বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড (বেফাক)- এ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। হালে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেফাকের সমালোচনায় নেমেছেন কেউ কেউ। কিছু ফোনালাপকে কেন্দ্র করে এ সমালোচনার দানা বেঁধেছে। চলমান সংকট সমাধানে কাজ করছেন বেফাকের শীর্ষ মুরুব্বিরা। রাত-বিরাত সংকট সমাধানে বৈঠক করছেন তারা। সচল রয়েছে মুরুব্বিদের ফোন লাইনও। এ নিয়ে চিন্তিত বেফাক ছাড়া অন্য পাঁচবোর্ড নেতারাও। তাদের চিন্তার কথাই তুলে ধরেছেন আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম সাংবাদিক-মোস্তফা ওয়াদুদ।
তাদের ভাষ্য- বেফাকের সংকট সমাধানে বেফাকের মুরুব্বিরাই যথেষ্ট। এ নিয়ে মুরুব্বিদের কিছু বলার প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি না।
এনিয়ে কথা বলছিলাম বেফাকুল মাদারিসিল কওমিয়া গওহরডাঙ্গা, গোপালগঞ্জ এর চেয়ারম্যান মুফতি রুহুল আমীন এর সাথে। তিনি বলেন, বিষয়টি যেহেতু বেফাক সংশ্লিষ্ট। আর বেফাকেই আমাদের আকাবির মুরুব্বিগণ রয়েছেন। তারা নিজেরা বসে এ ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত নিবেন।
তবে নিরপেক্ষ তদন্তের কথা বললেন, ইত্তেহাদুল মাদারিসিল কওমিয়া, চট্টগ্রাম এর মহাসচিব মাওলানা শাহ আব্দুল হালিম বোখারী। তিনি বলেন, বেফাক আছে বিধায় আমরা আছি। বেফাকের সমস্যা মানে আমাদেরই সমস্যা। সুতরাং বেফাকের যেসব দায়িত্বশীল সম্পর্কে অভিযোগ আছে। তাদের ব্যাপারে তদন্ত করতে হবে। তদন্ত করার পর যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে নিরপেক্ষ কমিটি করে দায়িত্বশীল পরিবর্তন করতে হলে করবে! একটা নিরপেক্ষ উদ্যোগ নিয়ে বেফাকের শুরা কমিটি বসে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিবেন।
তানযীমুল মাদারিসিল কওমিয়া, উত্তরবঙ্গ এর চেয়ারম্যান মুফতি আরশাদ রাহমানীও জানালেন, মুরুব্বিরাই বসে বেফাকের চলমান সংকট সমাধান করলে ভালো হয়।
কথা বলছিলাম, আযাদ দ্বীনী এদারা বোর্ড, সিলেট এর মহাসচিব মাওলানা আব্দুল বছির এর সাথে। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি বেফাকের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলেছি। বেফাকের মুরুব্বিরা যদি বসে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে না পারেন, তাহলে বেফাক ছাড়া আরও যে পাঁচবোর্ড আছে, প্রয়োজনে তারা সে বোর্ডগুলোর সাথে বসুক। তাহলে হয়তো আলোচনার মাধ্যমে এ সংকট কেটে যাবে।
সবশেষ এনিয়ে কথা বলছিলাম জাতীয় দ্বীনি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বাংলাদেশ এর মহাসচিব মাওলানা মোহাম্মাদ আলীর সাথে । তিনিও মুরুব্বিরা বসে পরামর্শ করে সমাধান করার পক্ষে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বেফাকে যারা আছে সবাই মুরুব্বি। আমরা তাদের জুনিয়র। তাই তাদের পরামর্শ দেয়ার কিছু দেখছিনা।
সবশেষ এ নিয়ে কথা বলেছি, বেফাকের একজন দায়িত্বশীল এর সাথে । নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি আওয়ার ইসলামকে জানান, বেফাকের এ সংকট কাটিয়ে উঠা মুহূর্তের ব্যাপার। যার ব্যাপারে অভিযোগ উঠেছে, তিনি পদত্যাগ করুক। গঠনতন্ত্র মেনে আস্থাশীল ও যোগ্য ব্যক্তিরা দায়িত্বে আসুক। বেফাক তার আস্থার জায়গা ফিরে পাবে।
অনেকের জানা থাকা দরকার, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ। দেশের কওমি মাদরাসার জাতীয় শিক্ষাবোর্ড। এছাড়াও বাংলাদেশে আরও পাঁচবোর্ড রয়েছে। যেগুলো নিয়ে পরবর্তীতে ‘আল-হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’ নামে গঠিত হয়েছে কওমি মাদরাসা সর্বোচ্চ অথরিটি। যার অধীনে দাওরায়ে হাদিসকে দেয়া হয়েছে মাস্টার্সের মান। বেফাক ছাড়া হাইয়ায় থাকা বোর্ড পাঁচটি হলো, ১. বেফাকুল মাদারিসিল কওমিয়া গওহরডাঙ্গা, গোপালগঞ্জ। ২. ইত্তেহাদুল মাদারিসিল কওমিয়া, চট্টগ্রাম। ৩. আযাদ দ্বীনী এদারা বোর্ড, সিলেট। ৪. তানযীমুল মাদারিসিল কওমিয়া, উত্তরবঙ্গ। ৫. জাতীয় দ্বীনি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বাংলাদেশ।
উল্লেখ্য, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। বেফাক তাদের নিবন্ধিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠ্যসূচি প্রণয়ন, উন্নয়ন, বিভিন্ন স্তরভেদে পরীক্ষা গ্রহণ ও সনদ প্রদানের কাজ করে। বর্তমানে তাদের অধীনে বিশ হাজারেরও বেশি কওমি মাদরাসা রয়েছে।
এইচএ/