মুফতি মীযান হারুন
আলেম, লেখক ও গবেষক
আমরা কতদিক সামলাতে পারবো? নিজেদের ভেতরে শত অন্তর্দ্বন্দ্ব। ফলে বাংলাদেশে শিয়াদের নজর অনেক বেশি। ঐতিহাসিক পরিচয় থাকলেও এ অঞ্চলে আমাদের আহলে সুন্নাহ আকাবিরদের কারণে শিয়ারা নিজেদের তেমন বিস্তৃত করতে পারেনি। মুজাদ্দিদে আলফে সানী, আব্দুল হক দেহলভি, আব্দুল আযীয দেহলভি, কাসেম নানুতুভি রহ. থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত হকপন্থী আলেমগণ শিয়াদের বিরুদ্ধে দীনের অতন্দ্র প্রহরী থেকে কাজ করেছেন। অথচ আজ সেই কওমি মাদরাসার ছাত্রদের ইরানে গিয়ে লেখাপড়ার দাওয়াত দেয়া হচ্ছে!
ইরানের আল-মুস্তফা বিশ্ববিদ্যালয়। বাইরে তাদের পরিচয় আহলে সুন্নাহ। আশআরী, সূফী। বাস্তবে এরা শিয়া ইমামিয়্যাহ ইসনা আশারিয়্যাহ। অর্থাৎ শিয়াদের সেসব ভ্রান্ত ফিরকাগুলোর একটি যাদেরকে আমাদের ইমামগণ কাফের হিসেবে গণ্য করেন। আমি ইরানের কিছু ভাইদের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়েই বিষয়গুলো লিখেছি। তাকিয়্যাহ হলো শিয়াদের ঈমানের অন্যতম ভিত্তি। অর্থাৎ ভেতরে থাকবে একটা বাইরে প্রকাশ করবে আরেকটা। এটা নফল নয়; বরং তাকিয়্যাহ অবলম্বন তাদের জন্য ওয়াজিব।
তারা যখন দেখেছে সরাসরি তাদের দাওয়াত ফলপ্রসূ হবে না, তখন এই পদ্ধতি বেছে নিয়েছে। ফলে তারা যখন বলছে বাংলাদেশি কওমি মাদরাসার ছাত্রদের সপরিবারে ওখানে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্রি পড়াবে, খরচ বহন করবে, অর্থ দেবে- তখন বোঝা যায় বাংলাদেশী আলেমদের মেরুদণ্ড ভাঙার জন্য কতটা ভয়ংকর ফাঁদ তারা পেতেছে।
শিয়াদের বিপক্ষে উপমহাদেশে সবচেয়ে বেশি সংগ্রাম করেছে আমাদের পাকিস্তানের আলেমগণ। ফলে সিপাহে সাহাবার আলেমগণকে একের পর এক হত্যা করেছে তারা। হত্যা করেছে এহসান এলাহী যহীরের মতো সালাফী আলেমকেও। কারণ তারা তাদের পথের কাঁটা ছিল। ইমামিয়্যাহ সম্প্রদায় সামগ্রিকভাবে কাফের। ইসলামের ভয়ংকর দুশমন এরা। কারও কারও যুক্তি ইরানে পড়তে গেলে শিয়া না হলেই তো হয়।
ইহুদি-খ্রিস্টানদের সঙ্গে মিশলেই কি ইহুদি হয়ে যায় মানুষ? হ্যা, মুসলমান ইহুদি হয় না, কিন্তু শিয়া হয়। যদি তর্কের খাতিরে মেনেও নেয়া হয় যে, ওখানে পড়ুয়া একজন কওমি আলেম হয়তো শিয়া হবে না, কিন্তু এটা নিশ্চিত যে, এদেশের মানুষের ঈমান হরণের জন্য শিয়া ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সে কখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না।কারণ সেই ঈমান আর হিম্মতটা ওরা থাকতে দেবে না। বরং হয়তো উল্টো শিয়াদের বিরুদ্ধে আমাদের আলেমদের প্রতিবাদের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াবে।
নিজেকে গড়ার জন্য বাইরে পড়া জরুরি নয়। আপনার আকাবিরগণ বাইরে না পড়েই পুরো দুনিয়া চমকে দিয়েছেন। তাজদীদী কাজ করেছেন। নিজেকে গড়তে চাইলে ডাল-ভাত আর লাবড়া খেয়ে টিনের ভাঙাচুরা একটা মাদরাসায় থেকেও সম্ভব। না চাইলে কোথাও সম্ভব নয়। হ্যা, স্বপ্ন থাকলে, সুযোগ হলে নিরাপদ কোথাও যান। ভারত, পাকিস্তান, মিসর, সৌদি, মালয়েশিয়া, ব্রুনাই, কাতার, তুরস্ক যেখানে ইচ্ছা চেষ্টা করুন। পড়ার মতো দেশের তো অভাব নেই। দুশমনের অভয়ারণ্যে কেন নিজেকে শিকার বানানোর মতো বোকামি করবেন? আপনার ঈমান একটা তুচ্ছ স্কলারশীপের কাছে বিক্রি হওয়ার মতো সস্তা নয়।
এমডব্লিউ/