সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


কবে থেকে চলতে শুরু করবে তাবলিগ জামাত?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মোস্তফা ওয়াদুদ: মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকার মূল লক্ষ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠা হয়েছে তাবলিগ জামাত। বিশ্বজুড়ে আনুমানিক ১.২ কোটি থেকে ৮ কোটি অনুগামী রয়েছে এ জামাতের। প্রায় ১৮০ থেকে ২০০ টি দেশে এর কাজ রয়েছে। ১৯২৬ সালে মাওলানা মুহাম্মদ ইলিয়াস কান্ধলভি রহ. কর্তৃক ভারতের মেওয়াতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো এর। এটি দেওবন্দি আন্দোলনের একটি শাখা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিলো।

বর্তমানে পৃথিবীব্যাপী যে করোনাকাল চলছে। তাতে সবকিছুর সাথে বন্ধ আছে তাবলিগ জামাতের কার্যক্রমও। বিশ্বব্যাপী চলতে থাকা এ জামাতের কাজ আগের মতো নেই। স্থবির হয়ে পড়েছে সবকিছু। মসজিদে মসজিদে দীনি  দাওয়াত, গ্রামে-মহল্লায় বাদ আছর গাশত, চিল্লা শেষে নাম লেখানের তাশকিল, কেউ নাম লেখালেই তার নামে হাজার হাজার উচ্ছ্বাসী দোয়া এখন আর শুনা যায় না। গাট্টি কাঁধে নিয়ে এখন আর কোন জামাত চলতে দেখা যায় না প্রত্যন্ত অঞ্চলে। পাড়ায়-মহল্লায় এখন আর সেভাবে তাবলিগের কাজ হয়না।

সম্প্রতি করোনাকাল কাটিয়ে উঠে স্বাভাবিক গতি ফিরেছে অফিস-আদালতে। রাস্তায় চলছে যানবাহন। মানুষ ছুটছে তার প্রাত্যহিক কাজে। কিন্তু তাবলিগের মেহনত এখনো চোখে পড়ছে না সেভাবে। এতে দীন শিখা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কোটি কোটি মানুষ। তাই তাবলিগপ্রেমী কোটি মানুষের প্রশ্ন, আবার কবে চলতে শুরু করবে তাবলিগ জামাত? আবার কবে তারা দলবেঁধে একত্ত্ববাদের দাওয়াত নিয়ে ছুটে যাবেন পাড়ায় মহল্লায়? কবে আবার ঘুরে দাঁড়াবেন তারা। স্বমহিমায় ফিরবে তাবলিগ জামাত?

কিন্তু সাধারণ মানুষের এসব প্রশ্ন মানতে নারাজ তাবলিগের দেশীয় জিম্মাদারগণ। তারা মনে করেন, তাবলিগের কাজ কখনোই বন্ধ ছিলো না। এখন করোনার কারণে যেভাবে সবকিছুতে ভাটা এসেছে। সেভাবে তাবলিগেও হয়তো কিছুটা ভাটা এসেছে।

কাকরাইল মসজিদের নজমের মুকীম ও তাবলিগের ইজতেমা মাঠের জিম্মাদারের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ার ইসলামকে বলেন, তাবলিগের কাজগুলো আপাতত মসজিদভিত্তিক চলছে। মসজিদের বাইরেও তাবলিগের কাজ একবারে বন্ধ নেই। সীমিত পরিসরে চালু রয়েছে। তবে আগে তাবলিগের কাজ ব্যাপক ছিলো। পাড়ায়-পাড়ায়, মহল্লায়-মহল্লায়, দেশের আনাচে-কানাচে তাবলিগের জামাত ছিলো; এখন সেটা নেই।

তিনি মনে করেন, সবকিছু যখন আবার আপন অবস্থায় ফিরে আসবে, তখন তাবলিগও তার পুরনো আমেজ ফিরে পাবে। এখানে কাজ বন্ধ বা ‘কবে থেকে শুরু হবে তাবলিগের কাজ’-এমন কোন বিষয় নেই। সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে আগেও তাবলিগের কাজ ছিলো, বর্তমানেও তাবলিগের কাজ চলছে। যেমন সরকার যখন মসজিদে পাঁচজন মুসুল্লি নিয়ে নামাজের কথা বললেন, তখন পাঁচজন মিলেই তাবলিগের কাজ করেছেন। এখন বেশি লোক মসজিদে নামাজ পড়ে। তো বেশি লোক মিলেই মসজিদে তাবলিগের কাজ করেন। মোটকথা তাবলিগের কাজ কখনো বন্ধ নেই।

তিনি জানান, করোনা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত আমাদের অনেক জামাতই বের হয়েছে। তবে তাদের আনুমানিক কোন হিসেব করা হয়নি। আর বিদেশী অনেক জামাতই করোনা শুরুর সময় ছিলো। এরপর করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে ধাপে ধাপে তারা চলে যান। বর্তমানে মাত্র ৯জন বিদেশি লোক বাংলাদেশে আছেন। এছাড়া আর কোন বিদেশী জামাতের লোক নেই।

বাংলাদেশে তাবলিগ জামাত পরিচালিত হয় কাকরাইল মসজিদ থেকে। এটি বাংলাদেশে তাবলিগ জামাতের মারকাজ বা প্রধান কেন্দ্র। কাকরাইল মসজিদ বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার কাকরাইল এলাকায় রমনা পার্কের পাশে অবস্থিত। ১৯৫২ সালে এই মসজিদটি তাবলিগ জামাতের মারকাজ হিসেবে নির্ধারিত হয়। মসজিদটির আদি নাম ছিল ‘মালওয়ালি মসজিদ’। পরবর্তীতে ১৯৬০-এর দশকে তাবলিগ জামাতের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ইঞ্জিনিয়ার মরহুম হাজী আব্দুল মুকিতের তত্ত্বাবধানে তিন তলা মসজিদটি পুনঃনির্মাণ করা হয়।

টঙ্গিতে তাবলিগ জামাতের বাৎসরিক ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দ থেকে প্রতি বছর এই ইজতেমা নিয়মিত আয়োজিত হয়ে আসছে। প্রতিবছর বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রাম-শহর-বন্দর থেকে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান এতে অংশ নেয়। অংশ নেন বিশ্বের প্রায় ৫০ থেকে ৫৫টি দেশের তাবলিগী দীনদার মুসলমান। এটি বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম জমায়েত।

এমডব্লিউ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