আম্মার আবদুল্লাহ।।
এখন বড় অসময়। খুব ক্ষতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সব দিকে। চলছে নষ্টদের বিস্তর দাপট। মানবতা ও দীনধর্মেও ফুটে উঠেছে সংকটের শেষ চিহ্ন। দাঁত ভেঙচে খলখলিয়ে হেসে যাচ্ছে ঈমানের বিধ্বস্তরূপ। শুরু হয়েছে মুমূর্ষু মানবতার মরন গোঙানি। বিলুপ্ত প্রায় হয়ে পড়ছে সত্যঅর্থের মুসলমান। আদর্শ ও নীতি নৈতিকতায় লেগেছে নষ্ট ঘুণ। অথচ এই এরাই এককালে শুদ্ধ আদর্শ ও শান্তির বাণী নিয়ে ছড়িয়ে পড়েছিলো পৃথিবীর দিগি¦দিক। ফেরি করে বেড়িয়েছে ঈমানের সোনালি আলো। জাহেলি কাঁচা মাল থেকে বদলেছে সূর্যসন্তানে। কিন্তু পরবর্তীতে এই এরাই নিপতিত হয়েছে নানারকম বিপদসঙ্কুল অবস্থায়। আদর্শের ময়ুর সিংহাসন ছেড়ে এসে দাঁড়িয়েছে অন্য আরো দশ ধর্মের কাতারে।
স্রোত হয়ে ধেয়ে আসছে পতন। এই অর্জন আমাদের। এই পাপফসল আমাদেরই হাতে তোলা। আমরা ভুলেগেছি নিজেদেরকে। সব মিশিয়ে দিয়েছি কালের ধূলোয়। নিজেরাই রচনা করেছি নিজেদের ভাগ্য। ঠেলে এনেছি এখানটায়। এটা ঠিক সেদিন থেকে শুরু, যেদিন থেকে আমরা বিচ্যুত হয়েছি কুরআনের সরল পথ থেকে। নবী ও সাহাবাদের ছায়া ছেড়ে যেদিন থেকে গ্রহণ করেছি অন্যদের অঙ্গার আদর্শ। অন্ধদের বন্য সভ্যতা। যখন দীন থেকে নিয়েছি অনেক দূরে অবস্থান। এই পতনছন্দ সেদিন থেকেই শুরু। এখন তো পিঠ ঠেকেছে শেষ সীমায়। এখন বিষন্ন সুরে শুধু গেয়ে চলি কুরুনে উলার গান। কিন্তু এই পর্যন্তই। কাজে খাটানোর চিন্তাও করি না কখনো।
আসলে আমাদের এই পিছু টানটা কেন? কেনই বা আমরা পিছিয়ে পড়ছি দিন দিন?
সহজ করে ভাবলে এর কয়েকটা কারণ-
এক- অন্তরের অস্বচ্ছতা বা ইসলামের অবাধ্যতা। আজ শরীর, মন পূর্ণ সত্ত্বাটাই আমরা সরিয়ে নিয়েছি ইসলামের মূল ভাবাদর্শ থেকে। নবী মুহাম্মাদের ছায়া থেকে। এটা শুধু ব্যক্তিতে সীমাবদ্ধ তা নয় কিন্তু। পরিবার, সমাজ, দেশ পূর্ণ পৃথিবীই এখন হাঁটছে এই ভুল পথে। ফিরে যেতে চাইছে নষ্ট আশ্রয়ে। মোটকথা ইসলামকে তাড়ানোর ভ্রষ্ট আয়োজোনে মেতে ওঠছি সবাই। কেউ বুঝে আর কেউ না বুঝে, পার্থক্য এটুকুই যা। অথচ কুরআনের চিরন্তন এক অসিয়ত হলো ‘হে নবী! তাদেরকে বলো, এটা আমার সরল-সঠিক পথ। তোমরা এপথেই হাঁটো। এপথ ছেড়ে অন্য পথে যেও না। অন্যথায় আল্লাহ কিন্তু তোমাদেরকে এই সঠিক ও শুদ্ধ পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিবেন।’
আয়াতে বলাহয়েছে ‘এটা আমার পথ’- একথার অর্থ কী? অল্প কথায় খুব সহজ করে বললে এর উদ্দেশ্য হলো ‘দীনে ইসলাম অথবা পবিত্র কুরআন’। বেশিরভাগ মুফাসসিরগণ একথাই বলেছেন। কিন্তু দু:খ কথা হলো, এখন এসবের ধারও ধারিনা আমরা! কখনো ধারিনা! তাইতো হাদীসেও রয়েছে এমন কথার উল্লেখ। ‘আমার মনে হচ্ছে, খুব সামান্য সময়েই এমন এক দল আসবে যারা কুরআন পড়বে ঠিকই কিন্তু কুরআন তাদের গলার নিচ পর্যন্তও নামবে না ’। এমনই হচ্ছে এখন। কুরআন তো পড়ার বা শেখার মানুষের অভাব নেই কিন্তু সে পথে হাঁটে কয়জন! এনিয়ে তাদাব্বুর করে কয়জন?
দুই- অগভীর জ্ঞান বা জ্ঞানের দৈন্যদশা। ইসলামকে সত্য অর্থে আমরা বুঝেই ওঠতে পারছি না। উপলদ্ধিও করতে চাইছি না এর বাস্তবতা। তাইতো এখন ধর্ম হয়ে ওঠেছে শুধুই আনুষ্ঠানিক কিছু। জুমাবার এলে মসজিদে জায়গা হয় না! ঈদ এলে মানুষ বিশাল মাঠেও ধরে না! পশুর বাজার-হাট থাকে রমরমা। কেন? কারণ ঐ একটাই। আমরা শুধু এগুলোকেই দীন ভেবে বসে আছি। সত্যঅর্থে ইসলামকে উপলদ্ধি করতে পারছি না সামান্যও। আয়ত্ত¡ করতে পারছি না অল্পও। ফলে খামখেয়ালি কাটিয়ে দিচ্ছি জীবন। অযথাই অপচয় করছি নিজেদের। জ্ঞানের এই দৈন্যতার কারণেই জন্ম হচ্ছে বহু ভ্রান্ত মত ও পথ। বেড়ে যাচ্ছে অযথাই আত্ম কলহ, অন্তর্দন্দ ও বহুতা বিভেদ এবং অজস্র মতাদর্শের মিথ্যে মিছিল ও মহড়া।
এদের কেউতো সঠিক পথে আছে। শুদ্ধ মতে আছে। কিন্তু অধিকাংশই যাচ্ছে বিপথে। যে পথে আল্লাহ নেই। দীন-শরিয়ত কিচ্ছু নেই। নবী মুহাম্মাদের শীতল ছায়াও নেই। আসলে এতে কাদের লাভ বা কাদের লস! মুসলমানরা হেরে যাচ্ছে দিন দিন। অপচয় হচ্ছে নিজেদের শক্তি। যে শক্তি ব্যায় হওয়ার কথা ছিলো আমাদের সত্যিকারের শক্র যারা। কিন্তু তা আর হচ্ছে কোথায়! নিজেরাই পোরাচ্ছি নিজেদের ঘর। ফলে জিতে যাচ্ছে পশুরা। পিশাচরা। ভন্ডরা। আর এটাই ঘটবে, যতোদিন না আমরা আমাদের আসল শক্রকে সনাক্ত করতে না পারি এবং তাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে না আসতে পারি, ততদিন পর্যন্ত এই পরাজয় চলতেই থাকবে। কারণ কথাই আছে, আগুন যখন পুরাবার কিছু না পায় তখন সে নিজেকেই পুরায়।
তাছাড়া এই জ্ঞানের কমতির কারণে আমরা যে শুধু ধর্মের ক্ষেত্রে পিছিয়ে যাচ্ছি তা নয়, আরো নানা ক্ষেত্রেই আমরা পিছিয়ে পড়ছি সমানতালে। অথচ আমরা সাহাবীদের দিকে তাকালে দেখে ওঠবো তাদের সর্বসময়ের এক অবিচ্ছিন্ন গুণ ছিলো ‘আ’মাকা হা ইলমান’-জ্ঞানের গভীরতা। এজন্যই তো তরবিয়াতের প্রথম কথাই হলো জ্ঞান। আর জ্ঞনই হলো সভ্যপৃথিবীর একমাত্র অহঙ্কার। এটাই এগিয়ে নিয়ে যায়। আর যখন আমরা অল্প জানব এবং তাতেই খুশি থাকবো তখন এটাই হয়ে ওঠবে আমাদের জন্য সবচেয়ে ভয়ঙ্কর।
এব্যাপারে আমরা যদি কুরআন জিজ্ঞেস করি তাহলে কুরআন বলে ওঠে ‘ক্বালাতিল আরাবু আমান্না ক্বুল লাম তুমিনু ওয়ালাকিন ক্বুলু আসলামনা’। আল্লাহ তাআলা এখানে আরাবদের কথাকে শুধরে দিয়ে বললেন ‘ক্বুলু আসলামনা’ এটা কেন? কারণ ‘আমান্না’-এর সাথে অনেক দায়িত্ব জড়িত। সহজে বললে, পুরো জীবন ধারাটা আমূলে বদলে যাবে এই ‘আমান্না’-এর কারণে। আমাদের চিন্তা, আমাদের লক্ষ্য, আমাদের আচার-উচ্চারণ, উঠা-বসা এক কথায় আমাদের সব কিছু।
কিন্তু এত্বসব অর্থ বেদুঈনরা জানত না। তারা ভাবলো, যে একজন আল্লাহ আছেন আর ইনি হলেন তাঁর নবী আর আমরাও তাঁকে মানি ব্যাস এটাই তো ইসলাম। তাই তারা খুব সহজে না জেনে বলে দিলো ‘আমান্না’। আসলে এটা হয়েছিলো তাদের জ্ঞানের কমতির কারণে। সেই তেমনি আজোও আমরা ইসলামকে ভেবে বসে আছি শুধুই আনুষ্ঠানিক কিছু। এটাও আমাদের কেবল গভীর জ্ঞান না থাকারই ফসল। তাই আমাদেরকেও জ্ঞানে গভীর হতে হবে এবং পোক্ত হতে হবে। এখানে জ্ঞান বলতে জাগতিক বা আক্ষরিক কোন জ্ঞান নয়। বরং ইসলামকে স্পষ্ট ভাবে বুঝা, অনুধাবন করা ও আয়ত্ত¡ করার মতো গভীর জ্ঞান।
তিন- চরিত্রের অবনতি বা চারিত্রিক অবক্ষয়। এখন তো চরিত্রের কথা শুধু বইয়েই ভালো মানায়। কিংবা কোনো বক্তার বক্তব্যেই সুন্দর শোনায়। তানাহলে আমাদের ভেতর বা বাহির বারান্দায় এর কোনো ছাপ নেই, ছায়াও নেই। মুখে মুখে বুলি আওড়াচ্ছি, দাওয়াতে নেমে পড়েছি নির্দ্বিধায়। কাঁধে দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছি অণ্যদের সংশোধনের দায়িত্ব অথচ নিজের ভেতর শূণ্য। ধূ ধূ মরুভূমীর মতো বিরান। আখলাকের সামান্য ছোঁয়াও নেই।
নিজে যা বুঝছি, যেভাবে বুঝছি সেটাই সই। এমন হতে থাকলে ভুল হবে। আখলাক যদি বুঝতেই হয় তাহলে আমাদের তাকাতে হবে নবীজির দিকে, সাহবীদের দিকে। একটু তাকিয়েই দেখি না! আমাদের প্রাণপ্রদীপ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখনো মক্কায়। কৈশরের পেরিয়ে প্রথম যৌবনে পা রেখেছেন মাত্র। নবুওয়াত আসেনি তখনো। কিন্তু সেই তখন থেকেই সবাই তাঁকে চিনত ‘আল-আমীন ও আসসাদেক’ হিসেবে। সবার কাছেই ছিলেন প্রিয় পাত্র। এখানে বুঝার বিষয় হলো শুধু তখনের নয় এখনেরও সবচেয়ে কঠিন ও শক্ত গুণ হলো এই দুইটি। এখনতো বিশ্বস্ত ও সত্যবাদী মানুষ খঁজে পাওয়া বেজায় কঠিন। অনেকটা অধরা। শুধু আমাদের দেশে এমন তা নয়, পুরো পৃথিবীতেই এখন আখলাকের এই মরণ অবস্থা। তাই অতসব নয়, আমরা যদি অন্তত এই দুইটা গুণ আত্মস্থ করতে পারি তাহলে অন্যান্য গুণগুলো খুব সহজেই ধরা দিবে।
তাছাড়া এটা আমাদের প্রথম দায়িত্বও বটে। আর নবীর এই গুণ যারা সবচেয়ে ভালো ধারণ করতে পেরেছিলেন তারা হলেন সাহাবায়ে কেরাম। রক্তে মাংশে তাঁরাও ছিলেন আমাদের মতো মানুষ। ভুল শুদ্ধ ছিলো তাঁদের জীবনেও। কিন্তু নবীজির সাহচর্যে তারা পেয়েছিলে এক অসামান্য তারবিয়াত। তাঁরা নবীজির সংস্পর্শে যেসব গুণকে বিশেষ ভাবে আয়ত্ত্ব করেছিলেন, আত্মস্থ করেছিলেন সেগুলো আমাদেরও আয়ত্ত্ব করতে হবে। আত্মস্থ করতে হবে। আরেকটু গুছিয়ে সহজ করে বললে, প্রশংসনীয় গুণ গুলো আমাদের অর্জন করতে হবে আর মন্দ, নিকৃষ্ট দোষ গুলো আমাদের বর্জন করতে হবে।
এই অর্জন আর বর্জনের মাধ্যমেই যদি কিছু হয়। কারণ চারিত্রিক সমৃদ্ধি এটা আসলে পড়া-শুনা করে হবার নয়। এর জন্য প্রয়োজন হয় দীর্ঘ অধ্যাবসার। প্রয়োজন পড়ে শুদ্ধ কারো সংস্পর্শের। এই সংস্পর্শেই বিকাশ হয় শুদ্ধের ও স্বপ্নের। এখন আমরা যদি ভাবি এসব চেষ্টা ছাড়া চলে আসবে! তাহলে এটা অরণ্যে রোদন আর পাগলের প্রলাপ ছাড়া আর কিচ্ছু হবে না।
যাইহোক, এইযে আমারে দীর্ঘ ধ্বস, গভীর ক্ষত। এটা হতে বেশ সময় পেরিয়েছে কিন্তু। নবী, সাহাবী ও সালাফদের ত্যাগের উপর গড়ে উঠা দীনের এই শুভ্র মিনারটা বিধ্বস্ত হতেও বহু সময় লেগেছে। মুমিনদের গভীর মনের গহীন থেকে ঈমানের শক্ত শেকড়টা সমূলে উপড়াতেও অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়েছে। কারণ ঈমানের আলোটা জ্বলে মনের গভীরে। শেকড়টা গাড়ে বেশ ভেতরে। এ সহজে নিভবার নয়। উপড়ে যাবারও নয়। এর সূর্যস্পষ্ট প্রমানের অভাব পড়বে না। এক বেলালের দিকে রা. তাকালেই পেয়ে যাব। ঠিক যখন ঈমানটা ভেতরে গেড়ে যায়, গেথে বসে তখনই মানুষ হয়ে ওঠে সত্যঅর্থের মানুষ। হয়ে যায় সম্পুর্ণ শুদ্ধ। বাহির কাজেও ফুটে ওঠে সেই স্বচ্ছতা ও পবিত্রতার স্পষ্ট ছাপ। তখন সে হয় শতভাগ মুত্তাকী, সত্যবাদী, আমানত দার, পরহেযগার। এক কথায় ভালো সব গুণ এসে জমা হয় তার কাছে। সাহাবায়ে কেরাম যার জ্বলজ্বলে প্রমাণ এবং আকাশ আলোকরা দৃষ্টান্ত।
