আওয়ার ইসলাম: আঠাশ বছর আগে ভারতের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলার ঘটনায় বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদভানি, মুরলী মনোহর জোশী, উমা ভারতী-সহ ৩২ জন অভিযুক্তকে নির্দোষ ঘোষণা দিয়ে খালাস দেওয়ার ভারতীয় কোর্টের রায়ের নিন্দা জানিয়েছেন জমিয়তে উলামায়ে
ইসলাম বাংলাদেশ-এর মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী।
আজ (১ অক্টোবর) বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, ভারতীয় আদালত উগ্র হিন্দুত্ববাদের পক্ষ নিয়ে সত্য, ন্যায়-ইনাসফ ও বাস্তবতার সাথে শুধু তামাশাই করেনি, বরং মুসলমানদের বিরুদ্ধে হিন্দুত্ববাদি আগ্রাসনকে বৈধতা দিতে শুরু করেছে। একই ভূমিকা আমরা ২০১৯ সালের নভেম্বরে বাবরি মসজিদের জায়গায় রামমন্দির নির্মাণের রায়েও প্রত্যক্ষ করেছি।
তিনি বলেন, হিন্দু উগ্রবাদীরা ভারতজুড়ে বছরব্যাপী নানা সভা-সমাবেশ করে এবং সুনির্দিষ্ট দিন-ক্ষণ, তারিখ দিয়ে ১৯৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর প্রকাশ্যে উল্লাস নৃত্যে ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে দেওয়ার মতো যে বর্বরতা চালিয়েছিল, তার প্রমাণ এখনো মুছে যায়নি। সেদিন এই মামলার আসামী উমা ভারতী বাবরি মসজিদ ভাঙার জন্য নিজেদের সাঙ্গপাঙ্গদের উদীপ্ত করতে কীভাবে একের পর এক স্লোগান দিয়েছিল এবং বিজেপি শীর্ষ নেতা আদভানি-জোশীরা মঞ্চে বসে কীভাবে মিষ্টি বিলাচ্ছিলেন- তার প্রমাণ এখনো মুছে যায়নি।
কিন্তু ভারতের উচ্চ আদালত গতকাল দীর্ঘ ২৮ বছর পর সে ঘটনায় করা মামলায় অভিযুক্ত ৩২ জনকেই বেকসুর খালাস দিয়ে বলেছে, ওই ধ্বংসাত্মক ঘটনা ছিল ‘হঠাৎ ঘটে যাওয়া’ স্বত:স্ফূর্ত জনরোষের ফল’। সেই দিনের ভূমিকায় আসামীদের বিরুদ্ধে কোন অপরাধ দেশটির
বিচারকরা খুঁজে পায়নি। ভারতীয় আদালতের এমন নগ্ন পক্ষপাতদুষ্ট রায়ে শান্তিকামি বিশ্ববাসী হতভম্ব হয়েছেন। তিনি বলেন, এই রায়ে ভারতের বিচার ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়াই কেবল প্রমাণ করে না, বরং দেশটির বিচার বিভাগের উপরও যে হিন্দুত্ববাদিরা কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে নিয়েছে সেটাও স্পষ্ট হয়েছে। ভারতের সংখ্যালঘু মুসলমানদের বিরুদ্ধে চলমান দমন-পীড়ন, উচ্ছেদাভিযান ও মানবাধিকার হরণকে প্রাতিষ্ঠানিক বৈধতা দিতে এই রায়কে উগ্র হিন্দুত্ববাদিরা আগামী দিনে ব্যবহার করতে পারে, যা দক্ষিণ এশিয়ায় সাম্প্রদায়িক সংঘাত ও সহিংসতাকে আরো ছড়িয়ে দিতে প্ররোচিত করতে পারে।
আল্লামা কাসেমী বলেন, ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদ প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য গভীর উদ্বেগ তৈরি করছে। তাছাড়া যে কোন নিপীড়িত জনতার পক্ষে সোচ্চার অবস্থান নিতেও আমাদের সংবিধানে বলা হয়েছে। মুসলিম অধ্যুষিত দেশ হিসেবে ভ্রাতৃত্ববোধের জায়গা থেকেও ভারতে মুসলিম নিপীড়নের ঘটনায় আমাদের চুপচাপ দর্শকের ভূমিকায় থাকার সুযোগ নেই। সুতরাং বাংলাদেশ সরকারের কর্তব্য, ভারতের ক্রমবর্ধমান মুসলিম নিপীড়ন ও বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার মামলার পক্ষপাতদুষ্ট রায়ের প্রতিবাদ জানানো এবং এসব বন্ধে কূটনৈতিকভাবে ভারতের উপর চাপ প্রয়োগ করা।
-এটি