মুফতি মামুন আবদুল্লাহ কাসেমী।।
ইমাম আবু হানীফা এর ইজতিহাদ, ফিকহ, হাদীস চর্চা, জারাহ ও তাদীল নিয়ে পর্যালোচনার বাস্তবতা নিয়ে চিন্তা গর্বে বুকটা ভরে ওঠে। তার ব্যাপারে বড়দের মূল্যায়ন দেখলে সত্যিই অনিচ্ছা সত্বেও অশ্রুস্নাত হয়ে যেতে হয়। ইমামদের বক্তব্য নিয়ে পারস্পারিক মতানৈক্যের পরিবেশ এখন ভীষন গরম।
অথচ সেই মুজতাহিদ ও ইমামদের পরস্পর শ্রদ্ধাবোধ ছিলো অকল্পনীয়। কেনই বা হবে না! তারা পরস্পর ছিলেন উস্তাদ-শাগরেদ, শিক্ষক-শিষ্য। সবার বড় ছিলেন হযরত ইমামে আ'যম আবু হানীফা রহ.। ইমাম মালেক রহ. ছিলেন কিছুকিছু রেওয়ায়েতে ইমাম আবু হানীফা থেকে ইস্তিফাদাকারী। ইমাম মালেকের ছাত্র ইমাম মুহাম্মাদ রহ.।
আর ইমাম মুহাম্মাদের ছাত্র ছিলেন ইমাম শাফেয়ী রহ.। ইমাম শাফেয়ী এর সরাসরি ছাত্র হলেন ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল রহ.। ইমাম চতুষ্টয়ের মাঝে একমাত্র তিনিই হলেন তাবেঈ।
দুররে মুখতার গ্রন্থাকার হযরত আলাউদ্দিন হাসকাফীর বক্তব্যমতে কালের বিবেচনায় ইমাম আবু হানীফা রহ. কমপক্ষে বিশজন সাহাবীর জীবদ্দশার কাল পেয়েছেন।
হাফেজে হাদীস হযরত ইবনে হাজার আসকালানী রহ. এর তাহকীক মুতাবিক সাহাবী হতে روايت حديث এর ব্যাপারে ঐতিহাসিক ও মুহাদ্দিসীনে কেরামের মাঝে মতবিরোধ থাকলেও رؤيت صحابي এর ব্যাপারে সন্দেহ পোষন করার কোন সুযোগ নেই। কারন-নিশ্চিতভাবে তিনি বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আনাস ইবনে মালেক রা. এর সরাসরি সাক্ষাত লাভে ধন্য হয়েছেন।
ইমাম আবু হানীফা রহ. কেবল ফকীহ ও মুজতাহিদই ছিলেননা,বরং তিনি ছিলেন অনেক বড় মাপের মুহাদ্দিস এবং ইমামুল জারহি ওয়াত তা'দীল। তার حدثنا اخبرنا এর সূত্র পরম্পরায় বর্নিত হাদীসের সংখ্যাও অনেক। কারো সংশয় হলে তার দেখে নেওয়া উচিৎ
كتاب الاثار للامام ابي حنيفة , كتاب الاثار للامام ابي يوسف , كتاب الاثار للامام محمد , مسند الامام الاعظم , جامع مسانيد الامام ابي حنيفة
এছাড়া حدثنا اخبرنا এর সূত্র পরম্পরা উল্লেখ করা ব্যাতিত روايت بالمعنى এর উসূলের ভিত্তিতে ফিকহী মাসআলা হিসেবে যে পরিমান হাদীস রেওয়ায়েত করেছেন তার সংখ্যা লক্ষ লক্ষ। হযরত শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী রহ ازالة الخفاء এর মধ্যে লিখেছেন-সাহাবায়ে কেরামের মাঝে হাদীস বর্ননার উভয় পদ্ধতিই প্রচলিত ছিলো।
সতর্কতা প্রবন সাহাবীরা سمعت حدثنا اخبرنا এর সূত্রে হাদীস বর্ননার পাশাপাশি সূত্র ছাড়া প্রয়োজন মুতাবিক কেবল মতন বা হাদীসের ভাবার্থ পেশ করার পদ্ধতিও অবলম্বন করতেন। যেমন-খলীফা চতুষ্টয়,আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ,আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. প্রমুখ সাহাবী। কুফা নগরীতে হযরত ইমাম আবু হানীফা রহ. স্বীয় দাদা উস্তাদ হিসেবে অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো রেওয়ায়েতের ক্ষেত্রেও হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদের পদাঙ্ক অনুসরন করেছেন।
অতএব এই বাস্তবতার আলোকে ইমাম আবু হানীফের উপর হাদীস স্বল্পতার অভিযোগ অজ্ঞতা প্রসূত অলীক কথা বৈ কিছুই নয়। ইমাম আবু হানীফার প্রশংসায় ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে ইদরীস শাফেয়ী যে কব্যমালা আবৃতি করেছেন তাতেও হযরত ইমামে আ'যমের রেওয়ায়েতে হাদীসের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে ফুটে উঠেছে।
তিনি বলেন- لَقَد زانَ البِلادَ وَمَن عَلَيها সমগ্র পৃথীবি ও পৃথীবিবাসীকে সুশোভিত করেছেন إِمامُ المُسلِمينَ أَبو حَنيفَه মুসলিম উম্মাহর ইমাম হযরত ইমাম আবু হানীফা রহ. بِأَحكامٍ وَآثارٍ وَفِقهٍ জীবন ব্যাবস্থার বিধানাবলী,হাদীসে মারফু,মুত্তাসিল এবং বিশ্বাস ও দর্শনের নীতিমালার ব্যাখ্যা দিয়ে। كَآياتِ الزَبورِ عَلى الصَحيفَه কাষ্ঠশ্লেটে লেখা ঐশীবানীর ন্যায় প্রত্যুজ্জল فَما بِالمَشرِقَينِ لَهُ نَظيرٌ প্রাচ্যের দুই প্রান্তেও তার কোন দৃষ্টান্ত নেই, وَلا بِالمَغرِبَينِ وَلا بِكوفَه কুফা ও পাশ্চাত্যজুড়েও তার মতো কেও নেই। فَرَحمَةُ رَبِّنا أَبَداً عَلَيهِ সর্বদা তার প্রতি আমার রবের করুনা বর্ষিত হোক مَدى الأَيّامِ ما قُرِأَت صَحيفَه যুগ থেকে যুগ যুগান্তরে যতদিন পাঠ হবে কুরআনে কারীম।
লেখক: মুফতী ও মুহাদ্দিস-জামিয়া ইসলামিয়া লালমাটিয়া,এফ-৬/২৬ লালমাটিয়া,ঢাকা। মুহতামিম-মাদরাসাতুল কাসিম ঢাকা,৮৮১ পূর্ব কাজিপাড়া,কাফরুল ঢাকা-১২১৬। মহাপরিচালক-মারকাযুদ্ দিরাসাহ্ আল ইসলামিয়্যাহ্ ঢাকা। খতীব-চাঁদতারা জামে মসজিদ,পূর্ব শেওড়াপাড়া,ঢাকা। তাফসীরকারক-বায়তুস সালাম জামে মসজিদ,পূর্ব শেওড়াপাড়া ঢাকা।
-এটি