জহির উদ্দিন বাবর।।
বাংলাদেশের ইতিহাসে ধর্মীয় অঙ্গনে এতোটা অবিসংবাদিত নেতা সম্ভবত আর আসেননি। আলেম-উলামা ও দীনদার শ্রেণিসহ গোটা জাতি কারও নেতৃত্বের ছায়াতলে এভাবে জড়ো হয়েছে এমনটা ইতিহাসের নানা বাঁকে চোখ বুলিয়েও মনে করতে পারছি না। সময়ের প্রয়োজনে তিনি জাতির রাহবারে পরিণত হন। দল-মত, গণ্ডি-বলয় সবকিছু ভুলে সবাই একটা সময় জড়ো হন তাঁর নেতৃত্বের সুশীতল ছায়াতলে। এভাবে গত এক দশকে তিনি এমন একটি অবস্থানে পৌঁছে যান যে জায়গাটি স্পর্শ করা এখন পর্যন্ত কারও পক্ষে সম্ভব হয়নি। আগামী দিনেও হবে কি না যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তিনি শায়খুল হাদিস আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহ.। তাঁকে জাতি ‘শাইখুল ইসলাম’ হিসেবে জানে। গত ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ বিদায় নিলেন কিংবদন্তিতুল্য এই আলেমে দীন। স্বাভাবিকভাবেই গোটা জাতি আজ শোকাহত। একজন আলেমের বিদায়ে এর আগে জাতীয় পর্যায়ে সর্বস্তরে এভাবে নাড়া দিতে দেখা যায়নি।
আল্লামা আহমদ শফী রহ. তিন দশকের বেশি সময় দেশের সর্ববৃহৎ দীনি প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারীর মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। স্বাভাবিকভাবেই তিনি দেশের একজন শীর্ষ আলেম হিসেবে গণ্য হয়ে আসছেন বিগত শতাব্দীর সেই আশির দশক থেকেই। গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে সবার সম্মান ও সমীহের জায়গাটিতে তিনি বরাবরই সমুজ্জ্বল ছিলেন।
২০০৫ সালে জাতীয় প্রতিষ্ঠান বেফাকের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর জাতীয় পর্যায়ে নেতৃত্বের আসনে তাঁর পদার্পণ ঘটে। তবে নেতৃত্বের ক্ষেত্রে তাঁর মূল উত্থানটি ঘটে ২০১৩ সালে। সেই সময়ের কথা যাদের স্মরণ আছে তারা বলতে পারবেন, শায়খুল হাদিস ও মুফতি আমিনী রহ.সহ পরপর ঢাকার শীর্ষ বেশ কয়েকজন আলেমের বিদায়ে একটা শূন্যতার সৃষ্টি হয়। কে সেই শূন্যতাটুকু পূরণ করবেন সেটা নিয়ে যথেষ্ট দুর্ভাবনা ছিল। শাহবাগের কথিত গণজাগরণ মঞ্চকে কেন্দ্র করে নাস্তিক-মুরতাদদের আস্ফালন মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। তারা অনলাইন-ব্লগে কুৎসিত ভাষায় ইসলাম ও নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আক্রমণ করতে থাকে। সেই ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে দেশবাসী যার নেতৃত্বে জেগে উঠেছিল তিনি আল্লামা শাহ আহমদ শফী।