কিন্তু কাল কাটতে থাকে। সময়ও বাড়তে থাকে। পূর্ববর্তীগণ ছেড়ে দিতে থাকেন পৃথিবী পরবর্তীদের জন্য। সাহাবী, তাবেঈ, তাবে তাবেঈ এভাবে চলতে থাকে এই যাত্রার ধারা। সাথে সাথে পরিবর্তন হতে থাকে দীন। ইসলাম তখন মনে নয়, চলে আসতে থাকে মুখে। ঈমান তখন বিশ্বাসে নয়, ভাসতে থাকে নামে। তখন দীনবিজয়ের পাহাড় দৃঢ় ইচ্ছ হারিয়ে মিলিয়ে যায় শূণ্যে। তখন আখেরাত নয়, দুনিয়াই হয়ে ওঠে মুখ্য। তখন ত্যাগ নয়, ভোগই ধরা দিতে থাকে আসল হয়ে।
আল্লাহ বা বান্দা কারো হকের কথাই তখন আর মনে থাকে না। দীন শুধুই হয়ে ওঠতে থাকে প্রবৃত্তির হাতিয়ার। স্বার্থ উদ্ধারে ব্যবহৃত হতে থাকে ইসলাম। অর্জন ও উপার্জনের সর্বোত্তম পণ্য হয়ে যায় ঈমান। আমাদের ধ্বসের শুরুটা এখান থেকেই। পর্যুদস্ত হয়ে পড়ার পর্বও এখান থেকেই শুরু। এই ছন্দটাই আল্লাহ পেতেছেন এইভাবে- ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা নিজেরা পরিবর্তন করে। আর আল্লাহ যখন কোনো জাতি সম্পর্কে অশুভ কিছু ইচ্ছা করেন, তখন তা প্রতিহত হওয়ার নয়।’ (রা‘দ-১১)
কিন্তু এভাবে আর কতোদিন! পিছাতে পিছাতে আমাদের পিঠ এখন দেয়ালে। পুরো পৃথিবীতে আজ নির্যাতিত এই মুসলমান। নিপিড়িত এই জাতি। সহ্যের সীমা ভাঙ্গে ভাঙ্গে।
নাহ! এই এখন হলেও বাস্তবতা আমাদের বুঝতে হবে। জাগতে হবে সত্যঅর্থেই। ঘুরে দাঁড়াতে হবে আমাদের। এতে সময় যাবে যাক। কিন্তু এখন চূড়ান্ত পরিবর্তন প্রয়োজন। বৈরিতা ও জড়তাকে ঝেড়ে ফেলে আমাদের একটা বিন্দুতে এক হওয়া প্রয়োজন।
তবে হ্যাঁ, এসব দু’দিনের কাজ, তা কিন্তু নয়। সকাল সন্ধ্যায় বদলে যাবে এই চিত্র তাও নয়। কারণ আমাদের এইযে অবস্থা, এটা বুঝতে এবং উপলদ্ধি করতে প্রয়োজন, সময়। এই পতনকে নির্মাণেও প্রয়োজন, সময়। এই অসময়ের অবস্থা থেকে উন্নতীতে উঠারজন্যও প্রয়োজন, সময়। ভেতরের গোপন বৈরিতাকেও দূর করতে প্রয়োজন, সময়। ত্যাগ, তাকওয়ার শুদ্ধ সরোবরে ডুবে বিশুদ্ধ মানুষ হতেও প্রয়োজন, সময়। আচ্ছা! কেন সময় সময় করছি এতো? কারণ পৃথিবীর যা কিছু ভালো এবং যতোসব গুরুত্ববহ কাজ তার সব সাধন হতে প্রয়োজন এই সময়। যেমন, সামান্য এক চাড়া গাছ লাগাতেই ফল দেয়না সে। বরং ধীরে ধীরে বড় হয়। শিকড় ছড়ায়। ডাল-পালা বেরিয়ে আসতে থাকে শরীর চিড়ে। পাতায় পাতায় ভরে ওঠে তার পুরো গা।
