মোস্তফা ওয়াদুদ: শয়তান মানুষের প্রকাশ্য দুশমন। মানুষকে সঠিক পথ থেকে সরিয়ে নিতে আল্লাহর কাছে ক্ষমতা চেয়ে নিয়েছে শয়তান। আল্লাহ তাআলা শয়তানের সে আবদার মঞ্জুর করেছেন। মানুষকে পথভ্রষ্ট করতে আল্লাহ তায়ালা শয়তানকে ক্ষমতা দিয়েছেন। আজ আমরা জানবো শয়তানের ক্ষমতা কত প্রকার ও কি কি?
মূলত শয়তানের ক্ষমতা লাভের পেছনে ছিলো তার অহংকার ও দাম্ভিকতা। সে তার জীবনের সব ইবাদাত বন্দেগীর বিনিময়ে ও অহংকারের প্রতিফল হিসেবে এ ক্ষমতা লাভ করেছে। যার বিস্তারিত ঘটনা কুরআনুল কারিমে বর্ণিত হয়েছে।
শয়তানকে ক্ষমতা প্রদানের আলোচনা কুরআনে এসেছে এভাবে। সুরা আরাফে আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘আর আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি, এরপর তোমাদের আকার-অবয়ব তৈরি করেছি। তারপর আমি ফেরেশতাদের বলছি, আদমকে সেজদা কর। তখন সবাই সেজদা করেছে, কিন্তু ইবলিস সে সেজদাকারীদের অন্তর্ভূক্ত ছিল না। আল্লাহ বললেন- ‘আমি যখন নির্দেশ দিয়েছি, তখন তোকে কিসে সেজদা করতে বারণ করল?’ সে বলল, আমি তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ। আপনি আমাকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটির দ্বারা। (আল্লাহ) বললেন তুই এখান থেকে নেমে যা। এখানে অহংকার করার কোনো অধিকার তোর নেই। অতএব তুই বের হয়ে যা। তুই হীনতমদের অন্তর্ভুক্ত।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ১১-১৩)।
শয়তানকে যখন আল্লাহ তায়ালা বেহেশত থেকে বের করে দিলেন, তখন শয়তান আল্লাহর কাছে মানুষের ক্ষতি করার জন্য কিছু ক্ষমতা চেয়ে নিয়েছেন। আর তাহলো-
১. কেয়ামত পর্যন্ত হায়াত লাভ।
২. মানুষকে ধোকা দেয়ার ক্ষমতা লাভ।
৩. সব দিক থেকে মানুষকে গোমরাহ করার ক্ষমতা লাভ।
শয়তানকে দেয়া ক্ষমতার বিবরণও আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে তুলে ধরেছেন। আল্লাহ তাআলা কুরআনে ইরশাদ করেন-
১. সে (শয়তান) বলল, ‘সেদিন পর্যন্ত আমাকে অবকাশ দিন, যেদিন তাদের (আদম সন্তানকে) পুনরুজ্জীবিত করা হবে।’ তিনি (আল্লাহ) বললেন, ‘নিশ্চয় তুমি অবকাশপ্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত।’
২. সে (শয়তান) বলল, ‘যেহেতু আপনি আমাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, সে কারণে অবশ্যই আমি তাদের জন্য আপনার সোজা পথে বসে থাকব।
৩. তারপর অবশ্যই আমি তাদের কাছে তাদের সামনে থেকে, তাদের পেছন থেকে, তাদের ডান দিক থেকে, তাদের বাম দিক থেকে উপস্থিত হব। আর আপনি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ পাবেন না।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ১৪-১৭)
আল্লাহ তাআলা শয়তানকে তার চাহিদা মোতাবেক কেয়ামত পর্যন্ত হায়াত দান করেছেন। শয়তান মানুষকে পথভ্রষ্ট করে থাকে। মানুষের শরীরের রগে রগে বিচরণ করতে পারে। মানুষকে সব দিক থেকে বিপদে ফেলার কুমন্ত্রণা দিয়ে থাকে। সে কারণেই মানুষ শয়তানে পাতা ফাঁদে পা দিয়ে গোনাহ করে থাকে। আর দয়াময় আল্লাহও বান্দাকে তাওবার মাধ্যমে ক্ষমা করার সহজ বিধান রেখেছেন। যখনই কোনো আদম সন্তান শয়তানের প্ররোচনায় গোনাহ করবে। আর পরক্ষণেই গোনাহ থেকে মুক্তি পেতে আল্লাহর কাছে তাওবা করবে আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দেবেন। হাদিসে এসেছে- হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘প্রত্যেক আদম সন্তান গোনাহগার। এদের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম হচ্ছে তাওবাকারীরা।’ (তিরমিজি, ইবজেন মাজাহ)
এমডব্লিউ/