২০১৩ সালের ৬ এপ্রিল আল্লামা শফী রহ.-এর নেতৃত্বে যে লংমার্চ হয়েছিল এর কোনো নজির দেশের ইতিহাসে নেই। সেদিন রাজধানী ঢাকায় লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ জনতা জড়ো হয়েছিলেন অবিংসবাদিত এই রাহবারের ডাকে। পুরো ঢাকা দখলে ছিল তৌহিদি জনতার। সরকারের মসনদে পর্যন্ত সৃষ্টি হয়েছিল কাঁপুনি। ইসলামপন্থীরা কত বড় শক্তি তা সেদিন টের পেয়েছিল দেশি-বিদেশি তাগুতি শক্তি। এদেশে নিজেদের অস্তিত্ব নিয়ে টিকিয়ে রাখার জন্য ইসলামপন্থীদের সামনে স্মরণকালের বৃহত্তম এই শোডাউনটির কোনো বিকল্প ছিল না। যদিও নিজেদের কিছু ভুল এবং ক্ষমতাসীনদের মরণকামড়ের কারণে মাত্র এক মাসের ব্যবধানে ইসলামপন্থীরা বিপর্যয়ের শিকার হয়। ঘটে হৃদয়বিদারক শাপলা চত্বর ট্রাজেডি। তবে এরপরও আল্লামা শাহ আহমদ শফীর অবিসংবাদিত নেতৃত্ব অটুট থাকে। এমনকি ক্ষমতাসীনদের কাছে তিনি আরও সমাদৃত এবং সমীহের পাত্রে পরিণত হন। ৫ মে’র ঘটনার পর ধারণা করা হচ্ছিল আলেম-উলামার ওপর সরকারি নিপীড়নের মাত্রা অনেক বেড়ে যাবে, কিন্তু আল্লামা শফীর ব্যক্তিত্বের কারণে ক্ষমতাসীনরা সেই পথে হাঁটেননি। বরং তারা উল্টো আপস ও রফাদফার পথ গ্রহণ করেন।
২০১৩ সাল পরবর্তী সময়ে আল্লামা শফী গোটা জাতির কাছে হয়ে উঠেন বিপ্লবের প্রতীক। ঐক্য, আস্থা ও নির্ভরতার অনন্য ঠিকানা। তাঁর প্রতি সবার সমীহের মাত্রা আগের তুলনায় অনেক বেড়ে যায়। সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে শুরু করে দল-মত নির্বিশেষে সবার ভক্তি ও শ্রদ্ধার পাত্রে পরিণত হন তিনি। পরবর্তী সময়ে তাঁকে আর মাঠে নামতে হয়নি; তাঁর একটি বিবৃতি কিংবা একটি হুঁশিয়ারিই অনেক কিছুর সমাধান হয়েছে। বয়সে শ’য়ের কোটায় পৌঁছা হুইল চেয়ারে বসা একজন মানুষ কতটা প্রভাবশালী হতে পারেন সেটার অনন্য নজির তিনি স্থাপন করে গেছেন। জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত তাঁর সেই প্রভাব অক্ষুণ্ন ছিল। ক্ষমতার মসনদ থেকে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত এতোটা প্রভাবশালী আলেমের জন্য আরও বহুকাল অপেক্ষা করতে হবে জাতিকে।
২০১৭ সালে আল্লামা আহমদ শফী রহ.-এর নেতৃত্বেই কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদের সরকারি স্বীকৃতির ঘোষণা আসে। এটিও তাঁর জীবনের একটি বড় কীর্তি। তাঁর মতো অবিসংবাদিত একজন নেতার নেতৃত্ব ছাড়া এই মহৎ উদ্যোগটি সফল হতো না। কওমি স্বীকৃতি নিয়ে অনেক রাজনীতি হয়েছে, কৃতিত্ব নিয়ে টানাটানিও কম হয়নি। সবগুলো বোর্ডকে একক নেতৃত্বে এনে স্বীকৃতি দেওয়া ছিল সরকারের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। সেই নেতৃত্বটা কে দিতে পারেন সেটা নিয়ে সরকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা কম করেনি। শেষ পর্যন্ত আল্লামা আহমদ শফীকেই বেছে নিয়েছে তারা। একমাত্র তাঁর নেতৃত্বে স্বীকৃতি দেওয়ার কারণেই এটা নিয়ে বড়ধরনের কোনো মতবিরোধ তৈরি হয়নি। যদিও স্বীকৃতির সুফল কতটা মিলেছে, এর দ্বারা কওমি স্বকীয়তায় বিকৃতি এসেছে কি না এটা নিয়ে অনেক আলোচনার সুযোগ রয়েছে।
আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহ. অনেকগুলো কারণে ব্যক্তিত্ব ও নেতৃত্বের যোগ্যতায় এমন একটি স্থানে পৌঁছে গিয়েছিলেন যেখানে অন্য কাউকে পৌঁছা প্রায় অসম্ভব। তিনি শাইখুল ইসলাম হজরতুল আল্লামা হোসাইন আহমদ মাদানী রহ.-এর বিশিষ্ট শাগরেদ ও খলিফা ছিলেন। তাঁর ইন্তেকালের মধ্য দিয়ে দেশে মাদানী রহ.-এর জীবিত খলিফাদের সংখ্যা মাত্র একজনে নেমে এসেছে। যিনি জীবিত তিনিও অত্যন্ত বয়োবৃদ্ধ এবং জাতীয় পর্যায়ে পরিচিত কেউ নন। সুতরাং আগামীতে যারাই জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর নেতৃত্ব দেবেন মাদানী রহ.-এর খলিফা হওয়ার সৌভাগ্য কারও হবে না। আল্লামা শফী রহ. ৩৪ বছর দেশের সবচেয়ে বড় কওমি মাদরাসাটির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। পাশাপাশি দেশের অগণিত প্রতিষ্ঠানের প্রধান মুরব্বি ছিলেন। এ হিসেবে দেশের এমন কোনো অঞ্চল নেই যেখানে তাঁর ছাত্র ও ভক্ত নেই। এই সুযোগ আর কোনো নেতৃত্বের ক্ষেত্রে হয়ত আসবে না।
তাঁর ব্যক্তিত্বের উচ্চতা এতোটাই বেশি ছিল যে, শুরু থেকে বেফাকের সঙ্গে না থাকা সত্ত্বেও একটা পর্যায়ে সম্মিলিত সিদ্ধান্তে তাঁকে জাতীয় এই প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি করা হয়। ‘বেফাকের সভাপতিই আল-হাইয়্যাতুল উলয়ার চেয়ারম্যান হবেন’ গঠনতন্ত্রে যে ধারাটি যুক্ত করা হয়েছে তা মূলত আল্লামা আহমদ শফীর ব্যক্তিত্বের দিকে লক্ষ্য করেই। তিনি তাঁর যোগ্যতা ও ব্যক্তিত্ব দিয়ে একইসঙ্গে জাতীয় অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের প্রধানের পদ অলঙ্কৃত করেছিলেন। সেটা বর্তমানে জীবিত আলেমদের মধ্য থেকে কারও পক্ষে সম্ভব নয়।
ইলমি যোগ্যতা, আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকার, দীর্ঘ সাধনা ও শতায়ু হওয়ার কারণে আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহ. যে ঈর্ষণীয় অবস্থানে পৌঁছে গিয়েছিলেন সেখানে কারও পক্ষে পৌঁছা অনেক কঠিন। শুধু চেষ্টা করে কেউ সেই জায়গাটিতে পৌঁছতে পারবে না যদি না আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ থাকে।
আল্লামা শফী রহ. শুধু মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য ও ভালোবাসার পাত্রই ছিলেন না, তিনি আল্লাহর কাছেও প্রিয় ছিলেন। মূলত আসমানি নির্দেশেই মানুষ তাঁকে মন-প্রাণ উজাড় করে এতোটা ভালোবাসা দিয়েছিল। তিনি ছিলেন একজন ‘মুকুটহীন বাদশা’। তিনি নিজে বলেছেন, অনেক মন্ত্রী-এমপির যেখানে হেলিকপ্টারে চড়ার সুযোগ হয় না সেখানে হেলিকপ্টারটি ছিল তাঁর কাছে রিকশার মতো একটি যান। এজন্য মন্ত্রী-এমপি, ক্ষমতাধর ব্যক্তিরাও তাঁকে ঈর্ষা করতো। নিঃসন্দেহে এটা আল্লাহর বিশেষ দান। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সেই নেয়ামত দান করেন।
