মুফতি আবদুল মাজিদ।।
কাদিয়ান ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের গুরুদাশপুর জেলার একটি গ্রামের নাম। এই গ্রামে ১৮৩৯ সালে গোলাম মুর্তজার ঘরে জন্ম নেয় মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী। ১৪শ বছর ধরে চলে আসা ইসলামের সর্বজন স্বীকৃত বিশ্বাসের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার কারণে কুরআন ও সুন্নাহর স্পষ্ট বক্তব্যানুযায়ী সে ও তার অনুসারীরা কাফের। ১৮৮৯ সালে মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী আহমদীয়া মুসলিম জামাত নামে একটি জামাত গঠন করে।
তার এক একটি ইসলাম বিরোধী বিশ্বাসকে এই জামাতের সামনে ইসলামী আকীদা-বিশ্বাস বলে চালিয়ে দিতে থাকে। তার এসকল ইসলাম বিরোধী বিশ্বাস ও আকীদা অনুসরণ করেই গড়ে ওঠে নতুন এক ধর্মানুসারী দল ও গোষ্ঠি। এদের যদি ভিন্ননাম বা নতুন কোন ধর্ম হত তাহলে আমাদের তা নিয়ে কোন চিন্তাই ছিল না। ছিল না মাথাব্যথার কোন কারণ। কিন্তু এর নাম মির্যা কাদিয়ানী দিয়েছে “ইসলাম”। ফলে যেটা ইসলাম নয় বরং কুফুর সেটাই এখন ইসলামের নামে চলছে। এটাই এখন দুঃশ্চিন্তার কারণ।
বিষয়টি এত ভয়াবহ কেন?
জাপানি টয়োটা গাড়ির উপর মানুষের সীমাহীন আস্থা ও ভালবাসা। এখন এক প্রতারক ঢাকায় বসে একটি গাড়ীর কারখানা খুললো। সে ভাবল, আমি যদি নতুন নাম দিয়ে চালাই তাহলে বাজারে চলবে না। তাই কোম্পানির নতুন কোন নাম না দিয়ে মার্কেটে চলে এমন একটি নাম দিতে হবে। তাই সে বিশ্বে সর্বাধিক গাড়ি উৎপাদনকারী কোম্পানি টয়োটার নাম বেছে নিল এবং টয়োটার লেবেল লাগিয়ে টয়োটার নামে চালানো শুরু করল। পৃথিবীর কোন সরকার ও বিবেক-বুদ্ধি এই প্রতারককে এই সুযোগ দিবে কি? সে নতুন নামে বাজারজাত করতে পারে তাতে কোন আপত্তি নেই। কিন্তু অন্য কোন প্রতিষ্ঠিত গ্রহনযোগ্য কোম্পানির লোগো ও আইডেন্টিটি ছিনতাই করবে সে সুযোগ তাকে দেয়া হবে না। কেউ দিবে না।
কাদিয়ানীরা ঠিক এই প্রতারণাই করছে। তারা ইসলামের চৌদ্দশত বছর ধরে চলে আসা অসংখ্য মৌলিক বিশ্বাসকে বাদ দিয়ে সে স্থানে নিজেদের বানোয়াট মনগড়া অসংখ্য বিশ্বাসকে ঢুকিয়েছে। এসকল বানোয়াট বিশ্বাসের যদি নুতন কোন নাম দিত আমাদের বা উম্মতে মুসলিমার কোন আপত্তি থাকত না। কিন্তু আপত্তি ও উৎকণ্ঠা এখানেই যে, এসব কুরআন সুন্নাহ বিরোধী বিশ্বাসের নাম দেয়া হয়েছে “ইসলাম”। যা উম্মতে মুসলিমা কখনই মেনে নেয়নি, মেনে নিবেও না। কোন বিবেক কোন রাষ্ট্র এই প্রতারণাকে প্রশ্রয় দিতে পারে না।
টয়োটার বাস্তব পরিচয় ও মান সম্পর্কে অজ্ঞ অসংখ্য মানুষ যেমন কেবল লোগো দেখেই এই প্রতারকের গাড়ীকে টয়োটা গাড়ী মনে করে কিনে নিবে তেমন ইসলামের আকীদা-বিশ্বাস সম্পর্কে অসচেতন অসংখ্য মানুষ কাদিয়ানী ধর্মের উপর ইসলামের প্রতারণামূলক লোগো দেখে এটাকে মহান স্রষ্টা আল্লাহর পাঠানো দ্বীন মনে করবে। অথচ এটা মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর ধর্ম, আল্লাহর প্রেরিত ধর্ম নয়। আল্লাহর প্রেরিত ধর্ম কেবল সেটাই যা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে দুনিয়াবাসী পেয়েছে।
