মোস্তফা ওয়াদুদ: ফ্রি মিক্সিং বন্ধ করতে শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হবে। সহশিক্ষার ধারা চেঞ্জ করে স্বতন্ত্র ধারা চালু করতে হবে। সচেতন হতে হবে অভিভাবককে। আওয়ার ইসলামের সাথে আলাপকালে এসব কথা বলেছেন দেশের বিশিষ্ট দুই আলেম। রাজধানীর আফতাবনগর মাদরাসার শায়খুল হাদিস মুফতি মুহাম্মদ আলী ও মানিকনগর মাদরাসার শায়খুল হাদিস মুফতি মুহাম্মদুল্লাহ সাদেকী।
ফ্রি মিক্সিং বন্ধ করতে ইসলামের নির্দেশনা কী জানতে চাইলে তিনটি পদ্ধতির কথা বলেন মুফতি মুহাম্মদুল্লাহ সাদেকী। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে তিন শ্রেণির মানুষ তিন রকমের দায়িত্ব পালন করবেন। আর এর প্রথম দায়িত্ব হলো অভিভাবকের। তাকে তিনটি ভূমিকা পালন করতে হবে।
১. তারা তাদের সন্তানদের নিয়ন্ত্রণে রাখবেন। নিজেদের অধীনে সন্তানদের পরিচালনা করবেন। অধিকারের নামে বল্গাহীভাব সন্তানদের ছেড়ে দিবেন না।
২. সন্তানের অধিকার রক্ষা করবেন। সন্তানের যখন যে অধিকারের দরকার হবে সেটার বাস্তবায়ন করবেন।
৩. সন্তানের চাহিাদার প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখবেন। সন্তান যেনো বাবা-মায়ের কাছে নির্বিঘ্নে নিজেদের প্রত্যাশার কথা জানাতে পারেন সেরকম অভয় দিয়ে সন্তানের মনোভাসনা পূর্ণ করবেন।
আর রাষ্ট্রের রয়েছে একটি দায়িত্ব। বর্তমানে যে সহশিক্ষার ধারা আছে এটাকে চেঞ্জ করে স্বতন্ত্র ধারা চালু করবেন। তাহলে আর অবৈধ কিংবা ফ্রি-মিক্সিংও হবে না। এবং এ জাতীয় গর্হিত ও নিন্দনীয় দৃশ্যও দেখবে বাংলাদেশ।
সবশেষে উলামায়ে কেরামের দায়িত্ব রয়েছে এক্ষেত্রে। উলামায়ে কেরাম দু’ভাবে তাদের সতর্ক করবেন। এক. ব্যক্তিগত জায়গা থেকে মানুষকে সচেতন করবেন। মসজিদের মিম্বারে এর ক্ষতি সম্পর্কে আলোচনা করে এর থেকে বিরত থাকতে আহবান করবেন। দুই. সামাজিকভাবে ওয়াজ-মাহফিলের মাধ্যমে হোক কিংবা মিডিয়ার মাধ্যমে মানুষকে এর থেকে সচেতন করবেন।
রাজধানীর আফতাবনগর মাদরাসার শায়খুল হাদিস মুফতি মুহাম্মদ আলী বলেন, ফ্রি-মিক্সিং আজকে আমাদের সমাজের এক ভয়ানক সমস্যা। সমস্যাটিও আবার এমন, সবাই বুঝতে পারছে, কিন্তু কেউ আমলে নিচ্ছে না। এক অন্ধকারের দিকে আমরা যেন উপায়হীনভাবে এগিয়ে চলছি। এই ফ্রি-মিক্সিং এমন এক সমস্যা, যা হাজারও সমস্যার কারণ। বড়-বড় সামাজিক অপরাধ ও রাষ্ট্রীয় অস্থিরতার একদম প্রধান ও মৌলিক সমস্যা যদি আমরা বের করতে চাই। দেখা যাবে, ৯৫% সমস্যার মূলে আছে এই অপরাধটি।
বর্তমানে তো অবস্থাটা এমন হয়ে গেছে, অনেকে এটাকে অপরাধও মনে করছে না। অথচ এমন একটি মৌলিক ও প্রধান সমস্যাকে গুরুত্বহীনভাবে রেখে কোনোভাবেই এর থেকে বের হয়ে আসা যাবে না। বরং এর বিস্তার আরও ছড়িয়ে পড়বে। তাই এটা বন্ধ করতে ও ফ্রি-মিক্সিংয়ের মতো মারাত্মক এ মহামারী থেকে বাঁচতে ইসলামের নীতিতেই আসতে হবে। এছাড়া ভিন্ন কোনো সমাধান নেই।
তিনি বলেন, অবাধ মেলামেশা ইসলামে হারাম। অবাধ মেলামেশার কোনো সুযোগ ইসলামে নেই। মাহরাম ছাড়া নারীদের সফরেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ফ্রি মিক্সিংয়ের নামে যুবক-যুবতীরা যেভাবে ঘরের বাইরে ঘুরাফেরা করে এটা কখনোই ইসলাম সমর্থন করে না। বরং কঠিনভাবে নিষেধ করে।
তিনি বলেন, ইসলাম নারীকে সুরক্ষিত রাখতে চায়। এজন্য সফরে নারীর সাথে মাহরাম থাকা ওয়াজিব করে দিয়েছে; যাতে করে মাহরাম পুরুষ নারীকে দুশ্চরিত্র ও হীন-উদ্দেশ্য চরিতার্থকারী লোকদের থেকে নিরাপদ রাখতে পারে।
সাধারণ মানুষকে ইসলাম বিধিবিধিান সম্পর্কে সতর্ক করতে উলামায়ে কেরামের দায়িত্ব কতটুকু? জানতে চাইলে মুফতি মুহাম্মদ আলী জানান, এজন্য উলামায়ে কেরামকে মসজিদের মিম্বার, মাহফিল, মিডিয়া ও ইসলাম প্রচারের যতগুলো প্রক্রিয়া হতে পারে সবগুলোতে বেশি বেশি ইসলামের কথা প্রচার করতে হবে।
এমডব্লিউ/