১০৩ বছর বয়সে তিনি চলে গেলেন। দেশের গড় আয়ুর চেয়ে অনেক বেশিদিন তিনি বেঁচেছিলেন। শীর্ষ আলেমদের মধ্যে খুব কমই এতো দীর্ঘ হায়াত পেয়েছেন। আর দীর্ঘ হায়াত পেলেও অনেকে জীবনের শেষ ১০/২০ বছর কর্মোক্ষম থাকেন না। এক্ষেত্রে আল্লামা শফী রহ. ব্যতিক্রম। শেষ দুই তিন বছর বাদে আগের পুরোটা সময়ই তিনি সক্রিয় ছিলেন। তিনি যখন গোটা জাতির রাহবারে পরিণত হন তখনও তাঁর বয়স নব্বইয়ের উপরে। এজন্য তাঁর খেদমত ও অবদানের পরিধি অনেক বেশি বিস্তৃত। আল্লাহর মাকবুলিয়তের কারণে তিনি অনন্য এক উচ্চতায় পৌঁছে গিয়েছিলেন। সেই উচ্চতা স্পর্শ করার মতো সামর্থ্য খুব বেশি মানুষের হয় না। এজন্য বহুকাল পর্যন্ত জাতির এই রাহবার স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে থাকবেন।
দুই.
এবার জাতির এই রাহবারকে ঘিরে কিছু আক্ষেপের কথা বলা যাক। এতো স্বীকৃতি ও গ্রহণযোগ্যতার পরও আমরা তাঁকে সেই অবস্থানটিতে টিকে থাকতে দিইনি। আমরা নিজেদের স্বার্থে তাঁকে ব্যবহার করেছি, তাঁর অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছি। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তাঁর ইলমি অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। তাঁর খেলাফত প্রাপ্তি নিয়ে সন্দেহ পোষণ করা হয়েছে। তাঁর বয়স নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত করা হয়েছে। দেশ-জাতি ও উম্মাহর প্রতি তাঁর দরদ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। ইতিহাসের অজেয় এক চূড়ায় পৌঁছে যাওয়ার পরও তাঁকে আমরা নানাভাবে টেনে নিচে নামানোর অপচেষ্টা করেছি। এজন্য তিনি চলে গেলেও আক্ষেপ রয়েই গেছে। এমন ব্যক্তিত্বকে তাঁর যথার্থ মর্যাদাটুকু দিতে ব্যর্থ হয়েছি আমরা। এরজন্য আমরা সবাই কমবেশি দায়ী। কাউকে এককভাবে দায়ী করা সমীচীন হবে না।
জীবনের শেষ কয়েক মাস তাঁকে ঘিরে যা হয়েছে সেটা খুবই ন্যাক্কারজনক। বয়সের ভারে নুইয়ে পড়া একজন মানুষকে নিয়ে টানাহেচড়া কম হয়নি। তাঁকে ঘিরে গড়ে ওঠা একটি বলয় ও চক্র নিজেরা অনেক কিছু করে তাঁর নামে চালিয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এমন অনেক কর্মকাণ্ড তাঁর নামে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে যার কিছুই হয়ত তিনি জানেন না। এতে তাঁর অবস্থান জাতির কাছে অনেকবার প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। অনেক আপনজনেরাও তাঁকে ভুল বুঝেছেন। যে নেতার জন্য আলেম-উলামা ও দীনদার মুসলমানেরা প্রাণ উৎসর্গে প্রস্তুত ছিলেন তারাই এই নেতার মৃত্যু পর্যন্ত কামনা করেছেন। এর চেয়ে বড় আক্ষেপের আর কী হতে পারে!
