ইজহারুল ইসলাম।
ঘুম থেকে জেগে দেখি একটি সুন্দর সকাল। গুল্মলতা দূর্বাদল সিক্ত একটি সকাল। গাছের এডাল ওডালে ভিতগড়া বিত্তপতি মাকড়সার স্বচ্ছ জালের কোণে কোণে জমে থাকা মুক্তরাঙা শিশির কোণা।
সবে সূর্য উঁকি দিতে শুরু করেছে। সূর্যকিরণ এসে পড়ছে মুক্তরূপ নিশাজলের উপর। তারই কিরণছটার রূপরেখায় বিমহিত দর্শক আমি।
আমি দেখছি সকাল। রূপজৌলুশে অনন্য একটি সকাল। প্রকৃতির ডালি ডালি রূপপ্রসাধানীর বাসন্তী সাজে সেজেছে যেন আজকের সকালটি।
চারদিক থেকে অম্র মুকুলের মহুয়া গন্ধে আমি মাতাল হই। সুবাসছোঁয়া শীতষ্ণ সমীরণ আমার ভেতরে ঢোকে। ভালোলাগায় আমি চোখ বন্ধ করি! শব্দছন্দ বন্ধকরে আমি নিঃশ্বাস নিই। ছাড়ি,আবার নিই। ভেতরটায় আমার বসন্তপ্রকৃতির আবহে চাঙ্গা হয়ে ওঠে।
চোখ মেলে দেখি, ভ্রমর গুণ গুণ করে মুকুলের উপর বসছে, উঠছে আবার বসছে। পুষ্পরস আহরণ করতে করতে। বসছে, উড়ছে, আবারও বসছে।
আমি দেখি, বিত্তগড়া মাকড়সাটিকে ফুড়ুৎ করে উড়িয়ে নিয়ে গেল একটি দোয়েল। রাতভর জাল বুনেও সে নিজের জন্য নিরাপদ অবস্থান তৈরি করতে পারিনি। আমি দেখি ঝরে যেতে গাছের পুরনো লালঠে পাতাটি। দেখি মকমলের মতন উদ্ভূত লাবণ্যভরা কচি সোনা পাতাটি।
কী নেশায় আজ আমায় মাতিয়েছে! কীসের সুর আজ আমায় জাগিয়েছে! কীসের গন্ধ আজ আমায় তাড়িয়ে এনেছে! আমি আজ সকাল নতুন দেখছি! আমি আজকের প্রকৃতি ভিন্ন দেখছি! আমি আজকের আমি'কে প্রথম দেখছি!
নিমিষেই আমার ভ্রম কেটে গেল। আমার অদম্য কৌতূহল দূরীভূত হল। দেখি, কাঁঠাল শাখায় বসে আছে কালো মিশমিশে একটি পক্ষী। নাম তার বসন্ত। নাম তার কোকিল। তখনই কুহু কুহু সুরে সকল রহস্যের মোড়ক উন্মোচন করে জানিয়ে দিল যে আজই বসন্তের প্রথম দিন। তখনই ফাগুনের তপ্তপ্রকৃতির বসন্তকে গ্রহণ করে নিলাম আমি, আমরা ও সকল সৃষ্টকুল।
-এটি