মঈনুদ্দীন খান তানভীর ।।
সিলেট এমসি কলেজের রেষ কাটতে না কাটতেই জানা গেল নোয়াখালীর ঘটনা।নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে এক গৃহবধুকে বিবস্ত্র করে অমানবিক নির্যাতন করেছে কতিপয় বখাটে।মহিলা পায়ে ধরে অনুরোধ করে ও রেহাই পায়নি এদের হাত থেকে।এই যে অমানবিক নির্যাতন।ঔদ্ধত্যের সাথে আবার তার ভিডিও ধারণ।এত সাহস এরা পেল কোথায়?
আমাদের থেকেই।ওরা জানে,এ নিয়ে কিছুদিন হৈচৈ হবে।বেশির চেয়ে বেশি দলীয় বহিস্কারাদেশ আসবে।সাময়িক গ্রেফতার হবে।ইস্যুপ্রিয় জাতি নতুন কোন ইস্যু পেলেই সব ভুলে যাবে।ওদের কিচ্ছু হবে না।বরং বের হয়ে আসবে গলায় মালা নিয়ে।বিচারহীনতার এ সংস্কৃতি দিনদিন আরো বেপরোয়া করছে নরপশুদের।
ঘটনাটি নিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইশা ছাত্র আন্দোলন।রাতেই জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে দলটি।আজ সকাল ১০টায় ধর্ষণ স্পট এখলাসপুরে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে স্থানীয় ইসলামী আন্দোলনের নেতারা।যুব আন্দোলন বিক্ষোভ করবে বিকাল ৩টায়।হাটহাজারীতে বাদ আছর বিক্ষোভ হবে হেফাজতে ইসলামের ডাকে।এছাড়া ও খেলাফত মজলিসসহ রাজনৈতিক অরাজনৈতিক নানান ধর্মীয় সংগঠন মাঠে নেমে আসছে।প্রশ্ন হচ্ছে কেবল তারাই কেন আন্দোলন করবে।
একজন নারী সাংবাদিককে বেচরিত্রহীন বলায় মাফ চাওয়ার পর ও যেসকল নারীবাদীরা আন্দোলন করে জেল পর্যন্ত খাটিয়েছিল ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে।তারা কোথায়?কেবল তেঁতুলের উপমা দেয়াতেই যারা দেশজুড়ে হৈচৈ ফেলে দিয়েছিল-তাদের কর্মসূচি কি?
নারীর ক্ষমতায়নে যে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে তরতর করে।সংবাদপত্রের রিপোর্ট অনুসারে
মানে বিচারপতি, সচিব, ডেপুটি গভর্নর, রাষ্ট্রদূত, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, মানবাধিকার কমিশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন নারী। বর্তমানে প্রশাসনের উচ্চপদে ৫৩৫ জন নারী দায়িত্ব পালন করছেন। উপসচিব থেকে সচিব পর্যন্ত পদগুলোতে এ নারী কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে প্রশাসনে সিনিয়র সচিব, সচিব ও ভারপ্রাপ্ত সচিব রয়েছেন ৬ জন নারী। অতিরিক্ত সচিব রয়েছেন ৮১ জন, যুগ্ম-সচিবের মধ্যে নারী রয়েছেন ৮৭ জন।
প্রশাসনে ১ হাজার ৮৪০ জন উপসচিবের মধ্যে নারী উপসচিব রয়েছেন ৩৬১ জন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ ২০১৭ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সরকারি চাকরিতে মোট নারীর সংখ্যা ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৮১৯ জন। মাঠ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদ জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদে গত বছর পর্যন্ত নয় জেলায় নারী ডিসিরা দায়িত্ব পালন করছেন।
প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রী,স্পিকার,শিক্ষামন্ত্রী সব যেখানে নারী।সেখানে ও যদি নারীরা হয় এতটা অসহায়।তবে তো বলতেই হয়-আমরা কেবল ভোটাধিকার নয়।ইজ্জত নিয়ে বাঁচার অধিকার ও হারিয়ে ফেলেছি।এ কোন দেশ?কেবল সম্মানজনকভাবে বাঁচার অধিকার নিশ্চিত করতে যে দেশের দামাল ছেলেরা জীবন বিলিয়েছিল একাত্তরে?
ঘটনাটি ১মাস আগের।ভিডিও ভাইরাল নাহলে জানতেই পারতাম না আমরা।এরকম কতশত ঘটনা ঘটে চলছে লোকচক্ষুর অন্তরালে! প্রশাসন,গোয়েন্দা সংস্থা,সাংবাদিক,মানবাধিকার কর্মী,সমাজকর্মী, সচেতন নাগরিক,স্থানীয় জনপ্রতিনিধি,মুরব্বিয়ান এমনকি এই আমরা-আমাদের লজ্জিত হওয়া উচিত।
বাংলাদেশে দ্রুত বিচার আইন আছে জানতাম।কিজন্য?কেবল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের জন্য? বিচার চাইতে চাইতে আমরা হতাশ।
এবার রুখে দাঁড়ানো প্রয়োজন। সামাজিক গণ আন্দোলন গড়ে তোলা ছাড়া এ থেকে বাঁচার উপায় নেই। চলুন,সামাজিকভাবে এদের রুখে দাঁড়াই।অন্তত নিজেদের ফ্যামিলির নিরাপত্তার কথা ভেবে হলে ও এখনই রুখে দাঁড়ানো প্রয়োজন।
আর মিনমিনে গলায় এসব দাবি দাওয়া জানিয়ে লাভ কি? দাবি হোক,দ্রুত বিচার আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার। দলীয় ছত্রছায়া,স্বজনপ্রীতি আর ঘোষের সয়লাবে এ বিচার ব্যবস্থার প্রতি জনতার আস্থা ও ভরসা ইতোমধ্যেই তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।খুন গুম ধর্ষণ বন্ধে তারা নজীরবিহীন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন।
তাই দাবি ওঠুক-শরীয়া আইনে বিচার চাই। অন্তত পরীক্ষামূলকভাবে দেখার জন্য হলে ও ২/৪টা বিচার শরীয়া আইনে করুন। আমাদেরকে বাঁচান।বাঁচতে দিন।নাহয় আপনারা পদত্যাগ করুন।
-এটি