তাই রাষ্ট্রের উচিত সে যেমন ভেজাল পণ্য থেকে জাতিকে উদ্ধারে তৎপর, প্রতারকের হাত থেকে প্রতারিতকে উদ্ধারে সচেষ্ট তেমনি ভেজাল ধর্ম বিশ্বাসকে “ইসলাম” বলে যারা প্রতারণা করছে তাদের হাত থেকে জাতিকে উদ্ধার করাও সরকারের দায়িত্ব। যাতে করে কোন প্রতারক ইসলামের লোগো ব্যবহার করে প্রতারণা করতে না পারে। তাই এসকল প্রতারকরা অন্য যে কোন লোগো ব্যবহার করতে পারে আপত্তি নেই। সে ব্যাপারে তারা পূর্ণ স্বাধীন। কিন্তু ইসলামের লোগো ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা যুক্তি-বুদ্ধি ও বিবেকের দাবি। বিষয়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ এই জন্য যে, তা আখেরাতের অনন্তকালের সাথে সম্পর্কিত।
মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর দাবিসমূহ :
১. আল্লাহ হওয়ার দাবি : মির্যা সাহেব বলেন, আমি স্বপ্নে দেখলাম, আমি খোদা। পরে বিশ্বাস করলাম সত্যিই আমি খোদা। (রুহানী খাযায়েন ৫/৫৬৪) উল্লেখ্য রুহানী খাযায়েন মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর ৮৪টি বইয়ের সমষ্টি যা ২৩ ভলিয়মে কাদিয়ানীরা ছেপেছে। ইসলামের প্রথম ও প্রধান কথা হল, আল্লাহ এক। বহু ঈশ্বরবাদ মোটেও ইসলাম নয়। কিন্তু কাদিয়ানীরা এটাকে ইসলাম বলে প্রতারণা করছে।
২. মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী স্বয়ং নিজেকে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হওয়ার দাবি করেছেন। (রুহানী খাযায়েন ১৮/২০৭)
৩. রাসূল হওয়ার দাবি: মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী বলেন, সত্য খোদা তিনি যিনি কাদিয়ানে তাঁর রাসূলকে পাঠিয়েছেন। (রুহানী খাযায়েন ১৮/২৩১)
৪. নবী ও রাসূল একসাথে দু’টোর দাবি: তিনি লিখেন, আমার দাবি আমি নবী ও রাসূল। (রুহানী খাযায়েন ১৮/২১১)
৫. কেয়ামতের পূর্বে আগমনকারী ঈসা আ. হওয়ার দাবি: তিনি বলেন, আমি (আল্লাহ) তোমাকে মারয়াম পুত্র ঈসা বানিয়েছি। (রুহানী খাযায়েন ৩/৪০৯)
৬. ইমাম মাহদী হওয়ার দাবি: তিনি বলেন, আল্লাহ আমাকে সুসংবাদ দিয়েছেন, যেই ঈসার অপেক্ষা তারা করছে এবং যেই সৌভাগ্যবান মাহদীর তারা অপেক্ষা করছে সে স্বয়ং আপনিই। (রুহানী খাযায়েন ৮/২৭৫) এভাবেই তিনি একের পর এক দাবি করে গিয়েছেন। তার এজাতীয় দাবির সংখ্যা পঞ্চাশোর্ধ। মির্যা কাদিয়ানীর কিছু উদ্ভট দাবি
৭. ঈসা আ.-এর মা মারয়াম হওয়ার দাবি: তিনি বলেন, হে মারয়াম, তুমি এবং তোমার স্বামী জান্নাতে থাক। (রুহানী খাযায়েন ১/৫৯০)
৮. মহিলাদের মত মাসিক ঋতুস্রাব হওয়ার দাবি। (রুহানী খাযায়েন ২২/৫৮১)
৯. গর্ভবতী হওয়ার দাবি। (রুহানী খাযায়েন ১৯/৫০)
