আওয়ার ইসলাম: ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গাদের চরম দুর্দশা এখনো অব্যাহত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের শক্তিশালী পদক্ষেপ রোহিঙ্গাদের মুক্তির পাশাপাশি তাদের নিজ বাড়িতে নিরাপদে ফেরার পথ উন্মুক্ত করতে পারে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক তারেক শামসুর রেহমান তুর্কি গণমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সিকে জানান, বাংলাদেশের কঠোর পদক্ষেপই পারে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান করতে।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংস গণহত্যা চালায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। যাকে পাঠ্যবইয়ে উল্লেখিত গণহত্যা আখ্যা দেয় জাতিসংঘ। এসময় জীবন বাঁচাতে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় ৮ লাখ ৬০ হাজার রোহিঙ্গা।
তারেক শামসুর রেহমান বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যখন বাংলাদেশের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়েছিল, বাংলাদেশ তখন রোহিঙ্গা সংকটকে আন্তর্জাতিক ইস্যু বানাতে ব্যর্থ হয়েছে।
যতক্ষণ পর্যন্ত বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলোকে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে রাজি করাতে না পারবো আমরা, ততোক্ষণ পর্যন্ত রোহিঙ্গা সংকট সমাধান হবে না। সংকট সমাধানে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষেত্রে চীন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতেরও সরাসরি সহযোগিতা আমাদের প্রয়োজন। ভারত এখন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য। বলেন, তারেক শামসুর রেহমান।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগ লাঘবে চীন বড় ধরনের ভূমিকা নিতে পারতো। কিন্তু দেশটি সে বিষয়ে আগ্রহী নয়। চীন বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্র। এদেশে তাদের বিশাল বিনিয়োগ রয়েছে। এখনো পর্যন্ত দেশটি রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে কোনো ভূমিকা পালন করেনি।
আঞ্চলিক আরেক শক্তি ভারত রোহিঙ্গা ইস্যুতে এবং তাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে বাংলাদেশে পক্ষে আছে বললেও, তাদের অধিকাংশ প্রতিশ্রুতি কাগজের পাতায় থেকে যায়। বলেন, অধ্যাপক তারেক শামসুর রেহমান।
বিশ্বনেতাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি জোরালোভাবে উত্থাপন করেন। সেখানে ভারত ও চীনও ছিল। প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের শান্তিপূর্ণ উপায়ে মিয়ানমারে ফেরানোর উপর গুরত্বারোপ করেন।
সম্প্রতি করোনা মহামারীর মধ্যে ঢাকা সফর করেছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা। সূত্র জানিয়েছে, তার সঙ্গে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকরা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা করেছেন।
নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য হওয়ার পর ভারতকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। আশা করা হয়েছিল, রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন এবং সংকটের স্থায়ী সমাধানে নয়াদিল্লি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
তারেক শামসুর রেহমান বলেন, বিশ্বশক্তিকে বুঝতে হবে সীমিত আকারে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাও মিয়ানমারকে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে উদ্যোগ নিতে বাধ্য করতে পারে। বলেন, রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে প্রতিদিন শত শত শিশুর জন্ম হচ্ছে। তারা এখন বাংলাদেশের নাগরিকত্ব এবং সারাজীবন এদেশে থেকে যাওয়ার দাবি তুলতে পারে।
মিয়ানমারে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। যতক্ষণ পর্যন্ত দেশটিতে সামরিক বাহিনী ক্ষমতায় থাকবে রোহিঙ্গা সংকট সমাধান হয়তো সম্ভব না। বলেন তারেক শামসুর রেহমান।
-এটি