কাউসার লাবীব।।
সাব-এডিটর
একজন আলেমকে হতে হয় উটের মত কষ্ট সহিঞ্চু, আকাশের মত উদার, মাটির মতো নরম, কৃষকের মতো ধৈর্য্যশীল, দাওয়াতের কাজে পাহাড়ের মতো অটল, সূর্যের মতো দাতা, নবীদের মতো হিকমত ওয়ালা। কেননা সে পবিত্র ধর্ম ইসলামের প্রতিনিধি। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওয়ারিস। পাশাপাশি যুগের কাণ্ডারি। প্রিয় পাঠক তাই আসুন যুুগের কাণ্ডারি আলেমদের জন্য জাস্টিস আল্লামা মুফতি তাকি উসমানি হাফিজাহুল্লাহর করা কিছু নসিহত জেনে আসি-
‘কঠোরতার মাধ্যমে কখনো ইসলামের সফলতা আসে না। নবীওয়ালা তরিকা হলো, যদি কেউ নবীদেরকে গালি দিত; তাহলে তারা গালির জবাব গালির মাধ্যমে দিতেন না। ভালবাসার মাধ্যমে দিতেন। পয়গম্বর হযরত হুদ আলাইহিস সাল্লামকে তার সম্প্রদায় বলেছিল ‘আপনি তো একজন মূর্খ এবং জাহিল। আপনি তো বোকা। আপনাকে তো আমরা মিথ্যুকদের কাতারে অন্তর্ভুক্ত করি।’ পথভ্রষ্ট উম্মতের এ কথা তিনি রাগ করেননি। বরং তিনি তাদেরকে শান্ত গলায় বলেছিলেন, দেখো! আমি বোকা নই, আমি মূর্খও নই। আমিতো মহান প্রতিপালকের একজন দূত মাত্র। আমি তোমাদের সঠিক পথ দেখানোর জন্য এসেছি, আল্লাহর বাণী তোমাদের কাছে পৌঁছে দিতে এসেছি।’
আমার শ্রদ্ধেয় বাবা মুফতি শফি রহিমাহুল্লাহ হুদ আলাইহিস সালামের এ ঘটনা বলে বলতেন, ‘যদি আমাদের সমাজের কোনো বড় আলেমকে জনসম্মুখে কেউ বলতো, ‘আপনি বোকা। আপনি মূর্খ। আপনি মিথ্যুক।’ তাহলে তো কোনো কিছু না ভেবেই তারা বলে উঠবে, ‘তুই মিথ্যুক। তোর বাপ মিথ্যুক। তোর দাদা মিথ্যুক। তোর পূর্বপুরুষের সবাই মিথ্যুক।’ অথচ এক্ষেত্রে আল্লাহর পয়গম্বর কোন পথ বেঁছে নিয়েছিলেন সেটি আমরা কেউ লক্ষ করি না।’
আল্লাহ তায়ালা যখন মুসা এবং হারুন আলাইহিমাস সালামকে ফেরাউনের কাছে দ্বীনে দাওয়াত নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। ফেরাউন এত বড় অত্যাচারী এবং জালিম হওয়ার পরেও, আল্লাহ পাক তাদেরকে বলে দিলেন, ‘আপনারা ফেরাউনের সঙ্গে কোমল ভাষায় কথা বলবেন। তাকে নরম সুরে দাওয়াত দিবেন। হতে পারে এর ফলে সে উপদেশ গ্রহণ করবে। তার মানে আমার ভীতির সৃষ্টি হবে। সে সঠিক পথের সন্ধান পাবে।’
অথচ আল্লাহতালা কুদরতীভাবে জানেন যে, সে নসিয়ত কবুল করবে না। সে হেদায়েতের পথে আসবে না। তবুও তিনি তার নবীদেরকে ফেরাউনের সঙ্গে কোমল ভাষায় কথা বলতে আদেশ করেছেন; যেন নবীদের মনে এ কথা থাকে যে, হয়তো সে নসিয়ত গ্রহণ করবে, হয়তো সে হেদায়েতের পথে হাঁটবে। কিন্তু আজ আমরা নবীওয়ালা এ পথ ছেড়ে কঠোর পন্থাকে বেছে নিয়েছি। কোমলতাকে ছেড়ে রূঢ় ভাষাকে বেছে নিয়েছি। ভালোবাসাকে ছেড়ে বিদ্বেষকে বেছে নিয়েছে। সাবলীলতাকে ছেড়ে নিষ্ঠুরতাকে বেছে নিয়েছি। যাচ্ছে তাই বলে বেড়াচ্ছি। আর ভাবছি দ্বীনের খুব খেদমত করছি। নবীওয়ালা আদর্শ তো এমন ছিলনা। আল্লাহ তো নবীদেরকে এমন ভাবে দাওয়াত দিতে বলেননি।
আমার পিতাজি রহিমাহুল্লাহ সবসময় বলতেন, কোন কথা বলার কিংবা কলমে লেখার পূর্বে এ সংকল্প করবে যে, ‘আমি এমন কথা বলব কিংবা লিখব, যে কথা আমি আদালতে দাঁড়িয়ে প্রমাণ করতে পারব। যে ব্যাপারে আমার কাছে শক্ত দলিল প্রমাণ রয়েছে সে কথা ছাড়া অন্যকথা কখনো বলবো না।’ সময়ের পরিবর্তনে কখনো যদি এ কথা কিংবা লেখার কারণে আদালতে যেতে হয়; তাহলে যেন সেখানে গিয়ে তা প্রমাণ করতে পারো। যদি এমন না হয় তাহলে ওই কথা বলা কিংবা লেখা থেকে সবসময় বিরত থাকো। হতে পারে তুমি এ কথা কিংবা লেখার কারণে দুনিয়ার আদালতে দাঁড়াতে হবে না। কিন্তু পরকালে কিন্তু আল্লাহর আদালতে দাঁড়িয়ে তোমাকে এর জবাবদিহিতা করতে হবে।
একজন আলেমকে একজন দায়ীকে কথা বলা এবং লেখার ক্ষেত্রে খুব সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। বিদ্বেষকে ছাড়তে হবে। প্রণয় ও ভালোবাসাকে গ্রহণ করতে হবে। মানুষকে ভালোবেসে ইসলামের পথে ডাকতে হবে। সঠিক পথ দেখাতে হবে।
-কেএল