১০. আল্লাহর স্ত্রী হওয়ার দাবি এবং আল্লাহর সাথে যৌন ক্রিয়ায় লিপ্ত হওয়ার দাবি। (নাউযুবিল্লাহ) (ইসলামী কুরবানী, ট্রাক্ট নং ৩৪, পৃ. ১৩, কাজী ইয়ার আহমদ কর্তৃক রচিত। তিনি মির্যা কাদিয়ানীর মুরিদ ছিলেন।) স্ত্রী, সন্তান, যৌনক্রিয়া-এসবই আল্লাহ তাআলার জন্য চরম অবমাননাকর, যার নিন্দা আল্লাহ তাআলা কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় করেছেন। যেমন : সূরা জিন, আয়াত ৩।
কাদিয়ানী ধর্মবিশ্বাস সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজদের আবিস্কৃতকাদিয়ানী ধর্মবিশ্বাস সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আবিস্কৃত ধর্ম হওয়ার কথা স্বয়ং মির্যা কাদিয়ানী তার বিভিন্ন পুস্তকে স্বীকার করেছেন। তিনি লিখেছেন:
১. ব্রিটিশ সরকারের আনুগত্য করার অর্থ হল, আল্লাহর ইবাদত করা। (রুহানী খাযায়েন ৬/৩৮১) ব্রিটিশ সরকারের সেই আনুগত্যের ইবাদত করতে যেয়েই মির্যা গোলাম আহমদ এই ধর্ম সৃষ্টি করেছেন।
২. ব্রিটিশ সরকারের স্বার্থরক্ষা প্রকৃতার্থে আল্লাহর স্বার্থ রক্ষা করা। (রুহানী খাযায়েন ৬/৩৮১)
৩. ব্রিটিশ সরকারের অবাধ্যতা আল্লাহ, রাসূল ও ইসলামের অবাধ্যতা। (রুহানী খাযায়েন ৬/৩৮১)
৪. আমি বরাবর এ মত প্রকাশ করেছি যে, ইসলামের দু’টি অংশ। এক. আল্লাহর আনুগত্য। দুই. ব্রিটিশ সরকারের আনুগত্য। (রুহানী খাযায়েন ৬/৩৮০)
৫. মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী অবশেষে নিজেই স্বীকার করেছেন, “আমি ব্রিটিশ সরকারের লাগানো চারাগাছ”। (মাজমুয়ায়ে ইশতেহারাত ২/১৯৮)
৬. আমি সত্যি সত্যিই বলছি, (ব্রিটিশের মত) অনুগ্রহশীল সরকারের অকল্যাণ কামনা করা একজন হারামী ও বদকারের কাজ। (রুহানী খাযায়েন ৬/৩৮০)
বঙ্গবন্ধু ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের একজন বীর সৈনিক ছিলেন। বঙ্গবন্ধু লিখেন : “ইংরেজদের সাথে আমাদের লড়তে হবে-এই শিক্ষাও হাশিম সাহেব আমাদের দিচ্ছিলেন। আমাদেরও ইংরেজদের বিরুদ্ধে একটা জাত ক্রোধ ছিল। হিটলারের ফ্যাসিস্ট নীতি আমরা সমর্থন করতাম না। তথাপি যেন ইংরেজদের পরাজিত হওয়ার খবর পেলেই একটু আনন্দ লাগত।” (অসমাপ্ত আত্মজীবনী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, পৃ. ৩৫)
বঙ্গবন্ধু ইংরেজদের ব্যাপারে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ ছিলেন। ব্রিটিশদের তাড়ানোর ব্যাপারে যে কেউ ডাক দিলে তার সাথে সংগ্রামে নেমে পড়তেন। বঙ্গবন্ধুর কলমেই দেখুন : “ইংরেজদের বিরুদ্ধে আমার মনে বিরূপ ধারণা সৃষ্টি হল। ইংরেজদের এদেশে থাকার অধিকার নেই। স্বাধীনতা আনতে হবে। আমি সুভাষ বসুর ভক্ত হতে শুরু করলাম।” (অসমাপ্ত আত্মজীবনী, পৃ. ৯)
সুতরাং ব্রিটিশের বিরুদ্ধে যে বঙ্গবন্ধু সংগ্রাম করে গেছেন, ব্রিটিশকে উৎখাত করার জন্য লড়াই করেছেন সেই বঙ্গবন্ধু ও তার সহযোদ্ধাদেরকে আজ কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা হারামী ও বদকার বলে গালী দিবে আর এদেশবাসী মেনে নিবে তা হতে পারে না। মহান আল্লাহর ব্যাপারে মির্যা কাদিয়ানীর কটূক্তি ও রুচিহীন বক্তব্য-
