খাদিজা ইসলাম।।
ভাষা আপনা আপনি আসেনি। লড়ে যেতে হয়েছে। লড়াই করতে হয়েছে। বহু ইতিহাস পাড়ি দিয়ে আমরা পেয়েছি মায়ের ভাষা। ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছেন নাম জানা অজানা অনেক ভাষাপ্রেমি। ভাষার প্রতি এতই প্রেম ছিল যে বিন্দুমাত্র কুন্ঠাবোধ করেননি নিজের তাজা প্রাণ ঢেলে দিতে। পুলিশের অতর্কিত গুলির সামনে ও যেন ভাষার প্রতি ভালোবাসাটায় জিতে গেছে ভাষা প্রেমীদের।
আজ আমরা এমনি এক লড়াকু ভাষা সৈনিক সম্পর্কে জানব। ভাষার জন্য তার ত্যাগ তিতিক্ষা সম্পর্কে জানব।
জীবন বাজী রেখে লড়াইয়ে অংশ নেয়া ভাষা সৈনিক আব্দুল গফুর। এখনো বেঁচে আছেন তিনি। ১৯২৯ সালে ১৯ ফেব্রুয়ারিতে রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। মাতা শুকুরুন্নেসা খাতুন এবং পিতার নাম হাজী হাবিব উদ্দীন। ১৯৫৪ সালে স্খনীয় মইজুদ্দিন মাদরাসা থেকে মাধ্যমিক ও ১৯৫৬ সালে সরকারি কবি নজরুল কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। পরবর্তীতে ঢাবিতে সাহিত্য নিয়ে ভর্তি হলেও ভাষা আন্দোলনের তোড়জোড়ে কিছুটা সময় পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়।
ভাষা আন্দোলনের সক্রিয় একজন কর্মী ছিলেন আব্দুল গফুর। নিজেকে ভাষা আন্দোনের পুরোটা সময় নিয়োজিত রেখেছেন। পরবর্তীতে ১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজ কল্যান বিভাগের নিয়মিত ছাত্র হয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন ভাষার দিনগুলোতে।
ছাত্রাবস্থাতেই তিনি কর্ম জীবনে পা রাখা শুরু করেন ১৯৪৭ সালে। ১৯৪৮থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত তমদ্দুন মজলিশের বাংলা মুখপত্র সাপ্তাহিক সৈনিক পত্রিকায় সহ-সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি পত্রিকাটির সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন। ১৯৫৭ সালে দৈনিক মিল্লাত ও ১৯৫৮ সালে দৈনিক নাজাত পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের মে থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত তিনি দৈনিক আজাদ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। এরপর ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ইংরেজি দৈনিক পিপল, ১৯৭৯ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত দৈনিক দেশ পক্রিয়ার সহকারী সম্পাদ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।১৯৮৬ সালে দৈনিক ইনকিলাব প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি তখন থেকে পত্রিকাটির ফিচার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
আবদুল গফুর ১৯৫৯ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের দারুল উলুম (ইসলামিক একাডেমি)-এর সুপারিন্টেন্ডেট হিসেবে কাজ করেন। পরবর্তীতে এক বছর চট্টগ্রামে জেলা যুব কল্যাণ অফিসার হিসেবে কাজ করে। ১৯৬৩ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ এবং ১৯৭২ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত আবু জর গিফারী কলেজে শিক্ষকতা করেন।১৯৮০ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের প্রকাশনা পরিচালক ছিলেন।
পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন তমদ্দুন মজলিস পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর প্রথম বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে দাবি তুলে। এসময় এর প্রতিষ্ঠাতা আবুল কাসেমের সাথে অগ্রণী সহযোগীদের মধ্যে অন্যতম ছিলন আবদুল গফুর।১৯৪৮ সালের ১৪ নভেম্বর তমদ্দুন মজলিসের বাংলা মুখপত্র সাপ্তাহিক সৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হলে গফুর প্রথমে এর সহ-সম্পাদক ও পরে সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৫১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সৈনিক পত্রিকার বিশেষ সংখ্যার শিরোনাম ছিল ‘শহিদ ছাত্রদের তাজা রক্তে ঢাকার রাজপথ রঞ্জিত, মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেলে ছাত্র সমাবেশে পুলিশের নির্বিচারে গুলিবর্ষণ’। ফলশ্রুতিতে ২৩ ফেব্রুয়ারি পুলিশ পত্রিকাটির অফিস অবরোধ করে সম্পাদক আবদুল গফুর ও প্রকাশক আবুল কাসেমকে গ্রেফতার করে। ভাষা আন্দোলন ছাড়াও তিনি পাকিস্তান আন্দোলন ও স্বায়ত্তশাসন আন্দোলনের একজন সক্রিয় কমী ছিলেন।
তার লেখা কিছু মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক বই রয়েছে যেমন-আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম,স্বাধীনতার গল্প শুনো,আমার কালের কথা তার স্মৃতিচারণ মূলক বই।
শিক্ষার্থী, সরকারী তিতুমীর কলেজ, বাংলা , সম্মান ২য় বর্ষ ।
-কেএল