ করেছি? সামার্থ অনুযায়ী আল্লাহর দেয়া সম্পদ থেকে দান সদকা কী পরিমাণ করেছি? গরিব অসহায়ের ইফতারি বা দুমুঠো খাবারের জন্য সামার্থের কতটুকু ব্যয় করেছি? সুদ, ঘুষ, হারাম ও দুর্ণীতি থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছি তো?
প্রতিদিন হিসেব লাগানো দরকার। অর্জিত নেক আমলের পাল্লা বাড়ানো দরকার। বেশি থেকে বেশি দোয়া করা দরকার। দোয়া ইবাদতে সাহায্য করে। দোয়ার মাধ্যমে বান্দার সঙ্গে রবের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়। দোয়ার মাধ্যমে অপরাধ প্রবণতা কমে। নেক আমলের আগ্রহ বাড়ে। সুন্দর এবং সৎ হওয়া যায়। নৈতিকতা সৃষ্টি হয়। রোজাদারের দোয়া আল্লাহ কবুল করেন। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তিন ব্যক্তির দোয়া আল্লাহ তায়ালা ফেরত দেন না। এক. ন্যায়পরায়ন শাষক। দুই. সিয়াম আদায়কারী, যতক্ষণ না সে ইফতার করে। তিন. মজলুম ব্যক্তির দোয়া। [মুসনাদে আহমাদ : ৯৭০৪]
রোজাদার ব্যক্তির দোয়া আল্লাহ তায়ালা ফেরত দেন না, কবুল করেন। শাষক ন্যায়পরায়ণ হলে, অধিনস্তরা ভাল থাকে। রাষ্ট্র উন্নত ও সমৃদ্ধ হয়। ন্যায়পরায়ণ শাষকের অনেক মর্যাদা মহান আল্লাহর কাছে। তার দোয়াও ফেরৎ দেন না, কবুল করেন।
রোজা অবস্থায় রোজাদারের দোয়া কবুল হয়। হাদিসে বিশেষভাবে ইফতারের সময়ের কথাও বলা হয়েছে। ইফতারের সময়ে দোয়া করা চাই। ইফতার শুরু করার আগে, কিছুটা ইফতার করার পর কিংবা ইফতার শেষ করেও দোয়া করা যায়। হাত উঠিয়ে দোয়া করা যায়। হাত না উঠিয়েও দোয়া করা যায়। যে কোনভাবে দোয়া করলেই হল। আল্লাহ কবুল করবেন।
ইফতারের সময় ছাড়াও রোজা অবস্থায় যে কোন সময় বেশি বেশি দোয়া করা চাই। নিজের জন্য এবং অন্যের জন্য। আপন পর, মুসলিম, অমুসলিম, জীবিত মৃত সবার জন্য দোয়া করা চাই। বিশেষ করে নিজের বাবা, মা, স্ত্রী, সন্তান, ভাই বোন ও আত্মীয়দের জন্য দোয়া করা চাই।
অপরাধমূলক কাজ ছেড়ে দিতে হবে। কৃত অন্যায়ের ওপর অনুতপ্ত হতে হবে। ভবিষ্যতে আর গুনাহ না করা প্রতিজ্ঞা করতে হবে। আল্লাহর এবং বান্দার হক আদায় করে দেয়ার নামই তো তাওবা। প্রকৃত তাওবাকারী এবং হালাল বক্ষণকারীর দোয়া আল্লাহ কবুল করেন। রাব্বে কারীম, আমাদেরকে রমজান মাসে বেশি বেশি দোয়া করার তাওফিক দান করুন। নিজেদের কৃত পাপসমূহ ক্ষমা করিয়ে রমজানের রহমত লাভে ধন্য করুন।
লেখক: প্রিন্সিপাল, মাদরাসাতুল বালাগ ঢাকা শারমিন ভিলা, পশ্চিম হাজারীবাগ, ঢাকা।
-এটি