ড. মুশতাক আহমদ।।
খেয়াল করে শুনবেন ও মনে রাখবেন। মহামারী কঠিনভাবে চলছে। আল্লাহ আমাদেরকে এখনো বাঁচিয়ে রেখেছেন, এখনো তাওবা ইস্তিগফারের সুযোগ দিয়ে রাখছেন তাই শোকর আলহামদুলিল্লাহ। আমি সবার কাছে দুআ চাই, শরীর খুব ভাল যাচ্ছে না। দুআ চাই যেন, যে কয়দিন বেঁচে থাকবো তাওবা ইস্তিগফারের সাথে বেঁচে থাকতে পারি। হায়াত মওত অন্য কারো হাতে নয়; একমাত্র মহান আল্লাহ পাকের হাতে। সবাই ফানা হয়ে যাবে। চিরন্তন স্রেফ আল্লাহ। আমি নিজেও মুতাআল্লিকীন সকলের জন্য দুআ করি, আল্লাহ পাক সকলকে ঈমান ও আমলের সাথে দীর্ঘ হায়াত নসীব ফরমান। আমীন।
হায়াত মুমিন বান্দার জন্য আযীম রহমত। হায়াত বেশী পাওয়া গেলে নেক আমল বেশী করা যায়। আল্লাহ পাকের বেশী মারিফাত হাসিল করা যায়। এ জন্য হায়াতের কদরদানী করবেন। কদরদানী করা জরূরী এবং নেক হায়াতের দুআ করা ও দুআ চাওয়া উভয়ই সুন্নাত।
আবার মওত মুমিন বান্দার জন্য তোহফা। আযীম তোহফা। মোবারক সেতুপথ। আল্লাহর বান্দা তো আল্লাহর কাছে ফিরে যেতে পাগল। কিন্তু একমাত্র সেতুপথ মওত ছাড়া পৌঁছার যে বিকল্প নেই। প্রিয় বান্দাকে কাছে পাওয়ার জন্য ওপারে কী শান নিয়ে অপেক্ষায় আছেন স্বয়ং মহামহিম আল্লাহ; আপনার ঈমান ও আমলের বরকতে ফুলেল পথ রচনাপূর্বক আপনার উদ্দেশ্যে অপলক নেত্রে তাকিয়ে আছে জিব্রীল মিকাঈল সহ কত হাজার ফেরেশতা। হূর গেলমান সবাই শুধু গুনছে সাক্ষাতের সেই মহেন্দ্রক্ষণ।
দুনিয়ার সকল ভাল মানুষ সবই তো ওপারে।
সকল নবী রাসূল, সাহাবী তাবিয়ী, আওলিয়া ও আকাবির যাদের সাথে একটু সাক্ষাৎ পাওয়ার কত অভিলাস আমাদের প্রত্যেকের আন্তরে; এক নজর দেখবো কিংবা একটু হাত মিলাবো- এ আশায় আমরা কত না কষ্ট সাধনা করে থাকি; একবার স্বপ্নে হলেও তাঁদেরকে দেখার কত আকুতি আমাদের, আর সেই তাঁরা কিনা সাবাই একসঙ্গে শুধু দেখা নয়; মায়া মমতার সাথে আপনাকে বুক মিলিয়ে মহাশান্তির আবাসে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য দণ্ডায়মান অপেক্ষমান ওপারে। মাঝে বাধা হয়ে আছে কেবল মওত নামের এই সেতুটি।
তাই তো হযরত বিলাল রা. ওফাতের পূর্বের দিন বড় উৎফুল্ল হয়ে বার বার গেয়ে যাচ্ছিলেন; ‘গাদান নালকিল আহিব্বাহ, মুহাম্মাদান ওয়া হিযবাহ’ উহ্! কী আনন্দ, কী আনন্দ। এই তো আগামী কালই আমরা মিলিত হতে যাচ্ছি বন্ধুদের সাথে, আল্লাহর হাবীব সা. ও তাঁর সাহাবীদের সাথে। (-নিজেদের মনে মনে ঈমান তাজা করুন, আপনিও অনুভব করবেন সান্নিধ্য আনন্দের সেই অনুভূতি)