১. ঐ আল্লাহ যার আয়ত্তে ছোট থেকে ছোট বস্তু তার থেকে মানুষ কোথায় পালাবে? তিনি বলেন, আমি (আল্লাহ) চোরের মত গোপনে আসব। (রুহানী খাযায়েন ২০/৩৯৬)
২. একবার আমার ইলহাম হল, আল্লাহ নিজের ওয়াদামত কাদিয়ানে অবতীর্ণ হবেন। (তাযকেরাত : পৃ. ৩৫৮, ৪র্থ এডিসন)
৩. স্বপ্নে দেখলাম, আমি খোদা এবং বিশ্বাস করলাম আসলেই তাই। (রুহানী খাযায়েন ৫/৫৬৪)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে রুচিহীন বক্তব্য-
১. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দ্বারা দ্বীন প্রচারের কাজ পরিপূর্ণ হয়নি। তিনি পূর্ণ প্রচার করেননি, আমি পূর্ণ করেছি। (রুহানী খাযায়েন ১৭/২৬৩, দ্র. টিকা) তবে কি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ প্রদত্ত দায়িত্বের সাথে খেয়ানত করেছেন?
২. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ খ্রিষ্টানদের হাতের পনির খেত অথচ প্রসিদ্ধ আছে যে, তাতে শুকরের চর্বি থাকত। (আল-ফযল ২২-২-১৯২৪)
৩. মুহাম্মদ পুনরায় আমাদের মধ্যে আগমন করেছেন এবং পূর্বের থেকেও নিজ মর্যাদায় আরও বেশি অগ্রগতি অর্জন করেছেন। যে পূর্ণাঙ্গ মুহাম্মদকে দেখতে চাও সে কাদিয়ানে গোলাম আহমদকে দেখে যাও। (কাব্যের অনুবাদ) (বদর, কাদিয়ান, ২৫-১০-১৯০৬)
তার বক্তব্য থেকে একথা স্পষ্ট মির্যা কাদিয়ানী পূর্ণাঙ্গ মুহাম্মদ আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপূর্ণাঙ্গ মুহাম্মদ। এখানে মির্যা কাদিয়ানী নিজেকে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেও দাবি করেছেন।
নবীদের ব্যাপারে কুৎসা রটনা-
১. ইউরোপের লোকদের মদ এভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করার কারণ হল, হযরত ঈসা আ. মদ পান করত। তা কোন রোগের কারণে অথবা পুরাতন অভ্যাসের কারণে। (রুহানী খাযায়েন ১৯/৭১)
২. স্বরণ থাকা দরকার যে, তার (ঈসা আ.) কোনো এক পর্যায়ের মিথ্যা বলার অভ্যাস ছিল। (রুহানী খাযায়েন ১১/২৮৯)
৩. দুনিয়াতে নবী কম আসেনি। তবে আমি কারো চেয়ে জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় কম নই। (রুহানী খাযায়েন ১৮/৪৭৭)
কুরআন সম্পর্কে কটূক্তি ও অবমাননাকর বক্তব্য
১. কুরআন কঠোর ভাষার রাস্তা ব্যবহার করেছে এবং কুরআন শরীফ অশ্লীল গালি দিয়ে ভর্তি। (রুহানী খাযায়েন ৩/১১৫-১৬)
২. কুরআন আল্লাহর কিতাব ও আমার মুখের কথা। (তাযকেরাত, পৃ. ৭৭, ৪র্থ এডিসন)
৩. কুরআনকে আমি কাদিয়ানের নিকটবর্তী স্থানে অবতীর্ণ করেছি। মির্যা সাহেবের উপর নাযিল হওয়া ওহী। (তাযকেরাহ ৫৯, দ্র. ৪র্থ এডিসন)
৪. তিনটি শহরের নাম অত্যন্ত মর্যাদার সাথে কুরআনে উল্লেখ আছে। মক্কা, মদীনা ও কাদিয়ান। (রুহানী খাযায়েন ৩/১৪০)
