আওয়ার ইসলাম: আল্লাহ তাআলার নিকট মনোনীত একমাত্র ধর্ম ইসলাম। ইসলাম যে রুকন বা স্তম্ভের ওপর প্রতিষ্ঠিত সে সম্পর্কে মুসলিম উম্মাহর সুস্পষ্ট ও স্বচ্ছ ধারণা থাকা একান্ত আবশ্যক। ইসলামের রুকন বা স্তম্ভগুলোর সঠিক ও সুস্পষ্ট ধারণা না থাকলে সব মানুষই হবে ক্ষতিগ্রস্ত।
তাই ইসলামের রুকনগুলোর সঠিক ধারণা ও বুঝের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস ও তাঁর মর্মার্থ সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো-
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘ইসলামের রুকন বা ভিত্তি বা স্তম্ভ পাঁচটি। এ সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো মা’বুদ নেই এবং মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর রাসুল। নামাজ প্রতিষ্ঠা করা। জাকাত আদায় করা। হজ করা। রমজান মাসে রোজা পালন করা। (ছহিহ বুখারি শরিফ)
ঈমানই ইসলামের মূল ফাউন্ডেশন
আলোচ্য হাদিসের আলোকে বুঝা যায় যে, একজন মুসলমানের জন্য ইসলামের প্রথম রুকনটিই তাঁর মূল ফাউন্ডেশন। যে ব্যক্তি ঈমানের ফাউন্ডেশনের ওপর মনে প্রাণে বিশ্বাস স্থাপন করবে। ওই ব্যক্তির জন্যই পরবর্তীতে বাকী ৪টি কাজ ইসলামের রুকন হিসেবে পরিগণিত হবে।
যদি কোনো মানুষের মধ্যে ইসলামের প্রথম রুকন ঈমানের মধ্যে ভুল থাকে, আর ওই ব্যক্তি বাকি ৪টি রুকন সুন্দর ও উত্তম রূপে পালন করে; তাতে ওই ব্যক্তির কোনো লাভ হবে না। ইসলামের প্রথম রুকন বা স্তম্ভের মধ্যেই রয়েছে ইসলামের পরিচয়।
ইসলাম হলো-মনে প্রাণে আল্লাহর একত্ববাদের স্বীকৃতি দেয়া; মুখে মুখে নয় বরং ইবাদতের মাধ্যমে তাঁর আনুগত্য করা; আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা থেকে বিরত থাকা এবং মুশরিকদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা।
প্রথম রুকন : কালিমা শাহাদাতের মর্মার্থ
‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর অর্থ হলো : আল্লাহ ব্যতীত ইবাদতের উপযুক্ত সত্যিকারের আর কোনো মা’বুদ বা উপাস্য নেই।
‘মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’-এর অর্থ হলো : শুধুমাত্র রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকেই সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসুল ও একমাত্র অনুকরণীয় আদর্শ হিসেবে বিশ্বাস স্থাপন করা। তাছাড়া মুসলমানদের জন্য বিশ্বনবি মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাড়া অন্য কোনো নেতার এমন কোনো আদর্শ নেই যা অনুসরণ ও অনুকরণযোগ্য।
হাদিসের শিক্ষা-
১. ইসলামের রুকন বা স্তম্ভ পাঁচটি। যা ব্যতীত ইসলাম পরিপূর্ণ হয় না।
২. ইসলামে অন্তর্ভূক্ত হওয়ার মূল কালিমা হলো এ সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ব্যতীত সত্যিকারের কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই আল্লাহ তাআলার রাসুল।
৩. ঈমান গ্রহণের পর মুসলমানের প্রথম কাজই হলো নামাজ আদায় করা এবং নামাজের ব্যাপারে অলসতা না করা।
৪. মুসলমানদের মধ্যে যারা সম্পদের মালিক, তাদের জন্য জাকাত আদায় করা নামাজের মতোই ফরজ। তাদের জন্য জাকাত আদায় থেকে বিরত থাকার কোনো সুযোগ নেই।
৫. পবিত্র নগরী মক্কায় অবস্থিত বাইতুল্লাহ পর্যন্ত পৌছতে আর্থিক এবং শারীরিকভাবে সক্ষম প্রত্যেক মুসলমানের জন্য সামর্থ্য হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হজ আদায় করা। কেননা সামর্থবানদের জন্য জীবনে একবার হজ আদায় করা নামাজ ও জাকাতের মতোই ফরজ।
৬. আল্লাহ তাআলার হুকুম যে ব্যক্তি ঈমান গ্রহণের পর রমজান মাস পাবে, ওজর না থাকলে তাঁর জন্য রমজান মাসজুড়ে সিয়াম সাধনা পালন করা নামাজ, জাকাত ও রোজার মতোই ফরজ।
৭. ইসলামের প্রথম রুকন থেকেই বুঝা যায় যে, ইসলাম মুসলিম উম্মাহকে আল্লাহ তাআলার আনুগত্য ও স্বীকৃতি দেয়ার নির্দেশ দেয় এবং অবাধ্যতা ও শিরক থেকে নিষেধ করে।
এমডব্লিউ/