দোস্ত আহবাব! নিজকে মোরাকাবার মধ্যে ঢুবিয়ে রাখবেন। দস্ত বকার দিল বইয়ার। প্রথমে দিল লাগিয়ে তাওবা ইস্তিগফার কালেমা তায়্যিবা কালেমা শাহাদাত দুরুদ শরীফ খুব ইখলাসের সাথে পড়ে নিন। প্রয়োজনে কোন আপনজনের মওতের দৃশ্য খেয়ালে উপস্থিত রেখে পড়ুন। যেন মনের মধ্যে ইখলাসের প্রভাব ধরে রাখা যায়। তারপর পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহে বর্ণিত মুমিন বান্দার মওতের চিত্র; কী সম্মানের সাথে একজন মুমিন বান্দাকে ফেরেশতাগণ দুনিয়া থেকে রূহ কবজ করছেন, কী ইজ্জতের সাথে তার রূহ ইল্লিয়্যীনের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন, কী আজীব একরামের সাথে তাকে ওপারের সকলের সাথে পরিচিত করিয়ে দিচ্ছেন, নবী ওলীগণের রূহ কী মায়া মমতার সাথে আপনাকে জড়িয়ে ধরছেন, কোলাকোলি করছেন, কত সুন্দর সুন্দর কথা বলে আপনাকে আনন্দ দিয়ে চলছেন- এ মর্মে বর্ণিত কুরআনের আয়াতগুলো পড়ুন আর মর্মকথা ভাবতে থাকুন, শরীর দিয়ে অনুভব করতে চেষ্টা করুন। দেখবেন আপনার মন জুড়িয়ে গিয়েছে।
তারপর কবরের দৃশ্য দেখুন; আপনার চারদিকে আপনার এতকালের নামায রোযা তিলাওয়াত ইত্তিবায়ে সুন্নাত যিকির ইত্যাদি আমল সবাই আপনাকে কী নয়নাভিরাম পাহারাদারের মত ঘিরে আছে একবার হৃদয় দিয়ে ভাবতে শুরু করুন। মুনকার নকীরের বিনীত কণ্ঠের ছালাম, আল্লাহর হাবীবের মুবারক চেহারায় ফুটন্ত সন্তুষ্টির মিষ্টি হাসি একবার প্লিজ হৃদয় খুলে অনুভব করুন। জান্নাতের ফরস ও সুবাতাস গায়ে লাগলে কেমন অনুভব হয় একটু ভেবে খুজে পেতে চেষ্টা করুন। দেখবেন কী প্রশান্তি মাওলা পাক আপনার জন্য ওখানে রেখে দিয়েছেন।
তারপর পবিত্র কুরআনের সূরা আররহমান, সূরা ওয়াকিয়া, সূরা ইনসান, সূরা ইয়াছীন সহ আপনার যতটুকু সাধ্য কুলায় পড়ুন, মর্মকথা উপলব্ধি করুন, আর খেয়াল পরিচালনা করে জান্নাতের গলিতে গলিতে ভ্রমন করুন, প্রবাহিত নদী ও নহরের স্রোত দেখুন, দেখুন সেখানকার অনাবিল সৌন্দর্য। সবুজ আঙ্গিনায় চলতে চলতে বৃক্ষরাজির দৃশ্য খেয়াল করুন, পাতার রং দেখুন, ফুলের ঘ্রান নিন, রকমারি ফলের জোড়া জোড়া বাগান, আহারের জন্য প্রস্তুত স্তুপ দেখুন, পাখ পাখালির কলরব, ঝর্ণার দৃশ্য, কাচারী বাগানবাড়ী বসতগৃহ বেডরুম সাজসজ্জা জানালা দরজা বিছানা ইত্যাদি যা কিছু পবিত্র কুরআনে বলা আছে সবকিছু নয়ন ভরে দেখতে থাকুন। বাবা মা সন্তান সন্তুতিরা সবাই তো আছেই জান্নাতের নিজ নিজ স্থানে। এখানে আপনি ও আপনার স্ত্রী দুজন কত আনন্দ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন একটু ভাবুন আর স্মিত হাসুন। আপনার স্ত্রী আপনার কানে কানে এগুলির মধ্যে নতুনভাবে সাজিয়ে আরো উন্নত নয়নাভিরাম দৃশ্য তৈরীর প্রস্তাব করছেন সেটিও মনোযোগ দিয়ে শুনুন, পাশ্বে থাকা খাদিম ফেরেশতাদের সাথে আলাপ করুন।
আপনি ও আপনার স্ত্রীর জন্য কোটি কোটি নূরের গাড়ী, মহামান্য ও রাজকীয় প্রটোকল কত বিশাল কত বিস্তৃত একটু অনুমান করুন। এভাবে মুমিন বান্দার জন্য পবিত্র কুরআন মহান আল্লাহ যা যা ওয়াদা করেছেন সবগুলো সম্ভব হলে পড়তে থাকুন, বুঝতে থাকুন, দেখতে থাকুন, শরীরের মধ্যে অনুভূতি জাগ্রত করতে থাকুন- নিশ্চিত আপনি নিজকে খুজে পাবেন আপনার মন বারবার কলেমা শরীফ পড়ছে, আল হামদুলিল্লাহ বলে যাচ্ছে, মাঝে মাঝে জাগতিক বন্ধন উপেক্ষা করে নেচে উঠছে।
আপনি অনুভব করবেন কখনো আপনার মন চাইবে, উহ্ তাহলে (মোরাকাবার) এই সুযোগে একবার আল্লাহর হাবীবের সাথে সাক্ষাৎ করে আসি। হয়তবা খেয়াল করতে করতে চলেই গেলেন সেখানে। জান্নাতুল ফিরদাউসের সর্বোচ্চ সীমায়। কী মহামহীম মর্যাদার আসন! মহানবী সা. এর অতি সান্নিধ্যে বসে কত কি সুখ দুখের আলাপচারিতা। অনুভব করছেন, ওয়া! কী মমত্ববোধ দয়াল নবীর প্রাণে! রাহমাতুল লিল আলামীনের কলিজায়! আপনি যেন সুখের সাগরে ভাসিয়ে চলছেন নিজকে। দয়াল নবী দয়া পরবেশ হয়ে কখনো নিজ থেকে যেন বলছেন, ওহে প্রিয় বৎস! আমার সাথে চলো, তোমাকে নিয়ে যাবো মাওলা পাকের দরবারে, মাওলা পাকের সান্নিধ্যে, মাওলা পাকের দীদারে।
যাক অনেক কথা বলে ফেললাম। হয়ত উচিৎ হয়নি। দোস্ত আহবাব! মাফ করে দিবেন। শরীরটা খুব ভাল নয়। কভিড পিরিয়ডের সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে পরিবার থেকে এই তো ৬ নং অভিযাত্রীকে বিদায় দিলাম কবরের দুয়ারে। অবশিষ্টদেরকেও প্রস্তুত থাকতে তালকীন করছি। নিজেও অসুস্থ। পিজিতে চলছে চিকিৎসা, চলছে নানাবিদ পরীক্ষা নিরীক্ষা।
আমাদের মালিক আমরা নই। আমাদের মালিক মহান আল্লাহ। মালিক যখন যা ভাল মনে করবেন সেটাই গোলামের স্বতস্ফুর্ত সিদ্ধান্ত। ‘জামে তাছলীম ওয়া রেযা ছে মাস্ত কর মাছরূর কর’ আমীন।
-এটি