এরপর একসময় হয় পূর্ণ প্রাপ্ত বয়ষ্ক। তখননা ফুল ফুটে, ফল আসে। আর মানুষ! সেওকি বড় হয় একদিনে! এরপর যদি বলি ধর্মের কথা, সেকি স্বল্প সময়ে নেওয়া সিদ্ধান্ত কিছু! মোটেও না। নয়তো শুধু এবং শুধুই একজন মানুষ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাই হি ওয়া সাল্লাম কীভাবে বদলে দিলেন পূর্ণ পৃথিবীর চেহারা! কীভাবে ছেটে দিলেন সমাজের ছক-কাটা সব অসঙ্গতি! এর পেছন পর্দায় নিশ্চই আছে সুদীর্ঘ কোনো পরিকল্পনা। তাছাড়া এইযে কুরআনুল কারীম। এও কিন্তু নাযিল হয়েছে তেইশ বছরে। কেন? এগুলোতো লেখাই ছিলো। প্রথম আসমানে নাযিল হয়েছে তাও সেই একই সাথে। কিন্তু নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাই হি ওয়া সাল্লাম-এর উপর নাযিল হতে সময় লাগলো প্রায় তেইশ বছর।
কেন? কারণ পৃথিবীর যা কিছু ভালো এবং যতোসব গুরুত্ববহ কাজ, তার সবই সাধন হতে প্রয়োজন হয় এই সময়। তাহলে আমাদের জেগে ওঠতে কি সময় লাগবে না! লাগবে। তাই বলে উদাসীনতা বা দায়িত্বজ্ঞান হীনতা নয়। খুব ভেবে-চিন্তে তৈরি করতে হবে আমাদের কর্মপন্থা। বাড়া-ছাড়া নয়, খুব সাবধনতার সাথে ঠিক করতে হবে সিদ্ধান্ত। তাহলে আমরাই আবার দিতে পারবো বিশ্ব নেতৃত্ব। বিজয়ের পতাকা নিয়ে দাড়াতে পারবো বিশ্বের সদর দরজায়। আমাদের হাতেই থাকবে সভ্যতার লাগাম। পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে ছড়িয়ে দিতে পারবো ইসলামের সোনালি আলো।
দিকে দিকে উড়াতে পারবো ইসলামের বিজয় পতাকা। এক্ষেত্রে হতাশ হওয়ারও কিছু নেই। কারণ আজও কোটি কন্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে- ‘হে আল্লাহ! হে সার্বভৌম শক্তির মালিক! তুমি যাকে চাও ক্ষমতা দান কর আর যার থেকে চাও ক্ষমতা কেড়ে নাও। যাকে ইচ্ছা সম্মান দান কর এবং যাকে চাও লাঞ্ছিত কর। সমস্ত কল্যাণ তোমার হাতেই। নিশ্চয়ই তুমি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান।’ (আলে-ইমরান-২৬)
তাই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। মনে ছড়িয়ে দিতে হবে ঈমানের বিজলি। ধরিয়ে দিতে হবে সত্য ও শুদ্ধের আগুন। উজ্জ্বেবীত হতে হবে ইসলামি চেতনায়। তাহলেই যদি কিছু হয়। নয়তো সময়ে সময়ে বাড়তে থাকবে সমস্যা। শুনতে হবে বিমর্ষ অবস্থার মর্মান্তিক আর্তনাদ। দেখতে হবে মুমূর্ষু মানবতার বিবর্ণ মুখ।
-কেএল