এটা সুস্পষ্ট মিথ্যাচার। কুরআনের কোথাও কাদিয়ান শহরের নাম নেই। এমন অসংখ্য মিথ্যা জালিয়াতী আর প্রতারণার উপর এই কাদিয়ানী ধর্ম দাঁড়িয়ে আছে। আর কিভাবে তারা আল্লাহ, রাসূল, নবীগণ ও কুরআন নিয়ে কটূক্তি করে তার সামান্য নমুনা আপনাদের সামনে পেশ করলাম। নতুবা এ কটূক্তির তালিকা এত দীর্ঘ, যদি তা লিপিবদ্ধ করা হয় তাহলে কয়েক খণ্ডের একটি বই রচিত হতে পারে। ইসলামে খতমে নবুওয়াতের বিশ্বাস ও মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী ইসলাম কয়েকটি মৌলিক বিশ্বাসের উপর দাঁড়িয়ে আছে, যেগুলোকে ইসলামের মেরুদণ্ড বলা হয়। সেগুলো হল-
১. তাওহীদ তথা আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়।
২. রেসালাত তথা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর পক্ষ থেকে শেষ রাসূল ও নবী হিসাবে প্রেরিত।
৩. আখেরাত তথা মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের বিশ্বাস। কাদিয়ানীরা ইসলামের এই মেরুদণ্ডের দ্বিতীয়টিকে ভেঙ্গে ফেলেছে। তারা মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে শেষ নবী বলে বিশ্বাস করে। মুসলিম সমাজে তীব্র প্রতিরোধের আশংকায় তারা এটাকে অনেক সময় গোপন করলেও তাদের ধর্মের মূল বই পুস্তকে তারা তা লিখে থাকে এবং তা বিশ্বাসও করে।
যেমন মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী লিখেন:
১. সত্য খোদা তিনি, যিনি কাদিয়ানে তাঁর রাসূলকে পাঠিয়েছেন। (রুহানী খাযায়েন ১৮/২৩১)
২. (হে মির্যা গোলাম আহমদ) আপনি বলুন, হে লোক সকল! আমি তোমাদের সকলের কাছে রাসূল হয়ে এসেছি। (তাযকেরাহ পৃ.২৯২, ৪র্থ এডিসন) এ উক্তিতে তিনি নিজেকে বিশ্বনবী হওয়ার দাবি করেছেন।
৩. আমার দাবি আমি নবী ও রাসূল। (রুহানী খাযায়েন ১৮/২১১) এই হল মির্যা সাহেবের অসংখ্য দাবির মধ্যে দুই একটি।
৪. তিনি শেষ নবী হওয়ার দাবি করেছেন কিন্তুকাদিয়ানীরা তা স্বীকার না করলেও বিশ্বাস করে। যেমন: কাদিয়ানীদের নিজস্ব পত্রিকা আল-ফযল, ২৮শে অক্টোবর ১৯১৫ সালের সংখ্যায় প্রকাশ পায় : সুতরাং মসীহ (মির্যা কাদিয়ানী) সেই নবী যার আগমন হয়েছে সর্বশেষে। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ নবী ও রাসূল। তাঁর পরে আর কোন ধরনের নবী বা রাসূল আসবে না, এটাই ইসলামের চৌদ্দশত বৎসরের অকাট্য বিশ্বাস। প্রতিটি মুসলমান ইসলামের শুরু থেকে এই বিশ্বাসই পোষণ করে আসছেন। কুরআন সুন্নাহর বক্তব্যও এ ব্যাপারে স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন।
পবিত্র কুরআনের বক্তব্য
১. মহান আল্লাহ বলেন, মুহাম্মদ তোমাদের কারো পিতা নন; বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং সমস্ত নবীদের ধারাবাহিকতা সমাপ্তকারী। (সূরা আহযাব, আয়াত : ৪০)
