শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


কেনো রাজনীতি নিষিদ্ধ লালবাগ মাদরাসায়: শীর্ষ আলেমদের প্রতিক্রিয়া

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মোস্তফা ওয়াদুদ: রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী দীনি বিদ্যাপীঠ জামিয়া কোরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগ মাদরাসায় সব ধরণের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে মজলিসে শূরা। গত রোববার ১৪ ফেব্রুয়ারি মজলিসে শূরার বৈঠক শেষে এ ঘোষণা দেন কর্তৃপক্ষ।

গত মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) লালবাগ মাদরাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা জুবায়ের আহমদ এক মুঠোফোন আলাপে আওয়ার ইসলামকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

কিন্তু কি কারণে নিষিদ্ধ হলো লালবাগের রাজনীতি? জানতে চাইলে তিনি বলেন, মুফতি আমিনী রহ. এর মাদরাসায় রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হবে। এমন পরিবেশ কখনো সৃষ্টি হবে তা আমরা কল্পনাও করিনি। তবে বর্তমানে যেভাবে চলছে এভাবে চলতে দেয়া যায় না। কেননা বছর যাবত ইসলামী ঐক্যজোটের কোনো মিটিং হয়নি। এমন কি এখনো পর্যন্ত কোনো হিসেব আমরা পাইনি। তাছাড়া যখনি কোনো মিটিং আহবানের কথা বলা হয় কিংবা কোনো হিসেব চাওয়া হয় তখনি কোনো না কোনো বাহানা দেখিয়ে মিটিং আহবান করা থেকে বিরত থাকেন দায়িত্বশীলগণ।

রাজনীতি নিষিদ্ধের কারণ সম্পর্কে জানতে কথা বলেছিলাম লালবাগ মাদরাসার সিনিয়র আরেকজন মুহাদ্দিসের সাথে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি আওয়ার ইসলামকে জানিয়েছেন, ভেতরগত অন্তর্কোন্দল, দীর্ঘ কয়েক বছর যাবত কোন মিটিং না হওয়া, কোনো হিসাব দিতে না পারা, নিজস্ব স্বেচ্ছাচারিতা, আভ্যন্তরীণ অন্তর্কোন্দল বিরাজমান থাকা, এ কারণে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

রাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়টিকে কিভাবে দেখছেন? জানতে চেয়েছিলাম বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, সাবেক মন্ত্রী মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাসের কাছে। তিনি বলেছেন, আভ্যান্তরীণ কিছু দ্বন্দের কারণে মুফতি আমিনী রহ. এর মেয়ের জামাইগণ চলে গেছেন একদিকে। আর তার ছেলে মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী চলে গেছেন আরেকদিকে।

মুফতি আমিনী রহমতুল্লাহি আলাইহি আমার দীর্ঘদিনের সাথী। আমরা একসাথে রাজনীতি করেছি। চলমান এই আভ্যন্তরীণ সমস্যা নিয়ে যদি মুফতি আমিনী রহমতুল্লাহি আলাইহি এর মেয়ের জামাইদের পক্ষ থেকে কেউ আমার সাথে পরামর্শ করতো, কিংবা যোগাযোগ করতো তাহলে আমি অবশ্যই এর একটি সুরাহা করার চেষ্টা করতাম।

আভ্যন্তরীন কোন্দলের কারণে হয়তোবা মাদরাসায় রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে এই নিষিদ্ধ করার বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। কোন মন্তব্য এক্ষেত্রে আমার নেই। কিন্তু এতটুকু বলতে পারি যে, মুফতি আমিনী রহমতুল্লাহি আলাইহির মাদরাসায় যা চলছে তা অনভিপ্রেত। অগ্রহণযোগ্য। একটু কষ্টদায়কও বটে। কেননা যেখান থেকে একসময় রাজনীতির নেতৃত্ব দেয়া হতো সেই জায়গায় এরকম বিশৃঙ্খলা কিংবা অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হবে-সেটা আমরা কোনদিনই কামনা করিনি।

কথা বলেছিলাম জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহ-সভাপতি, রাজধানীর আরজাবাদ মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা বাহাউদ্দীন জাকারিয়ার সাথে। তিনি বলেছেন, লালবাগ মাদরাসার রাজনীতি নিষিদ্ধ একটি অভ্যন্তরীণ বিষয়। মাদরাসার সংবিধানে কিংবা মাদরাসার রেজুলেশনে রাজনীতি নিষিদ্ধ আছে কিনা; সেটা পর্যবেক্ষণ করতে হবে প্রথমে। তারপর এ বিষয়ে মন্তব্য করতে হবে। আপাতত এই বিষয়ে মন্তব্য করা থেকে আমি বিরত থাকতে চাচ্ছি।

এদিকে গত রোববার সকাল ৯ টায় মাদরাসার উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে এক মজলিসে শূরার বৈঠক আহবান করে রাজনীতি নিষিদ্ধের ঘোষণাসহ সর্বসম্মতিক্রমে দুটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একটি হলো, লালবাগ মাদরাসায় কোনো ধরনের রাজনীতি করা যাবে না।

দ্বিতীয়টি হলো, মাদরাসায় যেহেতু পূর্ব থেকে ইসলামী ঐক্যজোটের রাজনীতি চলে আসছে। তাই যারা এ দলের রাজনীতির সাথে জড়িত তাদের জন্য চলতি বছরের আরবি শাওয়াল মাসের ১ তারিখ পর্যন্ত ইখতিয়ার দেওয়া হয়েছে। চাইলে তিনি রাজনীতি করতে পারবেন। যদি রাজনীতি করেন তাহলে মাদরাসা থেকে অব্যাহতি নিতে হবে। আর যদি চান তাহলে মাদরাসায় থাকতে পারবেন। তবে এর জন্য তাকে রাজনীতি থেকে অব্যাহতি নিতে হবে।

জানা গেছে, রাজনীতি ছাড়ার এ আল্টিমেটাম শুধু মুফতি ফয়জুল্লাহকে দেওয়া হয়নি। বরং যারাই রাজনীতির সাথে জড়িত তাদের প্রত্যেককে এ আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে।

এমডব্লিউ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