মুফতী রফিকুল ইসলাম আল-মাদানী
তারাবির নামাজ আপনারা মসজিদে আদায় করেন অথবা বাসা বাড়িতে আদায় করেন ২০ রাকআত আদায় করবেন। জামাতে আদায় করতে পারলে ভালো। খতমে তারাবীহ পড়ার সুযোগ থাকলে আরো ভালো। তারাবির নামাজ ২০ রাকআত এর যথেষ্ট দলীল প্রমাণ আছে। ২০ রাকআতের কম তারাবীহ হয় না ।বরং অনেক ইমামদের কথা মতে আরো বেশি।
ইমাম মালেক রহ. এর সময়ে মদীনায় তারাবির নামাজ ৩৬ রাকআত হত । ২০ রাকআত এর উল্লেখযোগ্য দলীল হিসাবে সাহাবী সাহেব বিন ইয়াজিদ র. থেকে বর্ণিত, আমরা ওমর ইবনে খাত্তাব র. এর যুগে ২০ রাকআত এবং বিতির পড়তাম। (সুনানুল কুবরা বাইহাকী ২/৪৯৬ মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক। ৪/২৬১)হাদীসটি সহীহ।
মোল্লা আলী কারী ,তাজ উদ্দিন সুবকী, হাফেজ জালাল উদ্দিন সুয়ূতী ,ওয়ালী উদ্দিন ইরাকী ,ইমাম নববী, ইবনে আব্দিল বার মালেকী,আল্লামা নিমাভী প্রমুখ হাদীস বিশারদ ইমামগণ ২০ রাকআত তারাবির হাদীসকে সহীহ বলেছেন।(আল ইস্তিজকার ২/৬৮ ইলাউস সুনান ৭/৭৪ আল মাজমূ ৪/৩২)
এছাড়া অন্যান্য সাহাবায়ে কিরাম এবং অসংখ্য তাবেঈগণ থেকে তারাবির নামাজ ২০ রাকআত বর্ণিত আছে এবং তারা নিজেরাও তারাবির নামাজ ২০ রাকআত পড়েছেন তা বিশুদ্ধ ভাবে বর্ণিত আছে। পবিত্র মক্কা মদিনা সহ সমগ্র আরব অনারবের মুসলিম উম্মাহ দেড় হাজার বছর যাবত তারাবির নামাজ ২০ রাকআত পড়ে আসছেন। লা-মাযহাবী ইমাম আল্লামা ইবনে তাইমিয়া উল্লেখ করেছেন রমজানে ওমর র. এর যুগে সাহাবী উবাই ইবনে কাব র.তারাবির নামাজ ২০ রাকআত পড়াতেন। তা বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত আছে।দেখুন তার কিতাব মাজমুউল ফাতাওয়া ২৩ /১১২
৮ রাকআত তারাবির কোন দলীল প্রমাণ নেই। তারা যা পেশ করে থাকে এর একটি অপ্রাসঙ্গিক ,একটি জাল ,অপর একটি মারাত্মক ভুল। আয়েশা রা. থেকে যে হাদীস তারা পেশ করে তা অপ্রাসঙ্গিক এখানে তারাবির কোনো আলোচনা নেই। এতে এমন নামাজের কথা বলা হয়েছে যা রমজান এবং রমজান ছাড়াও পড়া হয়। আর ওই নামাজ হলো তাহাজ্জুদের নামাজ।
তাই আরবের প্রখ্যাত গবেষক হাদীস বিশারদ আতিয়া মোহাম্মদ সালেম তা উল্লেখ করে বলেছেন দেড় হাজার বছর পর্যন্ত মসজিদে নববীতে তারাবীহ ২০ রাকআত চলে আসতেছে। সাহাবায়ে কেরাম তাবেঈনদের কেউ কি এই হাদীসকে আট রাকআত তারাবির ব্যাপারে উল্লেখ করেছেন অথবা ২০ রাকআতের কম কেউ হাজার বছরের ইতিহাসে আদায় করেছেন এমন কোনো প্রমাণ দেখাতে পারবে?আয়েশা র.নিজ চোখের সামনে এই মসজিদে তারাবির নামাজ ২০ রাকআত হতে দেখেছেন। তিনি কি কোনো প্রশ্ন করেছেন?
অতএব হাদীসটা তারাবির বিষয়ে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক। আতিয়া মোহাম্মদ সালেম মসজিদে নববীতে দরস দিতেন ।আমি তার ক্লাসে বসেছি। তিনি দেড় হাজার বছর তারাবির ইতিহাসের উপরে বই লিখেছেন। দেড় হাজার বছরের ইতিহাস টেনে তিনি বলেন দেড় হাজার বছর পর্যন্ত গোটা মুসলিম বিশ্বে তারাবির নামাজ ২০ রাকআত হয়ে আসছে।
মক্কা-মদিনায় ২০ রাকআত হয়ে আসছে। সাম্প্রতিককালে কিছু লোক ভুল তথ্যের ভিত্তিতে ৮ রাকআত তারাবির কথা বলে লাফালাফি করতেছে। যা আমাদের বাপ-দাদা দেখেনি । আমরা যৌবনকালে দেখি নাই। মক্কা মদিনার ইমামগণ দেখেনি।
এছাড়া ঈসা ইবনে জারিয়া থেকে বর্ণিত সাহাবী জাবের র.এর নামে ৮ রাকআত তারাবির একটি জাল হাদীস তারা উল্লেখ করে থাকে । এই হাদীসটি ঈসা ইবনে জারিয়া এবং ইয়াকুব বিন আব্দুল্লাহ কুম্মি এর মত জাল হাদীস বর্ণনাকারী ও পরিত্যাগ যোগ্য বর্ণনাকারীর মাধ্যমে বর্ণিত। কেউ কেউ সায়েব বিন ইয়াজিদ থেকে কয়েক সনদে বর্ণিত ২০ রাকাআতের বিপরীতে ৮ রাকআত আছে বলে উল্লেখ করে থাকেন । ইমাম ইবনে আব্দিল বার বলেছেন ৮ রাকআত এর বর্ণনা মারাত্মক ভুল। আল ইস্তিসকার ২/৬৮।
বিস্তারিত জানার জন্য আমার লেখা ১২৬ পৃষ্ঠায় মুদ্রিত বই তারাবির নামাজ ২০ রাকআত কেন পড়তে পারেন।
ইসলাম প্রতিদিন বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন[email protected]
লেখক: বিশিষ্ট লেখক, গবেষক, ইসলামিক স্কালার ও মুহাদ্দিস ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা।