শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
কাল যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় মজলিসে দাওয়াতুল হকের ইজতেমা শেখ হাসিনা ভারতে বসে দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন: মজলিস মহাসচিব ডেঙ্গুতে এক সপ্তাহে ৩১ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৬২৩০ মসজিদে নববীর আদলে হবে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ: ধর্ম উপদেষ্টা খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত নতুন নির্বাচন কমিশনকে বিগত কমিশন থেকে শিক্ষা নিতে হবে: মুফতী ফয়জুল করীম লালপুরে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল ও বাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ জনতার চেয়ারম্যান সৈয়দ তালহাকে সুনামগঞ্জ ৩ আসনে জমিয়তের প্রার্থী ঘোষণা কুরআন-হাদিসের ভিত্তিতেই হতে হবে সংস্কার: বায়তুল মোকাররমের খতিব ইসলামী সঙ্গীত সম্রাট আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ.-এর বাবার ইন্তেকাল

‘তোমাকে ভালোবাসি হে নবী’তে নবী প্রেমে হারিয়ে যাই

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

রকিব বিন সাদেক

একটা সময় বই পড়াটা আমার কাছে অনেকটাই বিরক্তিকর ছিল। একদমই ভালো লাগতো না। আর তখন অতটা সাহিত্যেরও কিছু বুঝতামনা; মানে ৭/৮ বছর আগের কথা। তখন এই বইটা পড়েছিলাম। এশার পর বইটা নিয়ে বসেছি। চিন্তা ছিল একটু একটু করে পড়ে বইটা শেষ করবো কিন্তু বইটা আমি এক বসায় পড়ে শেষ করে ফেলেছি। একটা বই পড়ে শেষ করাটা আমার কাছে তখন অনেক কষ্টের ব্যপার। আর কোনো একটা বই শেষ করতে পারলে আমার কাছে কী যে আনন্দ লাগতো সেটা বলে বুঝাতে পারবোনা। তো বইটা পড়া যখন শুরু করলাম।

আশ্চের্যের ব্যপার বইয়ের অনেক জায়গা আমি বুঝিনি। সাহিত্যে গদগদ অবস্থা, নতুন নতুন শব্দ তাও পড়তে কোনো সমস্যা হয়নি, যত পড়ছি ভালোই লাগছে। শুধু পড়েই যাচ্ছি আর ভালোলাগার সাগরে হারিয়ে যাচ্ছি। আমার একটা বদ অভ্যাস আছে, কোনো কিছু না বুঝে পড়তে ভালোলাগেনা কিন্তু এই বইটাতে ঠিক তার উল্টোটা হয়েছে। না বুঝলেও পড়তে অনেক ভালোলেগেছে। বইটার শুরুতে “হৃদয়ের আকুতি” শিরোনামে তিন চার পৃষ্ঠার একটা লেখা আছে।

এই লেখাটাই আমাকে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করেছে। এই লেখাটা সত্যিকারর্থেই লেখকের হৃদয়ের আকুতি ছিল। আসলে যেই কথা বা লেখা মন থেকে বলা হয় বা লেখা হয় সেটা মানুাষের হৃদয়ের গভীরে স্পর্শ করবেই।
বইটি থেকে“হৃদয়ের আকুতি” এর কিছু অংশ তুলে দিলাম। পড়ে দেখেন ভালো লাগবে।

সত্যের আলো ছড়াতে, পুণ্যের পথ দেখাতে এক মহামানবের আবির্ভাব হলো। তার শুভ দর্শনে দৃষ্টি যাদের প্রেমমুগ্ধ হলো এবং হৃদয় যাদের ভালোবাসায় স্নিগ্ধ হলো জনম তাদের সার্থক হলো, জীবন-স্বপ্ন তাদের সফল হলো। এ পরশমণির পরশ-সৌভাগ্য যারা লাভ করলো খাঁটি তারা হলো।এ স্বর্গ-পুষ্পের সান্নিধ্য-সৌরভ যারা পেলো বিশ্ব-বাগানে তারা গোলাবের খোশবু ছড়ালো। ঊষর মরুর বাসিন্দা হে উম্মি আরব! জানিনা মর্তলোকের মানব, না স্বর্গলোকের দেবতা তোমরা!

হাবীবে খোদার দীদার-দর্শন পেলে কোন্ সে মহাগুণে! নূরে খোদার তাজাল্লিতে ধন্য হলে কোন্ সে মহাপুণ্যে!! ইতিহাস তো বলে, লুটতরাজ ও খুনখারাবি ছিলো তোমাদের পেশা, আর নাচ-গান ও মদ-জুয়া ছিলো তোমাদের নেশা। এমন কোন অন্যায় ছিলনা যা তোমরা জানতেনা, এমন কোন পাপও ছিলোনা যা তোমরা করতে ন। ‘আকারে ইনসান, প্রকারে শয়তান’। এই তো ছিলো তোমাদের ‘পহচান’। অথচ সারা বিশ্বে আজ তোমাদেরই জয়গান, তোমাদেরই ‘শওকাত-শান’। বলো না কোন্ সে প্রতিভা সুপ্ত ছিলো তোমাদের মাঝে, কোন্ সে অমৃতজলের সন্ধান ছিলো তোমাদের কাছে, যার ফলে তোমাদের জীবনে হলো নব প্রাণের সঞ্চার এবং চরিত্রে এলো এমন মহাবিপ্লব, সময়ের মুহূর্ত ব্যবধানে রাহজান থেকে হয়ে গেলে ‘রাহবার’।

কী আর বলতে পারি বঞ্চিত এই আমরা! ভগবানের লীলা খেলা যে চির রহস্যঘেরা! কে জানে কখন কাকে সিক্ত করে তার করুণাধারা। তাই তো আহমদী নূরের সওগাতে ধন্য হলে তুমি! মুহাম্মদি নবুয়তের অরুণালোকে স্নাত হলো তোমার বালুভূমি। অথচ বঞ্চিত হলো স্বর্ণপ্রসাবা ভারতভূমি! গঙ্গা-হিমালয়ের এই ভারতভূমি!

দুর্ভাগিনী ভারতমাতা! সে জন্য দুঃখ করোনা, চোখের জলে বুক ভাসিওনা। অশ্র-সাগর পাড়ি দিলে বিরহ বঞ্চনার যদি অবসান হতো,কান্নার ভেলায় হাজার বছর না হয় ভেসে বেড়াতাম। কিন্তু ভগবানের দান তো সম্পদে কেনা যায় না, ছিনিয়েও আনা যায়না। নইলে তোমার ‘সুপুত্ররা’ বিশ্বের সম্পদ-ভান্ডার লুটিয়ে দিত তোমার চরনতলে। এ অমূল্য হার যেকোনো মূল্যে পরাতো তোমার কন্ঠে। কিন্তু তা যে হবার নয়! ভগবানই শুধু জানেন, কাকে তিনি কৃপা করেন। তাই ভগবানের বিচার মেনে ধৈর্য না ধরে উপায় কি বলো! ত্যাগ ও প্রেমই তো তোমার ধর্ম। শান্তি ও অহিংসাই তো তোমার বৈশিষ্ট। এতো উতলা হওয়া কি তোমাকে সাজে?

লেখকের আকুতি, হে আহমাদ! তোমার প্রেমে এ অধম হিন্দুস্তানীর কোমল হৃদয় যে ক্ষত-বিক্ষত! অনুগ্রহ করে তাতে সান্ত্বনার শীতল পরশ বুলাতে এসো না! প্রীয়তম! চৌদ্দশ বছর সাক্ষী, কোনো ইউসুফ কোনো মিসরে তোমার মতো প্রেম-সমাদর পায়নি। কেননা, তোমাতেই শুধু ঘটেছে বিধাতার অপরুপ রুপ-মহিমার অপূর্ব প্রকাশ। তাই হাজার বছরের ব্যবধানেও কোনো পাষাণ এড়াতে পারেনা তোমার স্বর্গীয় জ্যোতির্ময়তার হাতছানি। প্রিয়তম!

তোমার দর্শন-সৌভাগ্য লাভে না হয় বঞ্চিত হলাম, তাই বলে স্বপ্নের বাতায়ন পথেও কি একবার নসীব হতে পারেনা তোমার দীদার! তৃষ্ণার্ত হৃদয়ের আকুতি শুনো প্রিয়তম! এসো হে প্রিয়তম! তোমারই জন্য যে সাজিয়েছি আমার এ হৃদয়ের সিংহাসন!

বি:দ্র: মূল লেখক নবী-ভক্ত একজন অমুসলিম হিন্দুস্তানী। লেখকের নাম গুরুদত্ত সিং। অনুবাদ করেছেন মাওলানা আবু তাহের মিছবাহ।
অনুবাদকের একটি প্রশ্ন- একজন ‘অমুসলিম’ নবী-প্রেমের এমন সুরভিত ‘পুষ্প’ কীভাবে প্রস্ফুটিত করতে পারেন! আর যিনি পারেন তিনি কী করে অমুসলিম থাকেন! নাকি ‘বিদায় গ্রহনের’ পূর্বে তিনি ইসলাম গ্রহন করেছিলেন? তাই যেন হয়!

অনুবাদকের অভিপ্রায়! বইটি বাংলাদেশের কোটি কোটি ‘ভক্ত’ ও কতিপয় ‘বিরক্ত’ উভয় শ্রেণীর পাঠকের হাতে তুলে দিতে পারলে ভালো হবে।তাতে কোটি কোটি নবী-ভক্ত পাঠক নবী-প্রেমের একটি নতুন সৌন্দর্যে অবগাহন করার সুযোগ পেয়ে ধন্য হবে। আর রহমতের নবীর প্রতি কতিপয় ‘বিরক্ত’ যারা তাদের মন-মগজের সব জঞ্জাল একজন অমুসলিমের হৃদয় থেকে উৎসারিত নবী-প্রেমের স্রোত-ধারায় ভেসে যাবে এবং আল্লাহর ইচ্ছা হলে তারা পরিশুদ্ধ হওয়ারও সুযোগ পাবে।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