২. অন্য এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে (ইসলাম) পরিপূর্ণ করেছি, আমার নেয়ামতকে (ইসলাম) পূর্ণতায় পৌঁছে দিয়েছি এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে মনোনিত করেছি। (সূরা মায়েদা, আয়াত : ৩) ইসলাম পূর্ণতা পেয়ে গেছে। ফলে ইসলামের জন্য আর কোন নবী, রাসূল ও ওহীর প্রয়োজন নেই। এমন অসংখ্য আয়াত দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত যে, ইসলামে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর কোন নবী আসার কোন সুযোগ নেই। ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ নবী, আল্লাহর পক্ষ থেকে আর কখনও কোন নবী আসবেন না’-একথাটিও অসংখ্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। নমুনাস্বরূপ দুইটি হাদীস উল্লেখ করা হল,
হাদীস শরীফের বক্তব্য
১. হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার ও আমার পূর্বেকার নবীদের উদাহরণ হল একটি ঘরের মত, যাকে একজন ব্যক্তি অনেক আকর্ষণীয় করে তৈরী করেছে। মানুষ ঘরটি ঘুরে ঘুরে দেখছে এবং বিস্মিত হচ্ছে। কিন্তু ঘরটি পূর্ণ নির্মিত হতে মাত্র একটি ইটের জায়গা বাকি। তাই দর্শকরা বলছিল, একটি ইট যদি এই খালি জায়গায় রাখা হত (তাহলে ঘরটির সৌন্দর্য পূর্ণতা পেত)। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি সেই ইট। আমি শেষ নবী। (বুখারী শরীফ হাদীস নং ৩৫৩৫)
২. হযরত সাওবান রা. থেকে বর্ণিত, তিন বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার উম্মতের মধ্যে ত্রিশজন মিথ্যুক জন্ম নিবে, সকলেই বলবে, সে নবী। (অথচ তারা মিথ্যুক) আমি শেষ নবী। আমার পর আর কোন নবী নেই। (তিরমিযি, হাসান, সহীহ। হাদীস নং ২২১৯, আবু দাউদ, হাদীস নং ৪২৫২)
পূর্বোক্ত আয়াত ও হাদীস দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ নবী। তাঁর পরে আর কোন নবী আসবে না। ইসলামের এই বিশ্বাস এতটাই অকাট্য যে, কাবা শরীফকে আল্লাহর ঘর বলে অস্বীকার করলে তাকে মুসলমান মনে করার যেমন কোন সুযোগ নেই, কুরআনকে আল্লাহর কিতাব হিসাবে অস্বীকার করলে সে যেমন পরিষ্কার কাফের তেমনিভাবে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শেষ নবী হিসাবে অস্বীকারকারী কাফের। সে ইসলামের সীমানা থেকে বের হয়ে গেছে। এখানে কোন ব্যাখ্যা বা কিন্তু-যেহেতুর অবকাশ নেই। তাই কাদিয়ানীরা মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর আরেকজন নবী বলে বিশ্বাস করে কাফের হয়ে গেছে। যেমন মির্যা কাদিয়ানী বলেন, আমার দাবি, আমি নবী ও রাসূল। (রুহানী খাযায়েন ১৮/২১১)
কাদিয়ানী সম্প্রদায় তথা আহমদী সম্প্রদায় সাধারণত স্বীকার করতে চায় না যে, তারা মির্যা গোলাম আহমদকে নবী বলে বিশ্বাস করে। তারা সরলমনা মুসলমানকে প্রথমে বলে সে ইমাম মাহদী ছিল, ঈসা আ. ছিল। মুসলিম সমাজের প্রতিরোধের ভয়ে নবী হওয়ার বিষয়টা তারা লুকাতে চায়। একারণেই আমাদের সমাজের অনেকেই তাদের দ্বারা প্রতারিত হচ্ছে এবং তাদের আসল রূপ সম্পর্কে অন্ধকারে আছে। কিন্তু তাদের মূল বইগুলো ঘাটলে তাদের বিশ্বাসের ভিন্ন চিত্র ফুটে ওঠে। এজন্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কাদিয়ানী সম্প্রদায় এমন এক প্রতারক গোষ্ঠি যারা যা বলে তা বিশ্বাস করে না, আর যা বিশ্বাস করে তা বলে না। (চলবে)
-কেএল