সবচেয়ে আক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে তাঁর জীবনের শেষ কয়েক দিনের মধ্যে। হাটহাজারী মাদরাসার পরবর্তী নেতৃত্ব বাছাইকে কেন্দ্র করে উত্তাপ ছড়াচ্ছিল অনেক আগে থেকেই। শেষ কয়েক দিনে এসে তা চূড়ান্ত রূপ লাভ করে। অনাকাক্ষিত ও হঠকারী কিছু ঘটনাও ঘটে এই সময়ে। যে প্রতিষ্ঠানটির উন্নতি-অগ্রগতির জন্য জীবনের সিংহাভাগ ব্যয় করেছেন সেই প্রতিষ্ঠানটিতে এমন দৃশ্য দেখে স্বাভাবিকভাবেই তাঁর মনে কষ্ট লেগেছে। কিছুটা অভিমানে, কিছুটা বাধ্য হয়ে তিনি মহাপরিচালক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। এর আগের দিন চাপে পড়ে নিজ হাতে দস্তখত করে ছেলেকে বহিষ্কারের মতো কঠিন কাজটিও তিনি করেন। স্মৃতিবিজড়িত প্রতিষ্ঠানটি থেকে বিদায়ের একদিন পর তিনি দুনিয়া থেকেও বিদায় নিয়ে চলে যান। মনোকষ্ট নিয়ে তিনি দুনিয়াতে বেঁচে থাকুক এটা হয়ত আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দার ক্ষেত্রে পছন্দ করেননি।
সারল্য আমাদের মুরব্বিদের একটি বড় বৈশিষ্ট্য। বার্ধক্যে উপনীত হওয়ার পর তাদের এই সারল্যকে পুঁজি করে আশপাশের অনেকেই ফায়দা লুটেন। এটা অতীতে অনেক বুজুর্গানে দীনের ক্ষেত্রে যেমন হয়েছে আল্লামা আহমদ শফী রহ.-এর ক্ষেত্রেও কিছুটা হয়ত হয়েছে। আর তিনি এমন একটি বয়সে পৌঁছে গিয়েছিলেন যে বয়সটিকে কুরআনে কারিমের ভাষায় ‘আরজালিল উমুর’ বা বার্ধক্যজনিত অক্ষমতার বয়স হিসেবে গণ্য করা হয়। এই বয়সে মানুষ শিশুর মতো হয়ে যায়। এজন্য এই সময়ের অনেক কিছু ধর্তব্য নয়। জাতির রত্নতুল্য এই মনীষীকে তাঁর ব্যক্তিত্ব ও অবস্থানে সমুজ্জ্বল রাখতে অন্তত তিন-চার বছর আগেই সবকিছু থেকে অবসর করে দেওয়া উচিত ছিল। তিনি যেসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সেখানে তাঁকে প্রধান মুরব্বি রেখে নির্বাহী দায়িত্বশীল নিয়োজিত করা দরকার ছিল। কিন্তু সেটা নানা কারণে হয়নি। আর এতেই অনাকাক্সিক্ষত ঘটনাগুলো ঘটেছে।
এমন একজন কিংবদন্তিতুল্য মানুষকে তাঁর বিশাল খেদমত ও অবদানের প্রতি মূল্যায়নের সঙ্গে সুন্দরভাবে বিদায় দিতে পারলাম না-এটা আমাদের জন্য অনেক বড় আক্ষেপের বিষয়। জাতির জন্য এটা দুর্ভাগ্যও। আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহ.-এর মতো ব্যক্তিত্ব হয়ত শতাব্দীতে একজন-দুজন আসেন। তাদের প্রকৃত মর্যাদা দিতে না পারা এবং মূল্যায়নে ব্যর্থতা একটি জাতির জন্য অনেক বড় গ্লানির বিষয়। অতীতে যাই হোক, বর্তমানে যেসব বুজুর্গ-আলেম জীবিত আছেন তাদেরকে মূল্যায়নের মাধ্যমে আসুন আমরা সেই গ্লানি থেকে মুক্ত হই। আল্লাহ শাহ আহমদ শফী রহ.-এর কবরকে জান্নাতের টুকরো বানিয়ে দিন। তাঁকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসিব করুন। আর তাঁর প্রতি আমরা যে অবিচার করেছি সেটাও তিনি ক্ষমা করে দিন। আমিন।
লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরাম