আওয়ার ইসলাম: মিয়ানমারের রাখাইনে আবার নতুন পরিসরে সামরিক অভিযান চলছে বলে জানিয়েছে সম্প্রতি সীমান্তের শূন্য রেখায় আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা। তাদের অভিযোগ, কিছুদিন হলো মিয়ানমার সেনাদের নানা উস্কানিমূলক আচরণে আতঙ্কিত হয়ে তারা শূন্য রেখায় অবস্থান করছে। তারা জানায়, রাখাইনে রোহিঙ্গা গ্রামে আবারো সামরিক অভিযান চলছে। ঘর থেকে বের হলেই চলছে নির্বিচারে গুলি।
আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের দুই সেনার গণহত্যার দায় স্বীকারের পরও বিশ্বজনমতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ সীমান্তে সেনা সংখ্যা বাড়িয়েছে মিয়ানমার। এ ঘটনাকে রোহিঙ্গা বিতাড়নের প্রস্তুতি বলে আশঙ্কা জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা। সেনা বৃদ্ধিতে ইয়াঙ্গুনকে প্রতিবাদও জানিয়েছে ঢাকা।
কক্সবাজারের বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুম্ব্রু সীমান্তের ওপারে হঠাৎই ভারি অস্ত্রসহ অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছে মিয়ানমার। বাইশফাড়ি এলাকাসহ আশপাশে নতুন করে সবুজ রঙের তাঁবু টাঙিয়ে অস্থায়ী চৌকিও বানিয়েছে তারা। আরাকান গণমাধ্যম বলছে, গত ১১ সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশের সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে রাখাইনের ইন ডিন গ্রামের উপকূলে অবস্থান করছে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর লজিস্টিক শিপ। সেখান থেকে মাছ ধরার ট্রলারে করে সীমান্তে নেয়া হচ্ছে বাড়তি সেনা।
সেনাদের গতিবিধি বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে কয়েকদিন আগেই ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে উদ্বেগ জানিয়েছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানায়, সীমান্তে সেনা তৎপরতা বৃদ্ধি পাবার প্রেক্ষাপটে উদ্বেগ জানিয়ে চিঠি দেয়া হয় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানিয়েছেন, সন্ত্রাস দমনে সেনা বাড়ানোর পক্ষে মিয়ানমারের যুক্তিতে সন্তুষ্ট নয় বাংলাদেশ। তিনি বলেন, আমরা আমাদের অসন্তুষ্টির কথা মিয়ানমারকে জানিয়েছি।
এ অবস্থায় রাখাইন থেকে আবারো শূন্য রেখায় আশ্রয় নিচ্ছে আতঙ্কিত রোহিঙ্গারা। তাদের ভাষ্য, আরাকানে রোহিঙ্গাদের বাড়ি-ঘরে তালা লাগিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। ঘর থেকে বের হলেই গুলি করা হচ্ছে।
শূন্য রেখায় আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা জানায়, সেনারা আবারো নির্যাতন শুরু করেছে। রোহিঙ্গাদের বাড়ি-ঘরে তালা লাগিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। অনেকেই চলতে-ফিরতে পারছে না। ঘরের বাইরে কাউকে দেখলেই গুলি করে মেরে ফেলা হচ্ছে।
তারা বলছে, গত এক সপ্তাহ ধরে সেনাবাহিনী গ্রাম ঘিরে রেখেছে। ঘর থেকে কাউকে বের হতে দিচ্ছে না। রোহিঙ্গাদের দোকানপাটও ব্ন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অনেকেই বাড়ি ছেড়ে জঙ্গলে লুকিয়ে আছে। সেখানেও আবার পুতে রাখা হয়েছে মাইন। অনেকেই মারা যাচ্ছেন সেই বোমা বিষ্ফোরণে।
আরাকানের গণমাধ্যম বলছে, মিয়ানমার সেনাবাহিনী নাফ নদীর তীর, মংডু ১ নম্বর জেটি এবং কানিং চং এ নির্মাণাধীন অর্থনৈতিক অঞ্চলে অবস্থান নিয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, এর নেপথ্যে রয়েছে সম্প্রতি হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দুই সদস্যের গণহত্যার তথ্য ফাঁস ও আসন্ন নির্বাচন ঘিরে সামরিক বাহিনীর শক্তি প্রদর্শন।
২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে যখন গণহত্যা শুরু হয়, তখনও সীমান্তে সেনা মোতায়েন বাড়িয়েছিল মিয়ানমার। এরপর থেকে প্রায় দশ লাখেরও বেশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যূত রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয় বাংলাদেশে।
-এটি