মোস্তফা ওয়াদুদ: কওমি মাদরাসা খুলে দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে সরকার। আজ জাতীয় দীনি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের সহ-সভাপতি ড. মাওলানা মুশতাক আহমদ তার ফেসবুকে এ তথ্য জানান। এরপর মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ এক ভিডিও বার্তায় এ সংবাদ নিশ্চিত করেছেন। তবে এখনও এ ব্যাপারে কোনো প্রজ্ঞাপন জারী হয়নি বা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশনা আসেনি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের একটি ম্যাসেজকে কেন্দ্র করে তারা এ তথ্য প্রদান করেছেন। মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ এর সালামের জবাব দিয়ে ম্যাসেজে তিনি লিখেন, ‘ওয়ালাইকুম সালাম! মাই থ্যাংকস! টেক পিপারেশন ফর এর্যাঞ্জিং এক্সামেনেশন।’
এর আগে গতকাল (১৭ আগস্ট) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সাথে বৈঠক করেছিলেন তারা। সেখানে জাতীয় দ্বীনি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের মহাসচিব মুফতি মোহাম্মদ আলী এবং মাওলানা মুজিবুর রহমানও উপস্তিত ছিলেন। বৈঠকে তারা কওমি মাদরাসাগুলো খুলে দেওয়ার অনুরোধ করেন। সেসময় তিনি জানিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করবেন ও মাদরাসা খুলে দেওয়ার বিষয়ে অনুমতি চাইবেন তিনি। এরপরই আজ এ ঘোষণা এলো।
এদিকে সারাদেশে করোনার প্রকোপ কিছুটা কমেছে। তাছাড়া কিছুদিন আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এক বক্তব্যে বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে করোনা চলে যাবে এমনিতেই। আর করোনার কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কওমি মাদরাসা আজ খুলে দিলো সরকার। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও আগের সে চিত্র কওমি মাদরাসায় থাকবে না। শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
রাজধানীর একটি মাদরাসার মুহতামিম সূত্রে জানা গেছে, অনেক প্রতিষ্ঠানের একটি শ্রেণিতে ৬০ থেকে ৭০ জন বা কম-বেশি ছাত্র থাকে। আগে একটি বেঞ্চে আমরা ৫ জন বসাতাম। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির পর সেটা সম্ভব হবে না। করোনা না থাকলেও গাদাগাদি করে শিক্ষার্থী বসানো যাবে না। ক্লাসের এক তৃতীয়াংশ বা একটি ক্লাসের ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে বসানো যেতে পারে, এর বেশি সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে রোস্টার করে শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কার্যক্রমে পরিবর্তন আনা যেতে পারে। একটি বেঞ্চে দুজনের বেশি বসানো হবে না।
তিনি বলেন, শ্রেণিতে আগে যেমন একসঙ্গে পাশাপাশি অনেক শিক্ষার্থীর বসার ব্যবস্থা ছিল, তা আর থাকবে না। সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব মেনে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসা-যাওয়া করতে হবে। এসব বিষয় চিন্তা করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে কওমি মাদরাসাগুলো।
এ বিষয়ে রাজধানীর অন্য একটি মাদরাসার সিনিয়র শিক্ষকের সাথে কথা বললে তিনি জানালেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেওয়া নির্দেশনা থেকে আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীদের জন্য অনুসরণীয় নির্দেশনাগুলো চিহ্নিত করে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করবো। করোনা পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সর্বোচ্চ মনোযোগ দেওয়া হবে।’
নিচে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেওয়া নির্দেশনাগুলো চার্ট থেকে তুলে ধরা হলো:
১. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আগে মহামারি প্রতিরোধক মাস্ক, জীবাণুনাশক এবং নন-কন্টাক্ট থার্মোমিটার সংগ্রহ করে জরুরি কাজের পরিকল্পনা প্রণয়ন করুন। প্রতিটি ইউনিটের জবাবদিহিতা বাস্তবায়ন এবং শিক্ষক ও শিক্ষাদান কর্মীদের প্রশিক্ষণ জোরদার করুন।
২. শিক্ষক, শিক্ষাদান কর্মী ও শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যের অবস্থা পর্যবেক্ষণ জোরদার করুন।
৩. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রবেশ পথে শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, শিক্ষার্থী এবং বহিরাগত শিক্ষাদানকর্মীদের শরীরের তাপমাত্রা নিন।
৪. শ্রেণিকক্ষ, খেলার মাঠ এবং পাঠাগারের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে বায়ু চলাচল ব্যবস্থা শক্তিশালী করুন। দিনে ২-৩ বার প্রায় ২০-৩০ মিনিটের মতো উন্মুক্ত বায়ু চলাচল নিশ্চিত করুন। কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রক ব্যবহারের ক্ষেত্রে শীতাতপ নিয়ন্ত্রকের স্বাভাবিক মাত্রা নিশ্চিত করুন। বিশুদ্ধ বায়ু চলাচল বৃদ্ধি করুন এবং ফিরতি বায়ু চলাচল বন্ধ করুন।
৫. শ্রেণিকক্ষ, সর্বসাধারণ কর্তৃক ব্যবহৃত হয়, এমন জায়গাসহ অন্যান্য জায়গার মেঝে ও ঘরের দরজার হাতল, সিঁড়ির হাতল এবং যেসব বস্তু বারবার ব্যবহৃত হয়, সেসব বস্তুর তলপৃষ্ঠ ঘন ঘন পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করুন।
৬. খাবার থালাবাসন (পানির পাত্র) পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করুন এবং প্রতিবার পরিবেশনের পরে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য খাবার থালাবাসন (পানির পাত্র) জীবাণুমুক্ত করুন।
৭. দূরে দূরে বসে খাবার গ্রহণ করুন এবং সম্পূর্ণ নিজস্ব থালাবাসন ব্যবহার করুন।
৮. প্রতিদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চত্বরের আবর্জনা পরিষ্কার এবং আবর্জনা সংরক্ষণকারী পাত্র জীবাণুমুক্ত করুন।
৯. স্বাভাবিক অবস্থা না আসা পর্যন্ত কোনও প্রকার অভ্যন্তরীণ জমায়েত বা ক্রিয়াকলাপের আয়োজন করবেন না। যেকোনও বদ্ধ বা ঘন জনবহুল স্থান বা অন্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের ক্ষেত্রে এক মিটারের কম বা সমান দূরত্ব বজায় রাখুন।
১০. শিক্ষক, শিক্ষাদান কর্মী এবং শিক্ষার্থীদের বহির্গমন কমিয়ে দিন।
১১. শিক্ষাদান কর্মকর্তা এবং শিক্ষার্থীরা মাস্ক ব্যবহার করুন। হাত ধোয়াসহ অন্যসব স্বাস্থ্যবিধি শক্তিশালী করুন। দ্রুত হাত শুকানো জীবাণুনাশক বা জীবাণুনাশক টিস্যু ব্যবহার করুন। হাঁচি দেওয়ার সময় মুখ এবং নাক ঢাকতে টিস্যু বা কনুই ব্যবহার করুন।
১২. মহামারি প্রতিরোধকে জোরদার করুন। শিক্ষক, শিক্ষাদানকর্মী ও শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের সময় নিয়ন্ত্রণ করুন এবং মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা ও পরামর্শ প্রদান করুন।
১৩. শিক্ষক, শিক্ষাদানকর্মী বা শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোভিড-১৯ এর সন্দেহভাজন কোনও কেস থাকলে তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষকে জানান এবং যারা এই কেসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এসেছেন, তাদের দ্রুত শনাক্ত ও কোয়ারেন্টিন করুন।
১৪. কোয়ারেন্টিনে অবস্থানরত শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী বা শিক্ষার্থীদের পিতামাতার স্বাস্থ্যের অবস্থা জানা এবং তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করার জন্য একজন বিশেষ ব্যক্তিকে নিয়োগ করুন।
১৫. কোনও নিশ্চিত কোভিড-১৯ কেস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ এবং বায়ু চলাচল ব্যবস্থা পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করুন। মূল্যায়ন না হওয়া পর্যন্ত এটির পুনরায় ব্যবহার শুরু করা থেকে বিরত থাকুন।
এমডব্লিউ/