মাওলানা লাবীব আব্দুল্লাহ।।
কওমী মাদরাসার শিশু বিভাগ বা মকতব, হিফজ বিভাগের তালেবে ইলমদের ওপর নানা শারিরীক নির্যাতনের খরব পাওয়া যায়৷ মাদরাসার শিক্ষক হিসেবে বাস্তব অভিজ্ঞতাও রয়েছে আমার৷
শিক্ষাবিষয়ক দায়িত্বে আছি সেই আটাশ বছর থেকে৷ এই দায়িত্ব ছেলেদের মাদরাসায়, মহিলা মাদরাসায় এবং কিন্ডার গার্টেনে৷ প্রহার করে করে পড়াতে হয় না আমাকে৷ স্নেহ মমতা ও ভালোবাসা ও মমতাপূর্ণ তাম্বীহ ও সতর্কতাই যথেষ্ঠ৷ একজন শিক্ষক মহিলা মাদরাসার ছাত্রীকে প্রহার করেছে৷ বিস্তারিত বললাম না৷ এলাকাবাসী মাদরাসায় এসে যা করার তাই করেছে৷ বিস্তারিত বলছি না৷ পুরষ কেন নারীকে প্রহার করবে তাও আবার ছাত্রীকে৷ নববী ইলমের শিক্ষার্থীকে৷ অমানুষরা নাবালেগ তালেবে ইলমকে প্রহার করে৷ তারা প্রকত মানুষই নয়; শিক্ষক তো দূর কি বাত৷
মাদরাসা নববী আদর্শে পরিচালিত হবে৷ নবীজি মুআল্লিম ছিলেন৷ নবীজির শিক্ষার নানা মেথড নিয়ে পড়ালেখা করেছি কিন্তু প্রহারের কোনো নজির পাই নি এখনও৷
আদর সোহাগ, মমতা স্নেহ ছিলো নবীজির শিক্ষা পদ্ধতিতে৷ ছিলো নানা কৌশল৷ মাদরাসা শিক্ষায় প্রহার কেন কীভাবে প্রবেশ করলো তা গবেষণার বিষয়৷ তাও আবার শিশুদের প্রহার করা৷ উস্তাজ কেন তালেবে ইলমকে আপন সন্তান মনে করে না? কেন সন্তানের মতো আদর সোহাগ করতে পারে না? যদি না পারে সে আলু পটলের ব্যবসা করবে পড়াতে আসবে কেন? কেন শিক্ষকতা করবে? মিডিয়ার এই যুগে একটি ছোট ঘটনা প্রচারিত হয় দেশজুড়ে৷ বিশ্বজুড়ে৷ এমনিতেই মাদরাসা শিক্ষা নিয়ে নানা সমালোচনা৷ নানা মিথ্যা অভিযোগ৷ দেশী বিদেশী নানা এজেন্ডা মাদরাসা নিয়ে৷
এই সময়ে শিশুকে প্রহার তরে মহিলা মাদরাসায় ছাত্রীদের প্রহার করে কথিত শিক্ষকরা কী উপকার করছে মাদরাসার? স্কুলেও কথিত শিক্ষকরা প্রহার করে না এমন নয়৷ আমি সেই দিকে আজ যাচ্ছি না৷ স্কুলে প্রহার নিষিদ্ধ আইনত৷ কওমী মাদরাসায় প্রহার করে কোনো তালেবে ইলমকে ভালো আলেম বানাতে পেরেছেন তা আমার জানা নেই৷ অপরাধীকে আদর ও ভালোবাসা দিয়ে উস্তাজ ভালো আলেম বানিয়েছেন তার অনেক নজির রয়েছে৷ শরীয়ার সীমায় রেখে তারবিয়ার জন্য হালকা শাস্থির বিধানের কথা বলছি না আমি৷ অধিক প্রহার, শিশু নির্যাতন, মহিলা মাদরাসায় বালিকাদের প্রহারের কথা বলছি৷ এইসব সীমাহীন প্রহার আমাদের স্বার্থেই বন্ধ হওয়া প্রয়োজন৷
আমি এমন অনেকের কথা জানি, যারা মাদরাসায় প্রহৃত হয়ে পালায়ন করে স্কুলে ভর্তি হয়েছে৷ অনেকে প্রহৃত হয়ে মাদরসা ত্যাগ করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে তার পরিবারের কাউকে আর মাদরাসায় ভর্তি করাব না৷ প্রতিটি শিশু ফুলের মতো৷ নানা বর্ণের ফুল৷ নানা রঙের৷ ফুলকে ভালোবাসতে হয় আঘাত নয়৷ মাদরাসার প্রতিটি তালেবে ইলম ফুল৷ মহিলা মাদরাসার ছাত্রীদের ‘রিফকান বিল কাওয়ারিরের’ কথা মনে রেখে তারবিয়া দিতে হবে৷ প্রহার নিষধ হোক মহিলা মাদরাসায়৷ প্রহার নিষেদ হোক মকতবে৷ হিফজ বিভাগে৷
এ বিষয়ে কিছু প্রস্তাবনা
১. বেফাক, ইত্তেহাদ, তানজিমসহ সবগুলো শিক্ষাবোর্ড দ্রুত প্রহার বিষয়ক শরীয়াহর বিধানসহ নির্দেশনা জারি করতে পারে৷
২. আর রাসুল আল মুআল্লিম ওয়া আসালিবুহু ফিত তালিম কিতাবটি এবং এই জাতীয় কিতাব উস্তাজদের তালিমের ব্যবস্থা নিতে হবে৷
৩. শিক্ষক প্রশিক্ষণের আয়োজন করে আদর্শ শিক্ষাকের গুনাবলীর উপর দরস দিতে হবে এবং প্রহার বিষয়ে শরীয়াহর বিধান জানাতে হবে৷
৪. আর্থিক টেনশন, মানসিক সমস্যার কারনে যারা তালেবে ইলমদের রাগে প্রহার করে তাদের শিক্ষকতার পদ থেকে বাদ দিতে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে৷
৫. উস্তাজদের জন্য শিক্ষকনির্দেশিকা তৈরি করে প্রচার করা যেতে পারে৷ দেশের সেরা শিক্ষাবিদগণ এ নির্দেশিকা তৈরি করবেন ৷বোর্ডগুলো লোক নির্ধারণ করে দেবে৷
৬. শিক্ষক নিয়োগের সময় শিক্ষকের মেজায, আখলাক, পারিবারিক বিবরণ, কোন মাদরাসায় কোন পরিবেশে পড়ালেখা করেছেন, শিশু অধিকার সম্পর্কে কতটা সচেতন তা যাচাই করে শিক্ষক নিয়োগ করা যেতে পারে৷
৭. শিক্ষকদের আর্থিক সচ্ছলতার জন্য যৌক্তিক পরিমান ওজিফা ও বেতন নির্ধারণ এবং যৌক্তিক পড়ানোর সময়সূচি ও পর্যাপ্ত ছুটি প্রদানের সুযোগ রেখে পরীক্ষামূলক ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে৷ নূরানী নাযেরা ও হিফজ বিভাগের জন্য এই ব্যবস্থা৷ পরিবেশ হোক শিশুবান্ধব ও শিক্ষাবান্ধব৷
লেখক: পরিচালক, ইবনে খালদুন ইনস্টিটিউট
-কেএল